টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষ হয়েছে দুই দিন হতে চললো। এখনো ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সেই জমজমাট শিরোপার লড়াই নিয়ে আলোচনা থেমে নেই। প্রায় ছুঁয়ে ফেলার দূরত্বে থেকে হৃদয় ভেঙেছে প্রোটিয়াদের। ভারতের দেওয়া ১৭৭ রানের লক্ষ্য তারা প্রায় পেরিয়েই গিয়েছিল। কিন্তু শেষের সমীকরণ মেলাতে না পারায় প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে মার্করামদের। 

জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১৬ রান দরকার ছিল তাদের। হার্দিক পান্ডিয়ার করা ২০তম ওভারের প্রথম বলেই লং অফে উড়িয়ে মারেন ডেভিড মিলার। সীমানা দড়ির কাছে প্রায় ছোঁ মেরে সূর্যকুমার যাদব সেটিকে তালুবন্দী করেন। বাউন্ডারি লাইনের ধারে ধরা সেই ক্যাচ ম্যাচের রং বদলে দিয়েছিল। বলা যায় ভারতের বিশ্বকাপ জয় প্রায় নিশ্চিত করে দিয়েছিল।

ক্যাচটি নিয়েই মূলত আলোচনা এখনো তুঙ্গে। ওই ক্যাচ নেওয়ার সময় সূর্যকুমার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সীমানার বাইরে চলে যান, তবে তার আগেই বল শূন্যে তুলে দিয়ে মাঠে ঢুকে ফের লুফে নেন ক্যাচটি। পরে রিপ্লে পরীক্ষা করে সেটিকে আউট বলে সিদ্ধান্ত দেন টিভি আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবরো। কিন্তু সেই আউট দেওয়ার সময় সীমানা দড়ির দিক থেকে ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল দেখানো হয়নি। সেটি দেখানো হলে আর কোনো সংশয় থাকত না বলে মনে করছেন ক্রিকেটভক্তদের অনেকেই। 

সূর্যকুমারের সেই ক্যাচটি নিয়ে মন্তব্য করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি শন পোলক। ফাইনালে ধারাভাষ্যে থাকা পোলক এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘না, ক্যাচটা একদম ঠিক ছিল। বাউন্ডারি কুশনটা সরে গিয়েছিল। তবে সেটা ম্যাচের মধ্যেই হয়েছে। সেটার সঙ্গে সূর্যের কোনো সম্পর্ক নেই। ওর কিছু করার ছিল না। ও কুশনের ওপর দাঁড়ায়নি। অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।’

ক্যাচটি নিয়ে নিজের ব্যাখ্যা দিয়েছেন সূর্যকুমারও। তিনি বলছিলেন, ‘এখন বলাটা সহজ। কিন্তু ম্যাচের ওই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল, ট্রফিটাই বাউন্ডারি পার হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের সময়ে যেটা হয় যে বল যাতে ছয় না হয়, সেই চেষ্টা করা। আমার যতটুকু সাধ্যে ছিল, আমি চেষ্টা করেছি।’ ‘বাতাস আমার কাজ কিছুটা সহজ করে দিয়েছে। আর অনুশীলনে এ ধরনের ক্যাচ নিয়ে ফিল্ডিং কোচের সঙ্গে আমরা প্রচুর কাজও করেছি। ম্যাচের দরকারি সময়টায় মাথা ঠিক রাখাটাই গুরুত্বপূর্ণ।’-যোগ করেন সূর্যকুমার।

আইন কী বলে, আউট নাকি ছয়?

ক্রিকেটীয় আইনে সীমানাদড়ি সরে যাওয়া নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেই আইন তুলে ধরেছে ক্রিকেটের অ্যালমানাকখ্যাত উইজডেন। তারা বলছে, আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী ১৯.৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সীমানা চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত কোনো কঠিন বস্তু যদি কোনো কারণে বিঘ্নিত (সরে যায়) হয়, তাহলে সীমানাটি তার আসল অবস্থানে আছে বলে বিবেচিত হবে।’

এ ছাড়া ১৯.৩.২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সীমানা চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত কোনো কঠিন বস্তু যদি কোনো কারণে বিঘ্নিত (সরে যায়) হয়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তা ঠিক করতে হবে। খেলা চলতে থাকলে বল ডেড হওয়ামাত্রই এ কাজ করতে হবে।’ এমন নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন ঘটেছে ম্যাচটিতে। কারণ সাদা দাগ থেকে সীমানা দড়ি সরে যাওয়ার পরও তা ঠিক করা হয়নি। সুতরাং মিলারের আউট এবং সূর্যের ক্যাচটি নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তাকে অমূলক–ও বলা যাচ্ছে না।

এফআই