বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আর্থিক বিষয়াদি ফিফা তদন্ত করেছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। গত বছর ১৪ এপ্রিল বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এরপরও তদন্ত অব্যাহত রেখেছিল ফিফার এথিকস কমিটির এডজুডিকেটরি চেম্বার।

ফিফার ইনভেস্টগরি চেম্বার সেই তদন্তের আলোকে গতকাল বাফুফের দুই স্টাফকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা, সোহাগকে আবার তিন বছর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। স্টাফদের অনিয়ম এবং আর্থিক কর্মকান্ডের সঠিক তদারকির অভাবে ১৩ লাখ টাকা (১০ হাজার সুইস ফ্রা) জরিমানার মুখে পড়েছেন ফেডারেশনের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। 

গতকাল বাফুফে সংক্রান্ত এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি প্রত্যেকের জন্য পৃথক পৃথক ফাইলও প্রকাশ করেছে ফিফা। সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের ৫২ পাতার ফিফা রিপোর্টে ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের নামও এসেছে। পাঁচ নম্বর পাতায় ২৬ নম্বর পয়েন্টে ফিফার ইনভেস্টগরী চেম্বার বাফুফের তুলনামূলক কোটেশন বিশ্লেষণ করে দেখেছে ভেন্ডর নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাফুফের চার জন সব সময় জড়িত ছিল। এই চারজন হলেন বাফুফের সাবেক প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।

বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা তাদের অধিভুক্ত সংস্থাকে অনুদান-আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। ফিফার সেই অর্থ নিদিষ্ট নিয়ম-নীতি অনুসারে ব্যয় করতে হয়। বিশেষ করে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সেই নীতি অনুসরণ বাধ্যতামূলকই। ফিফা বাফুফেকে এ নিয়ে অনেক দিন থেকে তাগিদ দিয়ে আসলেও বাফুফের সুনির্দিষ্ট ক্রয় নীতিমালা ছিল না। ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর প্রকিউরমেন্ট নীতি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন হলেও সেটি কার্যকর হয়েছে ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে। 

বাফুফে ক্রয় নীতি অনুযায়ী কোনো দ্রব্য/সেবা ১ লাখ টাকার অধিকমূল্য হলে সেই দ্রব্য/সেবা কিনতে তিনটি কোটেশন প্রয়োজন। দশ লাখ টাকা পর্যন্ত বাফুফে এই কোটেশন প্রক্রিয়ায় ক্রয় করতে পারবে। কোটেশনের মাধ্যমে ভেন্ডার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সোহাগ, আবু, সালামের সঙ্গে সালাউদ্দিনের নামও এসেছে ফিফা রিপোর্টে। দশ লাখ টাকার উর্ধ্বে কোনো কিছু ক্রয়/সেবার ক্ষেত্রে টেন্ডার আহবান করে ফেডারেশন। 

ফিফা সালাম মুর্শেদীর প্রতিবেদনে বাফুফের চেক এবং বেশ কিছু ডকুমেন্টসও প্রকাশ করেছে। সেখানে একটি ডকুমেন্টে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের স্বাক্ষরও দেখা গেছে। গত বছর সোহাগ নিষিদ্ধের ঘটনায় বাফুফে সভাপতির নাম আসেনি। এবার পাঁচটি পৃথক ফাইলের মধ্যে শুধু সালাম মুর্শেদীর ওপর ফিফা প্রতিবেদনে সালাউদ্দিনের প্রসঙ্গ এসেছে।

গতকাল প্রকাশিত পাঁচটি ফাইলেই ফিফা বাফুফের ক্রয় চাহিদা প্রক্রিয়া থেকে একেবারে পেমেন্ট চেক ইস্যু পর্যন্ত ধাপে ধাপে ছক আকারে প্রকাশ করেছে। ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন জড়িত না থাকলেও পেমেন্ট প্রদানে তার অনুমোদন আবশ্যক। বিশেষ করে কোনো দ্রব্য/জিনিষ বাংলাদেশি টাকায় দশ লাখ টাকার বেশি হলে সেটার অনুমোদনের এখতিয়ার কেবল সভাপতিরই। দশ লাখের নিচে প্রধান অর্থ কর্মকর্তা,সাধারণ সম্পাদক ও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান অনুমোদন করতে পারেন। বাফুফের চেকে স্বাক্ষর করার এখতিয়ার রয়েছে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ। এই তিন জনের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সালাম মুর্শেদী ও কাজী নাবিল আহমেদের স্বাক্ষরই বেশি। এই দুই জনের এক জন অনুপস্থিত থাকলে সালাউদ্দিন ক্ষেত্র বিশেষে চেকে স্বাক্ষর করেন।

গত আবু নাইম সোহাগের রিপোর্টে বল, বিমান টিকিট ক্রয় ও আরো দু’টি বিষয়ে অসঙ্গতি পেয়েছিল ফিফা। গতকাল প্রকাশিত সিদ্ধান্তে বাফুফে ভবনের মাঠে জিম, জুম সেট আপ, আভ্যন্তরীণ রুম ডেকোরেশনে অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে। বাফুফের একাংশের দাবি, ফেডারেশন কোনো জুম সেট আপই করেনি অথচ ফিফা তাদের অভিযুক্ত করেছে। বাফুফের আর্থিক বিভাগের সাবেক এক্সিকিউটিভ অনুপম সরকার। যিনি আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে ফিফার চিঠি পেয়েছিলেন। তারও বড় ধরনের শাস্তির অনুমান করেছিল ফুটবলসংশ্লিষ্ট অনেকেই আকস্মিকভাবে গতকাল প্রকাশিত পাচটি ফাইলেই নানা প্রসঙ্গে অনুপমের নাম থাকলেও ফিফার নিষেধাজ্ঞায় পড়েননি এই এক্সিকিউটিভ। বাফুফে তদন্ত কমিটি অবশ্য অনুপমের দায় খুজে পেয়েছিল। তদন্ত রিপোর্ট নির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই অবশ্য অনুপম বাফুফে ছেড়েছিলেন।

এজেড/এফআই