আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অপ্রত্যাশিত হারের পর বিশ্বকাপে টিকে থাকতে জয়ে ফেরাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল পাকিস্তানের জন্য। ভারতের বিপক্ষে কখনো সেভাবে পেরে না ওঠা ম্যান ইন গ্রিনদের কাঙ্ক্ষিত জয়ের পথটা সহজ করে দিয়েছিলেন দলের পেসাররা। হাই-ভোল্টেজ লড়াইয়ে ভারতকে ১১৯ রানে আটকে দিয়েছিলেন হারিস রউফ-নাসিম শাহরা। কিন্তু এই ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেও ব্যর্থ হয়েছেন ব্যাটাররা। শেষ পর্যন্ত ৬ রানের ব্যবধানে হেরে গেছে পাকিস্তান। 

পরপর দুই ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে আছে বাবর আজমের দল। তাদের সুপার এইটের ভাগ্য টিকে আছে পরের দুই ম্যাচে বড় জয় এবং অনেক যদি কিন্তুর ওপর। এদিকে, ভারতকে অল্পতে আটকে দিয়েও জয় হাতছাড়া হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন দেশটির সাবেক ক্রিকেটাররা। এর মধ্যেই দলে বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসীন নাকভি। 

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পর গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাকভি বলেন, ‘মনে হয়েছিল পাকিস্তান ক্রিকেট দলের জন্য মাইনর সার্জারিই (ছোটখাটো অস্ত্রোপচার) যথেষ্ট। কিন্তু এ ধরনের বাজে পারফরম্যান্সের পর এটা পরিষ্কার যে, দলে মেজর সার্জারি দরকার।’ আগামী বছর পাকিস্তানের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হওয়ার কথা রয়েছে। চলতি বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর আসন্ন টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুত হতে দলের বাইরে থাকা প্রতিভাবানদের সুযোগ দেওয়ার সময় এসেছে বলেও মন্তব্য করেন পিসিবি প্রধান।

১২০ রানের লক্ষ্যে নেমে পাকিস্তানের শুরুটা মোটেই মন্দ ছিল না। প্রথম চার ওভারেই ২১ রান তোলে বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ানের জুটি। ৮০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পরও পাকিস্তান ছিল জয়ের কক্ষপথে। সেখান থেকেই একের পর এক ডট বল দলের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। রিজওয়ানের উইকেট কার্যত ভারতকে জয়ের সুবাস এনে দেয়। পাকিস্তানের হয়ে শাদাব খান, মোহাম্মদ ইফতিখারের মতো প্রতিষ্ঠিত ব্যাটাররা দলে থাকলেও ম্যাচে আর ফেরাই হয়নি পাকিস্তানের। 

গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রিজওয়ানের আউট নিয়ে হতাশ ওয়াসিম আকরাম। তিনি বলেন, ‘এই দলের প্রায় সবাই কম-বেশি ১০ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে। আমার পক্ষে এদের কিছু শেখানো সম্ভব নয়। মোহাম্মদ রিজওয়ানের খেলাটা নিয়ে কোনো জ্ঞানই নেই। এটুকু বোঝে না, ওকে আউট করার জন্যই বুমরাহ ওই বলটা ইচ্ছাকৃত করেছিল। আর রিজওয়ান সাবধানে না খেলে বড় শট নিতে গেল! আউটও হলো।’ আরও দু’জনকে নিয়ে হতাশ আকরাম। তারা হচ্ছেন ফখর জামান এবং ইফতেখার আহমেদ। আকরাম বলেন, ‘এতদিন ধরে পাকিস্তানের হয়ে খেলছে। অথচ ওদের খেলায় কোনো উন্নতি নেই। কীভাবে ব্যাট করতে হয়, সেটুকুও জানে না। 

ব্যর্থতার জন্য খেলোয়াড়েরা কমই ভোগেন বলে দাবি আকরামের, ‘পাকিস্তানি খেলোয়াড়েরা মনে করে, তারা ভালো না করলে কোচ বরখাস্ত হবে। তাদের কিছু হবে না। সময় এসেছে কোচকে রেখে পুরো দলই বদলে ফেলার।’ অন্যদিকে ইউনিস বলছেন, ‘ভারত একটা ভালো সুযোগ দিয়েছিল। এই পিচে ১৪০-১৫০ রান পর্যন্ত তাড়া করে জেতা সম্ভব। ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরেও জেতা উচিত ছিল। ভারতীয় দলের ভারসাম্য দুর্দান্ত। ওরা জানে ব্যাটারেরা ব্যর্থ হলে যশপ্রীত বুমরাহ,সিরাজ ও রবীন্দ্র জাদেজারা বল হাতে সামাল দিতে পারবে। ওদের ভালো ফিল্ডিংও প্রতিপক্ষকে চাপে রাখে সব সময়। পাকিস্তান যদি এই ম্যাচও জিততে না পারে, তাহলে আর কী বলব! পাকিস্তানের ব্যাটারদের পারফরম্যান্স জঘন্য। দুটি জুটি যথেষ্ট ছিল। সেটাও পারে না এরা।’

বিশ্বকাপের আগে শাহিন আফ্রিদিকে সরিয়ে বাবরকে আবার সাদা বলের ক্রিকেটে অধিনায়ক করেছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। জামাইকে অধিনায়ক হিসেবে একটা সিরিজ দেখেই বোর্ডের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ছিলেন শহিদ আফ্রিদি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পরপর দু’টি ম্যাচে হারের পর হতাশ আফ্রিদি দায়ী করেছেন বাবরকেই। সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘একজন অধিনায়ক দলের সবাইকে এক সূত্রে বাঁধতে পারে। আবার সে দলের পরিবেশ নষ্টও করে দিতে পারে। আমাদের বিশ্বকাপ শেষ হোক। আমি খোলাখুলি কথা বলব।’ 

এফআই