একেই বুঝি বলে নিয়তি! দুই মাস আগে জীবনের বিভীষিকাময় সময় পার করেছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। একে তো রোহিত শর্মাকে সরিয়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়কত্ব, তার ওপর দলের বাজে ফর্মের দায়। দুটো মিলিয়ে অবর্ণনীয় গালি আর ট্রলবন্যায় হার্দিককে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দুই মাস পর তিনি এখন ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক। ফলে সেই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামেই এবার হার্দিকের নামে স্লোগান শোনা গেল।

কয়েক মাসের ব্যবধানে মুদ্রার দুই পিঠই দেখলেন হার্দিক পান্ডিয়া। চলতি বছরের শুরু থেকে আইপিএলের তিক্ত স্মৃতি ও দাম্পত্য বিচ্ছেদের জলঘোলা পরিবেশের মাঝেই তিনি বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলেন। এবার বোধহয় সেসব তিক্ততা পুরো মুছে ফেলার সময় এসেছে হার্দিকের সামনে। বিশ্বকাপ জয়ে অবদান রাখার মধ্য দিয়েই দিয়েছেন সব জবাব। ফলে মাত্র দু’মাসের ব্যবধানেই বদলে গেছে হার্দিকের প্রতি ওয়াংখেড়ের তীব্র ঘৃণা, যা রূপ নিয়েছে ভালোবাসায়। 

আজ (শুক্রবার) ভোরে বার্বাডোজ থেকে দিল্লিতে ফেরার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে, মুম্মাইয়ে পৌঁছান রোহিত শর্মারা। মুম্বাইয়ের নরিম্যান পয়েন্ট থেকে হুডখোলা বাস করে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে যাওয়ার পর সেখানে সংবর্ধনা দেওয়া হয় রোহিতদের। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতীয় দলের এই বিজয়যাত্রার সাক্ষী হতে মুম্বাই বিমানবন্দর থেকেই পুরো রাস্তা জুড়ে সমর্থকরা ভিড় জমিয়েছিলেন। আরব সাগরের পাড় ভরে উঠেছিল লোকে লোকারণ্যে। কোথাও যেন তিল ধারণের জায়গা নেই।

সেখানে হাজির হয়েছিলেন আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি মুম্বাইয়ের ক্রিকেট ভক্তরাও। ২০২৪ আইপিএল চলাকালে হার্দিককে গালি এবং খারাপ ব্যবহারে জর্জরিত করার জন্য তারা এখন আবেগতাড়িত। ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ভারতীয় এই তারকার কাছে। ইন্ডিয়া টুডে’র সঙ্গে কথা বলার সময়ে এক ভক্ত হার্দিক পান্ডিয়াকে ‘সরি’ বলেছেন। এক নারী ভক্ত বলেছেন, ‘প্রথম এবং সর্বাগ্রে, আমি হার্দিক পান্ডিয়াকে সরি বলতে চাই। কেন আমি তাকে ট্রল করেছিলাম, জানি না। আমি খুব দুঃখিত। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। শেষ ওভারটি দুর্দান্ত ছিল এবং আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে চাই।’

পাশাপাশি গোটা ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম জুড়ে হার্দিকের নামে স্লোগান চলছিল। যেন যেকোনো মূল্যে দু’মাস আগে পাওয়া তার যন্ত্রণায় বড় প্রলেপ দিতে চাইছে পুরো জনতা। এসব দর্শক হার্দিক-বন্দনায় মেতে উঠেছেন সেই সময় থেকে, যখন মাঠের ভেতরে কেউ নেই। পান্ডিয়া বা তার দলও তখনও মাঠে এসে পৌঁছায়নি। পরবর্তীতে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে দেখা যায়, গ্যালারিতে থাকা বেশ কিছু দর্শক ‘হার্দিক, হার্দিক’ বলে চিৎকার করছেন।

বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে ২৯ জুন ছিল হার্দিকের সমস্ত জবাবের বড় মঞ্চ। আগেই ফিরিয়েছিলেন বিধ্বংসী হয়ে ওঠা দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার হেনরিখ ক্লাসেনকে। এরপর শেষ ওভারে এসেই প্রথম বলে ডেভিড মিলারকে ফেরান। শেষ ডেলিভারিতে এনরিখ নরকিয়ার মারা বলটা মিড উইকেট পেরিয়ে যেতেই পিচের ওপর বসে পড়লেন হার্দিক পান্ডিয়া। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার উদযাপনটাও যেন করতে পারলেন না ভালো করে। বিশ্বকাপটা জিতিয়েছেন শেষ ওভারের দুর্দান্ত বোলিং দিয়ে। সতীর্থরা যখন উদ্দাম দৌড়ে উল্লাসে ব্যস্ত, তখন হার্দিক নিরবে চোখের জল ফেলছেন।

এরপর হার্দিকের কণ্ঠে শোনা গেল বিগত ৬ মাসের করুণ অভিজ্ঞতার কথা, ‘খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি। অনেক পরিশ্রম করেছি। কিন্তু সাফল্য আসছিল না। আমার কাছে এটা আরও বিশেষ মুহূর্ত। কারণ গত ৬ মাসে আমার সঙ্গে অনেক কিছু হয়েছে। চুপ করে ছিলাম। একটাও কথা বলিনি। জানতাম, যদি পরিশ্রম করে যাই তা হলে একদিন জবাব দেওয়ার সুযোগ পাব। জানতাম, একদিন এই দিনটা আসবে।’ 

এএইচএস