চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তার পরিবার এখন শোকে স্তব্ধ। তাদের বুকফাটা আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠছে চারপাশ। সাঈদের এমন মৃত্যুতে পরিবারসহ পুরো দেশজুড়েই চলছে শোকের মাতম।

জানা গেছে, গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিছিলে অংশ নেন আবু সাঈদ। মিছিলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি। পরে সেখানে সংঘর্ষে মিছিলের সামনে থেকে বুক পেতে দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়। আর সেই আবু সাঈদকে নিয়ে এবার নিজের অনুভূতি জানালেন ক্রিকেট বিশ্লেষক এবং দেশের প্রখ্যাত কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম।

আজ (বুধবার) নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করে ফাহিম লিখেছেন, 'আমি নিশ্চিত, আবু সাঈদের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের আগে হলে সেও স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করা একজন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধাই হতে চাইত। তাদের যে পরিবার, এমন পরিবারই তো সে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছিল, খাবার দিয়েছিল, বিপদ মাথায় নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছিল।'

পরে আরও যোগ করে ফাহিম বলেন, 'অথচ আজ আমরা আবু সাঈদের মত সূর্য সন্তানদের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখি করে দিলাম। বুঝতে চাইলাম না তাদের মনের কথা, তাদের অভিমানের কথা।'

পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ

উল্লেখ্য, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে আবু সাঈদ। তিনি ছিলেন দারিদ্র্য পরিবারের অসহায় মা-বাবার একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সন্তান। প্রবল ইচ্ছাশক্তিতে নয় ভাই-বোনের মধ্যে লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। অভাবের সংসারে অন্য সন্তানরা লেখাপড়া করতে না পারলেও সাঈদ খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। পরে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে একই ফলাফল নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, মঙ্গলবার দুপুরে বেরোবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিছিলে অংশ নেন আবু সাঈদ। এই আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। এ কারণে মিছিলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত বিক্ষোভ মিছিলটি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে।

ওই ত্রিমুখী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। এ সময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে শতাধিকের বেশি টিয়ার সেল, রাবার বুলেট ও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে পুলিশ। সংঘর্ষে মিছিলের সামনে থেকে বুক পেতে দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়।

এসএইচ/এফআই