ফাইনালে এসেই যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। পুরো আসরেই নিজেদের ব্যাটিং দিয়ে প্রতিপক্ষ বোলারদের নাজেহাল করেছিল তারা। আর আজ দেখতে হলো একেবারেই উল্টো এক চিত্র। এবারের আসরে যে দলটি দুবার দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছিল, তারাই ফাইনালে কলকাতার পেসারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। 

শুরটা করেছিলেন মিচেল স্টার্ক। পরে সেটাই ধরে রেখেছেন আন্দ্রে রাসেল-হার্ষিত রানারা। রাসেল পেয়েছেন তিন উইকেট, বাকি দুজন শিকার করেছেন দুটি করে। তাদের তাণ্ডবে দাঁড়াতে পারেননি হায়দরাবাদের ব্যাটিং অর্ডারের কেউই। অধিনায়ক প্যাট কামিন্স শেষদিকের লড়াইয়ে দলকে কিছুটা হলেও বলার মতো পুঁজি এনে দিয়েছেন। তার ৩০ রানের ইনিংসে ভর করেই ১১৩ রান দাঁড় করিয়েছে হায়দরাবাদ। 

এমন হতশ্রী ব্যাটিং প্রদর্শনীর দিনে লজ্জার এক রেকর্ডও গড়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। আইপিএলের ফাইনালে এটিই যেকোনো দলের জন্য সর্বনিম্ন স্কোর। ২০১৩ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ১৪৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ১২৫ রানে আউট হয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস। সেটা হয়েছিল কলকাতার মাঠে। আর আজ চেন্নাইয়ের মাঠে এমন লজ্জা পেল ড্যানিয়েল ভেট্টোরির শিষ্যরা। 

 

২৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে মিচেল স্টার্ককে কেন কিনেছিল কলকাতা, সেটা বোধকরি আজ আবার প্রমাণ পেলো ক্রিকেট দুনিয়া। শুরুটা বিবর্ণ হলেও আইপিএলে যত সময় গিয়েছে ততই বিধ্বংসী হয়েছেন তিনি। রোববারের ফাইনালে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে একপ্রকার চালকের আসনেই বসিয়ে দিলেন এই অজি পেসার। 

ট্রাভিস হেডকে এর আগে ৫ দেখায় ৪ বারই ফিরিয়েছেন শূন্য রানে। এই বোধ থেকেই কিনা আজ ইনিংসের প্রথম বল খেললেন অভিষেক শর্মা। তরুণ এই ওপেনার নিজেও তো ছিলেন দারুণ ছন্দে। কিন্তু স্টার্কের আউটসুইং বলগুলো সামাল দিতে গিয়ে যেন খাবি খেলেন। টিকলেন মোটে ৫ বল। 

ওভারের ৫ম বলে গুড লেন্থের ডেলিভারিটা সুইং করে বেরিয়ে যাচ্ছিল। তবে যাওয়ার পথে ছুঁয়ে দেয় অফ স্ট্যাম্প। ২ রানে ফেরেন অভিষেক। পরের ওভারে বৈভব অরোরা নিজেও হানলেন আঘাত। এবারও আউটসুইঙ্গার। গোল্ডেন ডাক মেরে ফিরেছেন ট্রাভিস হেড। বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়ে ক্যাচ পাঠিয়েছেন উইকেটের পেছনে থাকা গুরবাজের হাতে। 

এইডেন মার্করাম এবং রাহুল ত্রিপাঠি একটা করে চার মারলেও খুব একটা লাভ হয়নি। ইনিংসের ৫ম ওভারে আবার স্টার্কের আঘাত। ১৩ বলে ৯ করে ফেরেন আগের ম্যাচের নায়ক রাহুল ত্রিপাঠি। এরপর মার্করাম এবং নীরিত রেড্ডী কিছুটা আশা দেখিয়েছেন। দুজনের কাছ থেকে কিছুটা চার-ছয় দেখেছেন দর্শকরা। 

কিন্তু দলীয় ৪৭ রানে তাদের জুটি ভাঙ্গেন হার্ষিত রানা। এবার তার কুইকার ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত নীতিশ। বল ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটের পেছনে গুরবাজের হাতে। এইডেন মার্করাম এবারের পুরো আসরেই ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। ফাইনালেও পারেননি প্রত্যাশা মেটাতে। ব্যক্তিগত ২০ রানে ফিরে যান তিনিও। আন্দ্রে রাসেলের প্রথম শিকার তিনি। 

মাঝে বরুণ চক্রবর্তীর বলে শাহবাজ আর রাসেলের বলে ইম্প্যাক্ট হিসেবে নামা আব্দুস সামাদ আউট হলে দলীয় ১০০ পার হওয়া নিয়েই শঙ্কায় পড়ে যায় হায়দরাবাদ। সেখান থেকে তাদের পথ দেখান অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। জয়দেব উনাদকাটকে নিয়ে পার করেন দলীয় শতরান। তাদের জুটি থেকে এসেছিল ২৩ রান। আউট হয়েছেন জয়দেব উনাদকাট। 

এরপরেই অবশ্য ফিরে যান প্যাট কামিন্সও। রাসেলকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দেন অজি এই অলরাউন্ডার। তাতেই ১১৩ রানে শেষ হয় হায়দরাবাদের ইনিংস। 

জেএ