আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে আগেও বাজে সময় কাটিয়েছেন বিরাট কোহলি, কিন্তু বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে হয়তো এবারের মতো পারফর্ম করেননি তিনি। চলতি বিশ্বকাপে রানখরার বৃত্ত থেকেই বের হতে পারছেন না কোহলি। গতকালও সেমিফাইনালে আউট হয়েছেন এক অঙ্কের ঘরে। তার আউটের ধরন দেখে সমালোচনা করেছেন সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমান ধারাভাষ্যকার রবি শাস্ত্রী। তবে কঠিন সময়েও অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও কোচ রাহুল দ্রাবিড়কে পাশে পাচ্ছেন কোহলি।

সর্বশেষ আইপিএলেও সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের পুরস্কার জিতেছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর এই তারকা। তবে বিশ্বকাপে মুদ্রার সম্পূর্ন বিপরীত পিঠ দেখছেন কোহলি। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি এখন পর্যন্ত সাত ইনিংসে ১০.৭১ গড়ে মাত্র ৭৫ রান করেছেন। যা কোহলির মতো তারকা ক্রিকেটারের নামের সঙ্গে যায় না। তবে এমন খারাপ ফর্ম কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার, সেটি করতে গিয়েই গতকাল তাড়াহুড়োয় উইকেট দিয়ে ফিরেছেন।

ইংল্যান্ড পেসার রিচ টপলির ডেলিভারিতে মিড উইকেটে দারুণ এক ছয় হাঁকিয়ে গতকাল ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দুই বল পরই সামনে এগিয়ে খেলতে গিয়ে কিছুটা সুইং হওয়া বল কোহলির স্টাম্প ভেঙে দেয়। ফলে ৯ বলে ৯ রানেই থামে তার ইনিংস। যা দেখে স্টার স্পোর্টসের টকশোতে থাকা রবি শাস্ত্রী মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘এটা বিরাট কোহলির খেলার স্টাইলই নয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী ওর স্বাভাবিক খেলাটা খেলা উচিৎ ছিল। কোহলির শেষ ওভারে সহজে বড় শট মারার ক্ষমতা থাকলেও, বাজে শট খেলে আউট হয়ে যায় সে। সে শট তৈরি করছে। যখন খারাপ ফর্মের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে, তখন এরকমভাবে আউট হতে হয়। বিরাট কোহলির অপেক্ষা করা উচিৎ ছিল, কিন্তু খুব বাজে শট খেলে প্যাভিলিয়নে ফিরেছে।’

তবে কোহলির সামর্থ্য নিয়ে কারও প্রশ্ন থাকার কথা নয়। সে কথাই ম্যাচশেষে স্মরণ করিয়ে দিলেন রোহিত। ফাইনালে তার স্বাভাবিক ছন্দ দেখার ইঙ্গিত দিয়ে ভারতীয় অধিনায়ক বলেন, ‘দেখুন, সে একজন উঁচু মানের ক্রিকেটার। যেকোনো সময় এই অবস্থার (ছন্দহীনতা) মধ্যে যেতে পারে যে কেউ। আমরা তার জাতটা জানি এবং বড় ম্যাচে তার গুরুত্বটাও বুঝি। ১৫ বছর ক্রিকেট খেলার পর ফর্ম কখনও ক্রিকেটারের পরিচায়ক নয়। তাকে দেখে ভালো মনে হচ্ছে। (তার ব্যাটিংয়ে) তাড়নাটা আছে। সম্ভবত ফাইনালের জন্য নিজেকে জমিয়ে রেখেছে।’

চলমান আসরের আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কোহলির পরিসংখ্যান ছিল অবিশ্বাস্য। ২৫ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১৪টিতেই পঞ্চাশ স্পর্শ করেন তিনি। সব মিলিয়ে ৮১.৫০ গড়ে তিনি করেন ১ হাজার ১৪১ রান। আর এবার সাত ইনিংসে তার সর্বোচ্চ রান উঠেছে ৩৭ (বাংলাদেশ) এবং ২৪ (আফগানিস্তান)। এর বাইরে বাকি পাঁচ ইনিংসে এক অঙ্কের ঘরে আটকে ছিলেন কোহলি। স্বভাবতই নিজের এই অফফর্ম নিয়ে চিন্তিত বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার।

সর্বশেষ ম্যাচে কাল ইংলিশদের বিপক্ষে আউট হয়ে ফেরার পর কোহলি ড্রেসিংরুমে মনমরা হয়ে বসেছিলেন। তার পাশে বসা জাসপ্রিত বুমরাহ এবং রবীন্দ্র জাদেজাও উপলব্ধি করছিলেন কোহলির মনের অবস্থা। সেই সময়ে রাহুল দ্রাবিড় এগিয়ে আসেন বিরাটের কাছে। তিনি কোহলিকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এমন কঠিন মুহূর্ত বদলে যেতে পারে ফাইনালের এক জলমলে ইনিংসে। আগামীকাল (শনিবার) দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে নামবে ভারত।

এএইচএস