আম্পায়ারদের নির্বাচনে ‘উকিলের’ কাছে হারলেন সৈকত
আম্পায়ারিংয়ে বাংলাদেশের গর্ব শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। অস্ট্রেলিয়ায় নিরপেক্ষ আম্পায়ার হিসেবে টেস্ট ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপেও একাধিক ম্যাচে ছিলেন অন-ফিল্ড আম্পায়ার। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আম্পায়ারিং করতে গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যায় দেশ ছেড়েছেন সৈকত। আইসিসির এলিট প্যানেলের এই আম্পায়ার গতকালই বাংলাদেশ আম্পায়ার্স এন্ড স্কোরার্স এসোসিয়েশনের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে হেরেছেন।
সৈকতের এই পরাজয়ে যারপরনাই ব্যথিত ও লজ্জিত আইসিসি আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল। তিনি প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘সৈকত সারা বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি করছে আর আমরা সৈকতকে সম্মান জানাতে পারলাম না। এর চেয়ে দুঃখজনক কিছু হতে পারে না।’ কেবল এলিট আম্পায়ার সৈকতই নন, যুগ্ম সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়া আইসিসির আরও দুই আম্পায়ার গাজী সোহেল ও তানভীর আহমেদও পরাজিত হয়েছেন। মুকুল সংগঠনের সদস্য না হওয়ায় নির্বাচনে প্রার্থীতা বা ভোটে অংশগ্রহণ করেননি।
বিজ্ঞাপন
সাধারণ সম্পাদক পদে সৈকত হেরেছেন কোনো বর্ষীয়ান বা বিশিষ্ট আম্পায়ারের কাছে নন। তাকে হারিয়েছেন অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান। যার আন্তর্জাতিক পর্যায় তো দূরের কথা, ঘরোয়া শীর্ষ পর্যায়েও আম্পায়ারিং করার স্মৃতি ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কেউ স্মরণ করতে পারলেন না। নিচের স্তরে আম্পায়ারিং করা পেশাদার এই আইনজীবী অবশ্য এসোসিয়েশনে সক্রিয় দীর্ঘদিন থেকেই। বেশ কয়েক বছর যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে ছিলেন। কমিটিতে অনেকদিন থাকায় কেন্দ্রীয় সদস্য ছাড়াও জেলা-বিভাগীয় ভোটারদের সঙ্গে সখ্যতাই ছিল তার প্রধান শক্তি। ভোটাররাও সৈকতের আন্তর্জাতিক অর্জনের দিকে না তাকিয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও সাংগঠনিক বিবেচনাকে প্রাধান্য দিয়ে বর্তমানে পেশাদার আইনজীবীকে সংগঠনের নেতা বানিয়েছেন। সৈকত এলিট প্যানেলের প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হয়ে সংগঠনের গৌরব বৃদ্ধি করলেও নিজ এসোসিয়েশন থেকে কোনো সম্মাননা পাননি।
মাঠের পারফরম্যান্স ও নির্বাচন সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদ দাবা ফেডারেশনে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করে হেরেছিলেন। অনেক খ্যাতনামা ক্রীড়াবিদদের নিজ ভুবনে হারার নজির রয়েছে। আইসিসি’র এলিট আম্পায়ার সৈকতও এই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম জেনেও প্রার্থী হয়েছিলেন প্রতিবাদ স্বরূপ। সৈকত প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনী আবহ ও অঙ্ক ভিন্ন হয়েছে। বেশ কয়েকটি পদে ভোটাভুটিও হয়েছে। এই ভোটাভুটির কারণে দীর্ঘদিন এসোসিয়েশনের মহীরুহ সাবেক আন্তর্জাতিক আম্পায়ার সায়লাব হোসেন টুটুল সহ-সভাপতি পদেও জিততে পারেননি।
সাধারণ সম্পাদক থেকে টুটুল এবার সহ-সভাপতি প্রার্থী হয়েছিলেন। এই পদে কেন্দ্রীয় চার পদের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন পাঁচ জন। টুটুল ও সত্য রঞ্জন বসাক সমানসংখ্যক ১৪১ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো পদে টাই হলে টসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। টুটুল টস আয়োজন না করে চিঠির মাধ্যমে সত্য রঞ্জন বসাকের কাছে পদ ছেড়েছেন। এর ফলে বেশ কয়েক যুগ পর এসোসিয়েশনের কমিটিতে আর নেই টুটুল।
সাধারণ সম্পাদক থেকে টুটুল সহ-সভাপতি প্রার্থী হলেও কাজী ইউসা মিশু পুনরায় সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। তিনি বেশ সহজেই পরাজিত করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী মাহবুব উল্লাহকে। মিশুর প্যানেল থেকে মজিবুরও এলিট আম্পায়ার সৈকতকে ভালোভাবেই পরাজিত করেছেন। একই প্যানেলে থেকেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্যে পড়েছিলেন টুটুল। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপ ছাড়াও নিজের প্যানেলের পূর্ণ সমর্থনও সেভাবে পাননি ক্রিকেট আম্পায়ারদের ডাকসাইটে এই নেতা।
আরও পড়ুন
আম্পায়ার ও স্কোরারদের সংগঠন বাংলাদেশ আম্পায়ার্স এন্ড স্কোরার্স এসোসিয়েশনের এই নির্বাচনে জেলা-বিভাগ থেকে ৫৯ জন ও কেন্দ্রীয় ১৩১ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। জেলা-বিভাগ থেকে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মাদারীপুরের আমির বাবু। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে ভোটাভুটি শেষে গতকাল রাতে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান আমিনুল হক মল্লিক ফলাফল ঘোষণা করেন। এতে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ছিলেন কাজী শহীদুল আলম।
নির্বাচনে জয়ী হলেন যারা—
সভাপতি : কাজী মো. ইউসা মিশু
সহ-সভাপতি :
১. মো. মাহবুবুর রহমান
২. মুশফিকুর রহমান মোসাব্বির
৩. সত্য রঞ্জন বসাক
৪. মো. মঞ্জুর রহমান মঞ্জু
৫. আমিরুজ্জামান বাবু (শাখা এসোসিয়েশন থেকে)
সাধারণ সম্পাদক : এ্যাড. মজিবুর রহমান
যুগ্ম সম্পাদক :
১. হুমায়ুন কবির আহমেদ
২. আব্দুল্লাহ আল মতিন জুয়েল
কোষাধ্যক্ষ : আক্তারুজ্জামান খান (জামান)
সাংগঠনিক সম্পাদক : ইফতেখার হোসেন রানা
ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক : আসাদ উর রহমান
দপ্তর সম্পাদক : একেএম জাহিদুর রহমান মল্লিক (জনি)
তথ্য ও পাঠাগার সম্পাদক : সাইফুল ইসলাম জুয়েল
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক : মো. শওকত আলী দিদার
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক : মোস্তাফিজুর রহমান টিটু
কার্যনির্বাহী সদস্য :
১. মোশাররফ হোসেন মিন্টু
২. আব্দুর রশিদ পিন্টু
৩. নুর আলাম
৪. এ কে এম আহসানুর রহমান মল্লিক রনি
৫. সাজ্জাদ হোসেন
৬. শাহীন আল আসাদ আলভি
৭. মিজানুর রহমান জুনিয়র
৮. মো. ইমাম হোসেন
৯. শহীদ জঙ্গি
১০. মো. সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু
এজেড/এএইচএস