আগামী কয়েক মাস অনেক ব্যস্ততায় কাটবে বাংলাদেশ নারী দলের। বিশেষত আইসিসির মেগা টুর্নামেন্ট টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বসবে বাংলাদেশের মাটিতে। আয়োজক দেশটির প্রতি তাই প্রত্যাশার পারদও বেশি। এর আগে অবশ্য প্রস্তুতির মঞ্চ হিসেবে নিগার সুলতানা জ্যোতিদের সামনে রয়েছে এশিয়া কাপ আসর। দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ভালো না হলেও, টুর্নামেন্টটির সেমিফাইনালের প্রতিই নজর টাইগ্রেস অধিনায়ক জ্যোতির।

বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপকে সামনে রেখে বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি, সাম্প্রতিক দুটি সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে ব্যর্থতা, টুর্নামেন্টের আগমুহূর্তে দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের দলে ফেরা এবং বাংলাদেশের সামগ্রিক লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেছেন জ্যোতি। টাইগ্রেস অধিনায়ক বিস্তারিত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ঢাকা পোস্টের স্পোর্টস প্রতিবেদক সাকিব শাওনের কাছে।

প্রশ্ন : এশিয়া কাপের আগে নিজেদের কীভাবে ফিট রাখছেন?

জ্যোতি : ঈদের আগেই আমরা একটা ঘরোয়া লিগ খেলেছিলাম। আর ঈদের পরে ফিটনেস ক্যাম্প থেকে শুরু করে ম্যাচ খেলা, সবমিলিয়ে এশিয়া কাপের আগে ভালোই প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের ব্যাকআপ মাইন্ডে আছে যেহেতু টি-টোয়েন্টি খেলা এবং শ্রীলঙ্কার উইকেট কেমন হতে পারে সেটি।

প্রশ্ন : সাম্প্রতিক সময়ে দুটো সিরিজ ভালো যায়নি বাংলাদেশের, এর উত্তর খুঁজেছেন কি না....

জ্যোতি : ব্যাটিংয়ে সমস্যা ছিল আসলে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সিরিজে ব্যাটাররা অনেক বেশি স্ট্রাগল করেছে। সঙ্গে ফিল্ডিংটাও এড করব, খুব একটা ভালো ছিল না। সুতরাং এই দুইটা জায়গায় ভালো করা নিয়ে চিন্তা করছি। দলীয়ভাবে খেললে কীভাবে ভালো করা যায়, ভাবছি সেটা নিয়েও। কিন্তু ব্যাটিংটা ইন্ডিভিজুয়ালি মেন্টাল স্ট্রং না হলে কঠিন। এখানে যারা খারাপ করেছে বিগত দিনে তারাই আবার ভাল করেছিল। এই মুহূর্তে আমাদের টার্গেট দলগতভাবে ভালো ক্রিকেট খেলা।

প্রশ্ন : অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় দলের বিপক্ষে খেলেছেন, কেমন অভিজ্ঞতা ছিল?

জ্যোতি : ভালো রেজাল্ট পেলে তো অবশ্যই আরও ভালো লাগতো। যখন আপনি একটা বড় দল পাবেন তখন টিমের দুর্বলতা এবং আরও কোথায় কোথায় উন্নতি করতে হবে সেটা ধরা পড়ে। যখন আপনি ভালো করবেন তখন কিন্তু দুর্বলতাগুলো ধরা পড়ে না। আমি বলব যে বিশ্বকাপের আগে এটা আমাদের জন্য ভালো দিক। আমাদের দুর্বলতা নিয়ে যদি কাজ করি তাহলে এশিয়া কাপ এবং সামনে বিশ্বকাপে আমরা ভালো করতে পারব।

জয়ের ধারায় ফেরার জন্য সবার আগে একটি ম্যাচেই জয়ের লক্ষ্য জ্যোতির, ‘শেষ এগারোটা ম্যাচে আমরা টানা হেরেছি। যে কারণে আমাদের লক্ষ্য থাকবে একটা ম্যাচ জিতে জয়ে ফেরা। একটা ম্যাচ জিতলেই দলের মনোভাব আসলে পরিবর্তন হয়ে যায়। আমার প্রথম টার্গেটই থাকবে একটা ম্যাচ জেতা।’

প্রশ্ন : গেল বছর অনায়াসে ভারতকে সিরিজ হারিয়েছিলেন, এবার হলো না। সমস্যা কোথায় ছিল?

জ্যোতি : ব্যাটিং তো অবশ্যই! সমস্যা হচ্ছে আমরা ব্যাটিংয়ে রান করতে পারিনি। এক-দুজন ব্যাটার দিয়ে আসলে ম্যাচে তো অনেক সময় জয় পাওয়া সম্ভব হয় না। ওই সিরিজ খেয়াল করলে দেখবেন যে পুরো টপ-অর্ডার রান পায় নাই। আরও একটা বিষয়– পাওয়ার প্লেতে রান তোলা গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটো জায়গাতেই আমরা অনেক বেশি উইক ছিলাম, যে কারণে আমরা রান চেজ করতে পারেনি এবং ঘুরে দাঁড়ানোও সম্ভব হয়নি। এই জিনিসগুলো উন্নতি করা খুব দরকার।

প্রশ্ন : সমস্যা কোথায়, মানসিকতা নাকি স্কিলে?

জ্যোতি : স্কিলের যদি ঘাটতি থাকতো তাহলে এই ক্রিকেটাররা কিন্তু এতদিন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট খেলতে পারত না। আমার কাছে মনে হয় না স্কিলের সমস্যা। আমার বিশ্বাস আছে তাদের ওপর, চাইলে এখান থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা আছে তাদের। ব্যক্তিগতভাবে ক্রিকেটারদের ভাবতে হবে এ বিষয়টা নিয়ে।

প্রশ্ন : এবার এশিয়া কাপ খেলতে যাচ্ছেন পরিকল্পনা কী?

জ্যোতি : অবশ্যই বেটার করা, শেষ এগারোটা ম্যাচে আমরা টানা হেরেছি। যে কারণে আমাদের লক্ষ্য থাকবে একটা ম্যাচ জিতে জয়ে ফেরা। একটা ম্যাচ জিতলেই দলের মনোভাব আসলে পরিবর্তন হয়ে যায়। আমার প্রথম টার্গেটই থাকবে একটা ম্যাচ জেতা।

অস্ট্রেলিয়া সিরিজ চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বাংলাদেশ দল

প্রশ্ন : সেমিফাইনালে খেলা সম্ভব?

জ্যোতি : গ্রুপ স্টেজে দেখেন তিনটা ম্যাচ রয়েছে, প্রথম খেলা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তারপর থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে শুরুর পর আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ প্ল্যান করব। প্রথমটাতে যদি জিততে পারি, তাহলে মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের সহজ হয়ে যাবে। গত এশিয়া কাপে আমরা সেমিফাইনালে যেতে পারিনি, বৃষ্টির জন্য হোক বা বাজে খেলেছি দুইটাই। ওদিক থেকে বলতে পারি যে সেমিফাইনালের দিকে নজর সবচেয়ে বেশি।

প্রশ্ন : জাহানারা আলম-রুমানা আহমেদ দলে ফিরেছেন, এটি কেমন স্বস্তি জোগায়?

জ্যোতি : তাদের দলে ফেরা আমাদের জন্য একটি বড় দিক। তারা অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ক্রিকেটার, এটা সবাই জানে। তারা অনেকদিন পর দলে ইনক্লুড হয়েছে, যে কারণে আমি অনেক বেশি খুশি। ঘরোয়া লিগেও দারুণ পারফর্ম করেছে। যখন একটা ক্রিকেটার দারুণ ফর্মে থাকে, তখন যদি তাকে দলে নেওয়া হয় এটা দলের জন্য অনেক বড় দিক, পজিটিভ সাইন। সর্বশেষ ঘরোয়া টুর্নামেন্টে জাহানারা আপু দেখিয়েছেন নিজের অভিজ্ঞতা, দারুণ বল করেছেন। এছাড়া রোমানা আপু দারুণ করেছেন, আমাদের মিডল অর্ডারের ব্যাটিংয়ে কিছু দুর্বলতা ছিল। যারা এতদিন খেলছিলেন তারা আপ টু দ্য মার্ক ছিলেন না। আপুর দলে ফেরা দলের জন্য ভালো।

প্রশ্ন : এশিয়া কাপের পরই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেখানে কেমন করবে বাংলাদেশ?

জ্যোতি : প্রথমত সামনে যেহেতু এশিয়া কাপ, এটা আমাদের অনেকটা ধারণা দেবে আমরা আসলে কেমন করব ওয়ার্ল্ডকাপে। যে কারণে আমার কাছে প্রথম টার্গেট এখন এশিয়া কাপ, এখানে যদি আমরা ভালো করতে পারি তাহলে বিশ্বকাপে ভালো করার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে। প্রস্তুতিটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়া কাপ আসলে বিশ্বকাপের জন্য বড় একটা প্রস্তুতির জায়গা। এশিয়া কাপের প্রতি নারী দলের আলাদা একটা ইমোশন কাজ করে, তাই এটাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য।

প্রসঙ্গত, শ্রীলঙ্কার মাটিতে আগামী ১৯ জুলাই পর্দা উঠছে নারী এশিয়া কাপের এবারের আসরের। নারী ক্রিকেটে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই লড়াই শেষ হবে ২৮ জুলাই। এশিয়া কাপের ‘এ’ গ্রুপে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। আসরের দ্বিতীয় দিনেই (২০ জুলাই) জ্যোতির দল নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক লঙ্কানদের মুখোমুখি হবে।

এসএইচ/এএইচএস