পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে ছাত্রদের এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে সহিংসতা। দেশজুড়ে আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং রংপুরে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ জনে।

শিক্ষার্থীদের ওপর এমন হামলার ব্যাপারে শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাওহীদ হৃদয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মুশফিকুর রহিম আহ্বান জানিয়েছেন শান্তিপূর্ণ সমাধানের। সেই পথেই হেটেছেন ক্রিকেটারদের অনেকেই।জাতীয় দলের ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমও একাত্মতা জানিয়েছেন দেশের ছাত্রসমাজের সঙ্গে, ‘টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া কোন রাজপথ আর আমার ভাই-বোনের রক্তে রঞ্জিত না হোক। সঠিক পদক্ষেপ ও যৌক্তিকতা বজায়ে রেখে সবকিছুর সমাধান হোক।’

জাতীয় দলেরই আরেক ওপেনার নাঈম শেখ লিখেছেন, ‘ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের লাল সবুজের পতাকা আমার ভাই-বোনদের রক্তে আর রক্তিম না হোক। যৌক্তিক সমাধানের মাধ্যমে চলমান সংকট নিরসন হোক, তারুণ্য তার প্রাণ ও উদ্যম ফিরে পাক।’

আফিফ হোসেন লিখেছেন, ‘দেশটা আমাদের সবার। আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী, অশান্তিতে নয়। আমার কোনো ভাই-বোনের র*ক্ত আর না ঝরুক। যৌক্তিকভাবে চলমান সংকট নিরসন হোক। চলমান পরিস্থিতি দ্রুতই শান্তিতে রুপ নিবে। স্বাভাবিক হয়ে যাবে সবকিছু, এমনটাই আশা রাখি।’ 

সাবেক স্পিনার ইলিয়াস সানী লিখেছেন, ‘ও আল্লাহ তুমি গজব নাজিল করো আল্লাহ।’ অনুর্ধ্ব যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক আকবর আলি ইন্সটাগ্রামে লিখেছেন কিছু না, ঘৃণা। 

এছাড়া পদকজয়ী আর্চার রোমান সানা তার ফেসবুক ওয়ালে মোনাজাতের ইমোজি দিয়ে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। তাতে লেখা, 'শুধু কোটা নয়, গোটা দেশটাই সংস্কারের  প্রয়োজন।' 

উল্লেখ্য, রোববার চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’

প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে রোববার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো বাংলাদেশের সকল ক্যাম্পাসে। পরদিন সোমবার দুপুর থেকে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ। থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে রাজধানীর ১৫-২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধে গোটা রাজধানী অচল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সর্বত্র শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে আসেন। এসময় সাধারণ ছাত্র ও পুলিশ-ছাত্রলীগ সংঘর্ষে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছয়জন নিহত হয়েছেন। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকাসহ চার জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দেশের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 

এসএইচ/জেএ