আফগানিস্তান ক্রিকেটের ইতিহাস গড়ার দিন আজ (মঙ্গলবার)। আইসিসির কোনো বৈশ্বিক আসরে তারা প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠেছে। আফগানরা বাংলাদেশকে হারিয়ে কেবল তাদের বিদায়ই নিশ্চিত করেনি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দিয়েছে অন্যতম ফেবারিট অস্ট্রেলিয়াকেও। যখন রশিদ খানদের বীরত্বগাথা নিয়ে প্রশংসার বন্যা বইছে, তখনই আবার চোটের কারণে গুলবাদিন নাইবের মাঠ ছাড়ার ধরন নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে!

সেন্ট ভিনসেন্টে ম্যাচ শুরুর আগে বাংলাদেশ–আফগানিস্তান দু’দলের সামনেই সুযোগ ছিল সেমিফাইনালে ওঠার। নাজমুল হোসেন শান্ত’র দলের জন্য সেটি কিছুটা সহজ হয়ে ওঠে বোলারদের কল্যাণে। আফগানরা আগে ব্যাটিং করে ১১৫ রান তুলতে সক্ষম হয়। তবে বাংলাদেশকে সেই রান তাড়া করতে হতো ১২.১ ওভারে, ফলে কাজটা যে পুরোপুরি সহজ নয় সেটা ধারণা করা–ই যায়। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জয় অসম্ভবই থেকে যায়। বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশে হেরে যায় ৮ রানে।

এর আগে বৃষ্টির আভাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ম্যাচের শেষদিকে ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনা! ব্যাটিংয়ে থাকা বাংলাদেশ তখন ডিএলএস পদ্ধতিতে ২ রানে পিছিয়ে। বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখায় ডাগআউট থেকে আফগানিস্তানের প্রধান কোচ জোনাথন ট্রট সংকেত দিচ্ছিলেন, সময় নিতে। সংকেত দেখার পরপরই স্লিপে থাকা গুলবাদিন নাইব মাঠে শুয়ে গেলেন, যেন কিছুটা সময় নিতে চাইলেন এই পেস অলরাউন্ডার। সতীর্থদের কাঁধে ভর দিয়ে মাঠ ছাড়া এই পেসার পরে মাঠে নেমে স্বাভাবিকভাবে বল করেছেন, পেয়েছেন উইকেটও। জয়ের উদযাপনে দৌড়েছেন স্প্রিন্ট অ্যাথলেটদের মতো, লাফিয়ে উঠেছেন সতীর্থদের কাঁধে।

এটা ঠিক যে গুলবাদিন নাইবের ওই আচরণ ম্যাচের ফল নির্ধারণ করে দেয়নি। তবে বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি আর মাঠে না গড়ালে সেই ২ রানেই জিতে যেত আফগানরা। পরবর্তীতে জয় নিশ্চিতের পর গুলবাদিনের চোটে পড়ার বিষয়টি ‘ভান বা নাটক’ বলে প্রশ্ন তুলেছেন ধারাভাষ্যকার, ক্রিকেট বিশ্লেষক থেকে শুরু করে দর্শকরাও। ম্যাচ চলাকালেই কিউই ধারাভাষ্যকার সাইমন ডুল বলে ওঠেন, ‘কোচ কী ইঙ্গিত দিয়েছে সেটা সবাই বুঝতে পেরেছে। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করাটা ঠিক নয়, অগ্রহণযোগ্য।’ আরেক ম্যাচ বিশ্লেষক পমি মবঙ্গোয়া মন্তব্য করেন আরও খোলামেলা-ভাবেই, ‘অস্কার নাকি এমি?’

সাধারণত ফুটবলে সুবিধা নেওয়ার আশায় চোটের অভিনয় করতে দেখা যায় খেলোয়াড়দের। যা দেখে রেফারি তার পক্ষে কিংবা কখনও ইচ্ছাকৃত ভান ধরার আচরণ বুঝে কার্ড দেখান। গুলবাদিন নাইবের ঘটনায় যেন সেটাই মনে পড়ল রবিচন্দ্রন অশ্বিনের। ভারতীয় এই তারকা অলরাউন্ডার সামাজিকমাধ্যমে (এক্স, সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘গুলবাদিন নাইবকে রেড কার্ড দেখানো উচিৎ।’ এ ছাড়া ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন প্রশ্ন তুলেছেন ক্রিকেটীয় স্পিরিট নিয়ে।

এ তো গেল পূর্বের ঘটনা, বৃষ্টি থামার পর গুলবাদিন মাঠে নেমে উইকেটও নিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই শামিল হয়েছেন সতীর্থদের সঙ্গে বিজয়োল্লাসে। তার চোটের অবস্থা কেমন, তা নিয়ে ম্যাচ পরবর্তী প্রেজেন্টেশনে আফগান অধিনায়ক রশিদ খান জানান, ‘হ্যাঁ তার ক্র্যাম্প (পায়ের পেশিতে টান লাগা) হয়েছিল। আমার মনে হয়, সে ঠিক আছে। সে যে উইকেটটি নিয়েছে, সেটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’

সামাজিক মাধ্যমে ওঠা আলোচনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আসলে জানি না তার কী হয়েছিল এবং সামাজিক মাধ্যমে কী চলছে সেটিও জানা নেই। এটা মাঠের ইনজুরি এবং তাতে কোনো ওভারও কাটা যায়নি। বৃষ্টি থামার পর আবার খেলাও হয়েছে এবং আমি মনে করি না গুলবাদিনের চোটের ঘটনা ম্যাচে বড় কোনো প্রভাব ফেলেছে। কারণ পাঁচ মিনিট পরই আমরা মাঠে নামি। মনে হয় এটি সাধারণ একটি চোটের ঘটনা এবং তার জন্য আপনি সময় নিতেই পারেন।’

এএইচএস