ক্রিকেটের বিশ্ব আসর মানেই অস্ট্রেলিয়ার রাজত্ব। টুর্নামেন্টজুড়ে তারা যে অবস্থানেই থাকুক না কেন, চূড়ান্ত সাফল্য তাদের হাতে কীভাবে ধরা দেয় তা নিয়েই বরং ক্রিকেটভক্তদের বিস্ময়ের শেষ নেই! তবে বিশ্বকাপ জয়ের প্রক্রিয়া ভালোই জানার কথা অজিদের দুইবার চ্যাম্পিয়ন বানানো অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের। তিনি বিশ্বকাপে সাফল্য পেতে ডেভিড ওয়ার্নারের মতো ‘ন্যাচারাল উইনার’ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের প্রায় শেষপ্রান্তে আছেন এই অজি ওপেনার। ওয়ানডে ও টেস্টকে আগেই বিদায় বলেছিলেন, বাকি কেবল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে চলমান বিশ্বকাপ দিয়ে এই ফরম্যাট থেকেও অবসর নেবেন জোর সম্ভাবনা ওয়ার্নারের। তবে আলোচনা উঠেছে সাম্প্রতিক সময়ে ফর্মহীন থাকা এই ব্যাটারের বদলে তরুণ তারকা জ্যাক ফ্রেসার-ম্যাকগার্ককে দলে নেওয়ার বিষয়ে। বিগ ব্যাশ ও আইপিএলে আগ্রাসী ব্যাটিং করা এই তরুণকেই অনেকে মূল দলে রাখার পক্ষে। সে যুক্তি উড়িয়ে দিয়েই পাল্টা যুক্তি দেখিয়েছেন পন্টিং।

দিল্লি ক্যাপিটালসে ওয়ার্নার ও ম্যাকগার্ক দুজনেই খেলেছেন স্বদেশি পূর্বসূরী রিকি পন্টিংয়ের অধীনে। দুজনের পারফরম্যান্সই তিনি কাছ থেকে দেখেছেন। ফর্মহীনতায় ওয়ার্নার বাদ পড়ায় দিল্লিতে যোগ দেওয়ার পর প্রায় সব ম্যাচই ওপেন করেছেন ম্যাকগার্ক। তবে বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে অভিজ্ঞ ওয়ার্নারই বেশি উপযোগী বলে মনে করেন পন্টিং। যদি অস্ট্রেলিয়া এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিততে পারে, বিরল এক কীর্তিতে তাদের নাম ওঠে যাবে টানা তিন ফরম্যাটের বিশ্বশিরোপাই উঠবে তাদের হাতে। ক্রিকেটার হিসেবে কেবল চারজনের এই রেকর্ড গড়ার সুযোগ আছে। ওয়ার্নার ছাড়া প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক ও ট্রাভিস হেড খেলেছেন ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল।

বিশ্বকাপে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন পন্টিং। সেখান থেকেই তিনি ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে বলেন, ‘সে (ওয়ার্নার) এমন এক ধরনের ক্রিকেটার যাকে আপনার টিমে পেতেই চাইবেন। বিশেষ করে বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে। এবং সে ন্যাচারাল উইনারদের একজন। সে জয় পেতে সবকিছুই করে। যা মাঠে তার ভাবভঙ্গি দেখলেও বুঝতে পারা যায় এবং যেভাবে সে তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার গড়েছে।’

‘সুতরাং এখানে রান করার চেয়েও বেশি কিছু আছে, যদিও খুব শিগগিরই আমরা ওয়ার্নারকে হারাতে যাচ্ছি। তবে আশা করি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের যে গভীরতা, এখানে সে জায়গায় আসার মতো যথেষ্ট ক্রিকেটার আছে এবং সে শূন্যতাও দ্রুত পূরণ হয়ে যাবে’, আরও যোগ করেন ওয়ার্নার। সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিডনিতে ম্যাচ খেলার পর দুই ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছিলেন এই ওপেনার, চলতি বিশ্বকাপ শেষে তাকে আর টি-টোয়েন্টিতেও দেখা যাবে না।

অন্যদিকে, ফ্রেসার–ম্যাকগার্ককে ‘এক্সট্রিম ট্যালেন্ট’ উল্লেখ করেন পন্টিং। যাকে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে ট্রাভেলিং রিজার্ভ হিসেবে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ম্যাকগার্ককে নিয়ে পন্টিংয়ের ভাষ্য, ‘এটি সবচেয়ে বড় জায়গা যা পূরণ করতে হচ্ছে, যা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এখানে (অস্ট্রেলিয়া) বেশ গভীরতা আছে। আমি বিস্মিত হব যদি ওয়ার্নারের বিদায়ের পর তাকে (ম্যাকগার্ক) সরাসরি টি-টোয়েন্টি দলে না নেওয়া হয়। আমরা গত অস্ট্রেলিয়ান গ্রীষ্মে তার ওয়ানডে অভিষেক দেখেছি, পরবর্তীতে দিল্লিতেও ম্যাকগার্ককে কোচিং করাতে পেরে আমি ভাগ্যবান। সে একজন এক্সট্রিম ট্যালেন্ট।’

উল্লেখ্য, ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার ওয়াডে বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দেন পন্টিং। সদস্য ছিলেন অজিদের ১৯৯৯ বিশ্বকাপ দলেরও। এ ছাড়া ২০০৪ এবং ২০০৯ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন হয় পন্টিংয়ের নেতৃত্বে।

এদিকে, চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ‘বি’ গ্রুপে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, নামিবিয়া, স্কটল্যান্ড ও ওমানকে। প্রথম ম্যাচে মিশেল মার্শের দল আগামীকাল (৬ জুন) ওমানের বিপক্ষে খেলবে।

এএইচএস