শেষ ওভারের এক ক্যাচেই ম্যাচের ফল বদলে গেছে সেটি বলা হয়তো বাড়াবাড়ি, তবে তার অবদান যে আছে অস্বীকার করার উপায় নেই। কারণ ক্রিজে ছিলেন ‘কিলার মিলার’খ্যাত প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান। যেটি ক্যাচ না হয়ে ছয় হলে, সমীকরণটা থাকত দক্ষিণ আফ্রিকার নাগালে। সূর্যকুমার যাদব অসাধারণ দক্ষতায় ক্যাচটি লুফে নিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতের অন্যতম নায়ক বনে গেছেন। যদিও তা নিয়ে চলছে জোর বিতর্ক, ম্যাচ শেষে ক্যাচটি নিয়ে কথা বলেছেন আফ্রিকান অধিনায়ক এইডেন মার্করামও।

জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১৬ রান দরকার ছিল তাদের। হার্দিক পান্ডিয়ার করা ২০তম ওভারের প্রথম বলেই লং অফে উড়িয়ে মারেন ডেভিড মিলার। সীমানা দড়ির কাছে দারুণ দক্ষতায় সূর্যকুমার সেটিকে তালুবন্দী করেন। ওই ক্যাচ নেওয়ার সময় তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সীমানার বাইরে চলে যান, তবে তার আগেই বল শূন্যে তুলে দিয়ে মাঠে ঢুকে ফের লুফে নেন ক্যাচটি। পরে রিপ্লে পরীক্ষা করে সেটিকে আউট বলে সিদ্ধান্ত দেন টিভি আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবরো। কিন্তু সেই আউট দেওয়ার সময় সীমানা দড়ির দিক থেকে ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল দেখানো হয়নি। সেটি দেখানো হলে আর কোনো সংশয় থাকত না বলে মনে করছেন ক্রিকেটভক্তদের অনেকেই।

ওই সময় মিলার আউট না হলে, সেটি ছয় বলে গণ্য হতো। ফলে ম্যাচের ফল ভিন্ন হলেও হতে পারত। তখন সমীকরণ দাঁড়াতো ৫ বলে ১০ রানের। শেষ পর্যন্ত প্রোটিয়ারা ৭ রানে হেরেছে। তবে ম্যাচের ফল নির্ধারণকারী আউটটির সিদ্ধান্ত নিতে কেন আম্পায়ার বাড়তি সময় নিলেন না, তা নিয়েই অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। এ ছাড়া রিপ্লেতে সীমানা দড়িটিও কিছুটা সরে গেছে বলে দেখা যায়, কারণ ঘাসের ওপর বাউন্ডারি লাইনে সাদা দাগ স্পষ্ট। সেই দাগের ওপরই পা ছিল সূর্যকুমারের, যা ক্যাচ ঘিরে ওঠা বিতর্ককে আরও উসকে দিচ্ছে।

এ নিয়ে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয় দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক মার্করামের কাছে। তৃতীয় আম্পায়ার আরেকটু সময় নিয়ে রিপ্লে দেখতে পারতেন কি না এমন প্রশ্নে তার জবাব, ‘সত্যি বলতে, আমি এটা এখনও দেখিনি। দেখতে পারিনি। হ্যাঁ, রিপ্লে একটু দ্রুতই হয়েছে।’ দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আম্পায়ার হয়তো নিশ্চিত ছিলেন বলেই মত মার্করামের, ‘অবশ্যই তারা বেশ নিশ্চিতই ছিল যে এটা আউট এবং এই কারণেই রিপ্লে দ্রুত দেখেছে।’

মার্করাম বিনয়ী মনোভাবে উত্তর দিলেও যে প্রশ্ন উঠেছে তার জবাব এখনই মিলছে না। বিষয়টা আরও সংশয় বাড়ায় যখন ক্রিকেটীয় আইনে সীমানাদড়ি সরে যাওয়া ব্যাখ্যা দেখা হবে। সেই আইন তুলে ধরেছে ক্রিকেটের অ্যালমানাকখ্যাত উইজডেন। তারা বলছে, আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী ১৯.৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সীমানা চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত কোনো কঠিন বস্তু যদি কোনো কারণে বিঘ্নিত (সরে যায়) হয়, তাহলে সীমানাটি তার আসল অবস্থানে আছে বলে বিবেচিত হবে।’

এ ছাড়া ১৯.৩.২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সীমানা চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত কোনো কঠিন বস্তু যদি কোনো কারণে বিঘ্নিত (সরে যায়) হয়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তা ঠিক করতে হবে। খেলা চলতে থাকলে বল ডেড হওয়ামাত্রই এ কাজ করতে হবে।’ এমন নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন ঘটেছে ম্যাচটিতে। কারণ সাদা দাগ থেকে সীমানা দড়ি সরে যাওয়ার পরও তা ঠিক করা হয়নি। সুতরাং মিলারের আউট এবং সূর্যের ক্যাচটি নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তাকে অমূলক–ও বলা যাচ্ছে না।

ফাইনাল হারলেও দলের জন্য ঠিকই গর্বিত প্রোটিয়া অধিনায়ক, ‘দক্ষিণ আফ্রিকানরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, শ্রদ্ধাশীল এবং হারার আগে হার মানে না। এটা এখনও আমাদের জন্য গর্বের মুহূর্ত। আপাতত হতাশ। ভালোভাবে কাটানো আসরটির দিকে ফিরে তাকাতে কিছুটা সময় লাগবে। খুব কষ্ট লাগছে। তবে একইসঙ্গে অবিশ্বাস্যরকমের গর্বিত। আমরা ভালো বোলিং করেছি, খুব বেশি কিছু করার কিছু ছিল না, এটা তাড়া করার মতো লক্ষ্য ছিল। ভালো ব্যাটিং করেছি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম, জিততে না পেরে হতাশ লাগছে।’ 

এএইচএস