ভারত–পাকিস্তান লড়াইয়ের প্রতি মানুষের আকর্ষণ অনেকটা নিষিদ্ধ বিষয় নিয়ে উন্মাদনার মতো! কারণ দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ আইসিসি কিংবা এসিসি টুর্নামেন্টের বাইরে মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে প্রায় ১৭ বছর তারা দ্বিপক্ষীয় সিরিজ থেকে বিরত রয়েছে। তবে চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই তারা পড়েছে একই গ্রুপে। যেখানে ভারত–পাকিস্তান গ্রুপপর্বে বহুল কাঙ্ক্ষিত লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে ৯ জুন। ম্যাচটিতে ‘সুপার বোল’ বলে উল্লেখ করেছেন সাবেক পাক কিংবদন্তি শহীদ আফ্রিদি।

বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছেন চলতি বিশ্বকাপের শুভেচ্ছাদূত আফ্রিদি। নিউইয়র্কের নাসাউ স্টেডিয়ামে হতে যাওয়া পাক–ভারত লড়াইকে নতুন নাম দেওয়ার কারণ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট অতটা পরিচিত নয়, তবুও খেলাটির বাজার সম্প্রসারণে এবার বিশ্বকাপের মতো মেগা আসর আয়োজন করা হয়েছে দেশটিতে। যদিও তাদের সঙ্গে সহ–আয়োজক হিসেবে আছে অভিজ্ঞ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের কাছে ভারত-পাক লড়াইয়ের গুরুত্ব বোঝাতে আফ্রিদি ম্যাচটিকে ‘সুপার বোল’ উল্লেখ করেন।

‘সুপার বোল’ যুক্তরাষ্ট্রে পরিচিত টার্ম। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ফুটবল লিগের (এনএফএল) বার্ষিক চ্যাম্পিয়নশিপকে বলা হয় সুপার বোল নামে। ১৯৬৬ সাল থেকে দেশটিতে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হচ্ছে। এটি বিশ্বব্যাপী ক্লাব স্পোর্টসের সবচেয়ে বড় ইভেন্টগুলোর একটি। যেখানে ন্যাশনাল ফুটবল কনফারেন্স এবং আমেরিকান ফুটবল কনফারেন্সের চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে খেলা হয় এবং এর বিজয়ীকে ভিন্স লোম্বার্ডি ট্রফি প্রদান করা হয়। যার বেশ জনপ্রিয়তা ও গুরুত্ব রয়েছে মার্কিন নাগরিকদের কাছে। তাই ক্রিকেটীয় আয়োজনকে এর সঙ্গে তুলনা করে আমেরিকানদের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে চেয়েছেন সাবেক পাক অলরাউন্ডার।

২০২২ সালে লস অ্যাঞ্জলসে হওয়া একটি সুপার বোল ম্যাচের দৃশ্য

আফ্রিদি বলেন, ‘যেসব আমেরিকানরা এই টুর্নামেন্টটি সম্পর্কে জানতে চান, তাদের জানা উচিৎ ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের ম্যাচটি ‘‘সুপার বোল’’র মতো। আমি দুই দেশের মধ্যকার এই ম্যাচ খেলতে পছন্দ করতাম এবং বিশ্বাস করি এটি খেলার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর একটি। আমি যখন এ ধরনের ম্যাচ খেলেছি, ভারতীয় দর্শকদের কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা ও সম্মান পেয়েছি। দু’পক্ষের কাছে এমন বিষয় অনেক বড় কিছু।’

‘ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ মানে অনেক চাপের মুখোমুখি হওয়া। দুই দলেই অনেক বেশি প্রতিভা থাকে, নির্দিষ্ট দিনে তারা যার মিশ্র পারফরম্যান্স ঘটায়। যা ওই ম্যাচ কিংবা পুরো টুর্নামেন্টের জন্য বিশেষ হয়ে থাকে। শেষ পর্যন্ত যারা স্নায়ু ধরে রেখে লড়াই করতে পারে, তারা সফলতা পায়’, আরও যোগ করেন ২০০৭ বিশ্বকাপের টুর্নামেন্টসেরা এই অলরাউন্ডার।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে আগে থেকেই পূর্বাভাস দেওয়া যায় না বলে মত আফ্রিদির, ‘টি-টোয়েন্টি অনেক অনিশ্চিত খেলা, যেখানে দলগুলো ধীরে ধীরে খেলার গভীরে প্রবেশ করে। যেখানে ৮ নম্বরে নেমেও ১৫০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করে ম্যাচ জিতিয়ে ফেলার পরিস্থিতি আসে। আমি আশা করি পাকিস্তান এবারও ভালো করবে, তবে এখানে সুনির্দিষ্ট ফেবারিট বেছে নেওয়া কঠিন।’

যুক্তরাষ্ট্রে খেলাটি আরও জনপ্রিয় হবে বলেও মনে করেন আফ্রিদি, ‘এখানে মানুষ খেলাটি ভালোবাসতে শুরু করেছে। বড় সংখ্যক সম্প্রদায় আছে, যারা ক্রিকেট ভালোবাসে এবং আমেরিকানরা অবশ্যই এটিকে সমর্থন করবে। যেভাবে তারা ফুটবল, বাস্কেটবল কিংবা বেসবলকে দেখে। আমি আসলেই বিশ্বাস করি যে আগামী কয়েক বছরে এখানে ক্রিকেটের অবস্থান মেইনস্ট্রিম খেলাগুলোর একটিতে পরিণত হবে। যা দেশি-বিদেশি সব ক্রিকেটারের জন্যও হবে রোমাঞ্চকর।’

এএইচএস