ভারতের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ও কিংবদন্তি কপিল দেব দু'দিন আগেও বলেছিলেন, ‘জাসপ্রিত বুমরাহ আমার চেয়ে এক হাজার গুণ ভালো বোলার।’ সেই আলোচনা সময়সাপেক্ষ। বুমরাহ যে ইতোমধ্যে ভারতের ইতিহাসের সেরা বোলার বনে গেছেন সেটি কারও অজানা নয়। আরও একবার নিজের তেজ দেখালেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে। যা তাকে এবারের টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার এনে দিয়েছে।

১৩ বছর পর কোন আইসিসি ইভেন্ট কিংবা ১৭ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, বহুদিনের আক্ষেপ ঘুচিয়ে আজ শিরোপা জিতল ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে রোমাঞ্চকর এক ম্যাচে রোহিত শর্মার দল জিতেছে ৭ রানে। এমন জয়ের দিনে ম্যাচসেরাও হতে পারতেন বুমরাহ। তবে দলের কঠিন মুহূর্তে হাল ধরে টুর্নামেন্টের প্রথম ফিফটি (৫৯ বলে ৭৬ রান) হাঁকানো বিরাট কোহলিলেই এজন্য বেছে নিলো আইসিসি।

তাহলে ফাইনালে বুমরাহর আবদান কী? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রানে ২ উইকেট শিকার। তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের ১৭তম ওভারে করা বুমরাহর স্পেলটি। প্রোটিয়াদের জয়ের জন্য ১৮ বলে তখন মাত্র ২২ রান দরকার, আক্রমণে এসে মাত্র ২ রান দিয়েই মার্কো জানসেনের উইকেট তুলে নেন সময়ের অন্যতম সেরা এই পেসার। এ তো গেল কেবল ফাইনালের কথা, পুরো টুর্নামেন্টেই বুমরাহ সবচেয়ে মিতব্যয়ী (ন্যূনতম সুপার এইটে ওঠা দলগুলোর মধ্যে) বোলিং করেছেন।

এবারের বিশ্বকাপে ৮ ইনিংসে বল করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ উইকেট শিকার করেছেন বুমরাহ। তার সামনে আছেন কেবল দুজন, ফজলহক ফারুকি ও আর্শদীপ দুজনেই সমান ১৭টিবকরে উইকেট নিয়েছেন। তবে বুমরাহ অন্য জায়গায় এগিয়ে, ম্যাচের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তে তিনি আক্রমণে আসেন। আর প্রয়োজনীয় ব্রেকথ্রু আর ইকোনমিকাল বোলিং তার প্রধান অস্ত্র। মাত্র ৪.১৭ ইকোনমি এবং ম্যাচপ্রতি ৮.২৬ গড়ে রান দিয়েছেন তিনি।

তার চেয়ে কম ইকোনমি ও গড়ে বল করা টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্ট বিদায় নিয়েছেন গ্রুপপর্বেই। ফলে বিশ্বকাপজয়ী বুমরাহ কতটা এগিয়ে এবং দলের জয়ে প্রভাব রেখেছেন, এজন্য তার হাতেই তো টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার মানায়!

ফাইনাল শেষে রোমাঞ্চকর জয় নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে পেসার মোহাম্মদ সিরাজও কৃতিত্ব দিয়েছেন বুমরাহকে। কিভাবে এমন সাফল্যে মাখা পারফর্ম করে গেলেন, সেটিও জানা গেল টুর্নামেন্টসেরা ক্রিকেটারের মুখে। বুমরাহ বলেছেন, 'আমি শান্ত থাকার চেষ্টা করেছি। এজন্যই আজ আমরা এখানে, (চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর) সত্যিই আমি এখন আর এখানে নেই, এমন উল্লাসের সময়ে আমার সন্তান ও পরিবারকেও কাছে পেয়েছি। এমন অর্জনের জন্য আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি, এমন বড় মঞ্চে জেতার মতো আর আনন্দের কিছু হতে পারে না।'

বিশ্বকাপ জেতার পর সাফল্যের পেছনের গল্পটাও ছোট করে বললেন বুমরাহ, 'পুরো টুর্নামেন্টে বল বাই বল চিন্তা করে এগিয়েছি। মাঝেমধ্যে আবেগও এসে দাঁড়িয়েছে, তবে সবকিছুর পর আমরা কাজটা সম্পন্ন করেছি৷ সঠিক লেংথে বল ফেলা এবং তার সঙ্গে রিভার্স সুইং, যার বাস্তবায়ন করতে পেরে আমি খুশি।'

এএইচএস/জেএ