প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে অনেকটা নীরবেই শুরু হয়ে গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তবে আটলান্টিক মহাসাগরের পাড়ে যে মেগা আসরটি রোমাঞ্চ ছড়াতে যাচ্ছে সেটি উদ্বোধনী ম্যাচেই টের পাওয়া গেছে। যেখানে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের মোকাবিলায় কানাডার শুরুটাই ছিল দুর্দান্ত। তবে সেই পারফরম্যান্সও ছাপিয়ে গেছে বিশ্বকাপের অন্যতম আয়োজকদের নৈপুণ্যে। বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচেই যুক্তরাষ্ট্র ১৯৫ রানের লক্ষ্য ১৪ বল হাতে রেখে পেরিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সহ–অধিনায়ক অ্যারন জোন্স ও আন্দ্রিয়েস গুস তৃতীয় উইকেট জুটিতে তুলেছেন ১৩১ রান। ওভারপ্রতি রান এসেছে ১৪.২৯ গড়ে, যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যেকোনো সেঞ্চুরি জুটির সর্বোচ্চ রানরেটের রেকর্ড। শেষ পর্যন্ত জোন্স ৪০ বলে ছক্কার রেকর্ড গড়ে ৯৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। ৪৬ বলে ৬৫ রান করেন গুস। ৭ উইকেটর বড় জয়ে তারা আরও বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়েছে। সবমিলিয়ে ম্যাচটিতে যত রেকর্ড হলো দেখে নেওয়া যাক—

ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক জোন্সকে নিয়ে সতীর্থ আলী খানের উদযাপন

অভিষেক আসরে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ

সহযোগী দেশ হিসেবে এদিন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ১৯৪ রান তোলে কানাডা। এর আগে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে নেমে ২০১৪ আসরে নেদারল্যান্ডস ১৯৩ রান তুলেছিল। তাদের সেই রেকর্ড প্রথমে ভাঙে কানাডা, পরে সেটিও ভেঙে দেয় অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা আরেক দল যুক্তরাষ্ট্র, রানতাড়ায় তাদের করা ১৯৭ এখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অভিষেক আসরে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।

তৃতীয় সর্বোচ্চ রানতাড়ার রেকর্ড

লক্ষ্য তাড়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে ইতিহাস গড়তে হতো ম্যাচটিতে। কারণ এর আগে টি-টোয়েন্টিতে তাদের সর্বোচ্চ ১৬৯ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ছিল। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ম্যাচটি শেষ পর্যন্তই যেতে দিলেন না অ্যারন জোন্সরা। ১৭.৪ ওভারেই তারা সেই রান পেরিয়ে যায় ৭ উইকেট হাতে রেখে। এর আগে আইসিসির কোন সহযোগী সদস্য দেশ বিশ্বকাপে ১৯০ রানের বড় টার্গেটে ব্যাট করে জিততে পারেনি। রান তাড়ার রেকর্ডে সব দল মিলিয়েও এটি তৃতীয় স্থানে আছে।

সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের এই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি ২৩০ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটি ইংল্যান্ডের দখলে। ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংলিশরা মুম্বাইয়ে এমন কীর্তি গড়েন। অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকাই এর আগে সর্বোচ্চ ২০৬ রান তাড়া করেছিল ২০০৭ বিশ্বকাপে। যা এখন রানতাড়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করা ক্যারিবীয়দের সেই কীর্তি ভাঙে ইংল্যান্ড।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় জুটি, বিশ্বকাপে দ্বিতীয়

যুক্তরাষ্ট্রের সহ–অধিনায়ক অ্যারন জোন্স ও আন্দ্রিয়েস গুস তৃতীয় উইকেট জুটিতে তুলেছেন ১৩১ রান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তৃতীয় উইকেট জুটিতে এর চেয়ে বেশি রান এসেছে আর মাত্র একবার। ইংল্যান্ডের ইয়ন মরগান ও অ্যালেক্স হেলস মিলে ১৫২ রান এনেছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৪ বিশ্বকাপে। এরপর অবস্থান জোন্স-গুস জুটির। তবে টি-টোয়েন্টিতে যুক্তরাষ্ট্রের এটাই সবচেয়ে বড় রানের জুটি। এর আগে ১১০ রানের জুটি ছিল এস মদানি ও গাজানন্দ সিংয়ের।

জোন্স-গুসের ১৩১ রানে জুটি গড়েছে একাধিক রেকর্ড 

বিশ্বকাপের এক ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ছক্কা

অপরাজিত ৯৪ রানের পথে ১০টি ছয় হাঁকিয়েছেন জোন্স। বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে দশটি ছক্কা মারা দ্বিতীয় ক্রিকেটার হলেন এই আমেরিকান। টি-টোয়েন্টির বিশ্বমঞ্চে ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার তালিকায় তার সামনে শুধুই ক্রিস গেইল। ক্যারিবিয়ান এই ‘ইউনিভার্স বস’ এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মেরেছিলেন ১০ ছক্কা। এরপর ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বোলারদের মেরেছেন ১১টি ছক্কা।

এক ওভারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান খরচ

এর আগে বিশ্বকাপের এক ওভারে সর্বোচ্চ ৩৬ রান দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড। ২০০৭ আসরে যুবরাজ সিংয়ের খেলা সেই ইনিংসটি টুর্নামেন্টটিরই আইকনিক মুহূর্তগুলোর একটি। আজ কানাডার জেরেমি গর্ডন এক ওভারে খরচ করেছেন ৩৩ রান। যদিও তার আগের দুই ওভার ছিল বেশ নিয়ন্ত্রিত, সবমিলিয়ে এই মিডিয়াম পেসার তিন ওভারে উইকেটশূন্য থেকে ৪৪ রান দিয়েছেন।

শতরানের জুটিতে সর্বোচ্চ রানরেট

জোন্স-গুসের ১৩১ রানের জুটিতে ওভারপ্রতি রান হয়েছে ১৪.২৯ গড়ে, যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যেকোনো সেঞ্চুরি জুটির সর্বোচ্চ রানরেটের রেকর্ড। ১৪ এর বেশি রানরেটে আসা প্রথম শতরানের জুটি এটিই। এর আগে শতরানের জুটিতে সর্বোচ্চ রানরেট ছিল ১৩.৪৬। এই গতিতে কেভিন ও‘ব্রায়ান এবং অ্যান্ড্রু পয়েন্টার মিলে ১০১ রানের পার্টনারশিপ গড়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২০১৪ সালে সিলেটে।

যুক্তরাষ্ট্র ব্যাটারের দ্রুততম ফিফটি

বিশ্বকাপের আয়োজকদের বড় জয় এনে দেওয়ার পথে জোন্স দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন। ৯৪ রানে অপরাজিত থাকা এই ব্যাটার ফিফটি করেন মাত্র ২২ বলে। যা ফরম্যাটটিতে কোনো আমেরিকান ব্যাটারের সবচেয়ে দ্রুততম ফিফটি।

এএইচএস