আগামী ২ জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যারিবিয়ান দ্বিপপুঞ্জে বসছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসর। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে বিশ্বসেরা হওয়ার লড়াইয়ে ইতোমধ্যেই জায়গা নিশ্চিত করেছে ২০ দল। এই মেগা আসরে অংশ নেওয়া দলগুলোর সম্ভাবনা নিয়ে ধারবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে ঢাকা পোস্ট। আজ প্রথম পর্বে থাকছে উগান্ডার বিশ্বকাপ স্কোয়াড নিয়ে কাটা-ছেঁড়া।

ক্রিকেটের বিশ্বায়নের লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো ২০ দল নিয়ে কোনো ইভেন্ট আয়োজন করছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন সিদ্ধান্তে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পূর্ণ সদস্যদের সঙ্গে বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার সুযোগ করে নিয়েছে ৮টি সহযোগী দেশ। এর আগে কোনো আইসিসি ইভেন্টে এতগুলো সহযোগী দেশ অংশ গ্রহণের সুযোগ পায়নি।

ক্রিকেটের বিশ্বায়নের বাতাসে এবার কেঁপেছে উগান্ডা। ফুটবল, রাগবি সেভেনস এবং নেটবল সেখানে অনেক আগে থেকেই ঘাঁটি গেড়েছে। এসবের ভিড়েও দেশটায় ব্যাট-বল হাতে ছুটছে তরুণরা সেটা ক্রিকেটের বিশ্বায়নের সাফল্য না বলে উপায় নেই। উগান্ডায় ক্রিকেটের বীজ বুনার খুব বেশি দিন হয়নি! ১৯ শতকের শেষের দিকে মিশনারিদের মাধ্যমে ক্রিকেটের আনা-গোনা শুরু হয় এখানে। ক্রিকেটের সেই বীজ শত বর্ষ পেরিয়ে চারাগাছে রূপ নিয়েছে। যেই গাছের যত্ন নিলে একটা সময় ওয়ানডে কিংবা টেস্ট ক্রিকেটেও পা পড়বে উগান্ডার!

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে উগান্ডার আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু হয়েছে বছর পাঁচেক আগে। ২০১৯ থেকে এ পর্যন্ত তারা ম্যাচ খেলেছে  ৯১টি। একশরও কম ম্যাচ খেলা এই দলটাই এবার জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বকাপে। তার জন্য অবশ্য বেশ কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে আফ্রিকার এই দেশটিকে। আফ্রিকান অঞ্চলের বাছাই পর্ব পেরিয়ে তবেই মূল পর্বের যোগ্যতা অর্জন করেছে তারা। এই পথে জিম্বাবুয়ের মতো দেশকে ছিটকে দিয়েছে উগান্ডা।

আফ্রিকান অঞ্চলের বাছাই পর্বে অংশ গ্রহণ করেছিল ৭টি দেশ। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে একে অপরের বিপক্ষে একটি করে ম্যাচ খেলে দলগুলো। রুয়ান্ডার বিপক্ষে ৯ উইকেটের বড় জয় দিয়ে আসর শুরু করে উগান্ডা। এরপর কেনিয়া, নাইজেরিয়া ও জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে টানা ৪ ম্যাচে জয় তুলে নেয় তারা। প্রথম ৪ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট পাওয়ায় বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা গাঢ় হয়। তবে পরের ম্যাচে নামিবিয়ার বিপক্ষে ৬ উইকেটের ব্যবধানে হেরে যায় তারা। সেই হারে সম্ভাবনার আকাশে কিছুটা মেঘ জমে! তবে ঘুরে দাঁড়াতেও সময় লাগেনি। শেষ ম্যাচে তানজানিয়াকে ৮ উইকেটে হারিয়ে শঙ্কার মেঘ সরিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট পায় উগান্ডা।

উগান্ডার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে আছেন অফ স্পিনার ফ্রাঙ্কো সুবুগা। ৪৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে প্রবীণতম সদস্য। অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের প্রধান্য দিয়ে দল গড়েছে উগান্ডা। ১৫ সদস্যের স্কোয়াডে ৩০ বছরের অধিক বয়সী ক্রিকেটারের সংখ্যা ৭ জন। ২০ বছরের কম বয়সী কোনো ক্রিকেটার দলে নেই। উগান্ডার সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে খেলবেন ২১ বছর বয়সী জুমা মিয়াগি।

বিশ্বকাপে উগান্ডার ‘মাইট্রোকন্ডিয়া’ হতে পারে স্পিন বিভাগ! স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার আলপেশ রামজানি এবং বাঁহাতি স্পিনার হেনরি সেনিওন্ডো ইতোমধ্যেই নিজেদের প্রামণ করেছেন। গত বছর ৩০ টি-টোয়েন্টিতে ৫৫ উইকেট শিকার করে ‘২০২৩ আইসিসি মেন্স টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার অব ইয়ার’ ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়েছিলেন রামজানি। তার সতীর্থ সেনিওন্ডো সমান সংখ্যক ম্যাচে পেয়েছিলেন ৪৯ উইকেট। ব্যাটিংয়ে দলটাকে ভরসা জোগাবেন রিয়াজত আলী শাহ এবং দিনেশ নাকরানি। দুজনেরই ব্যাটিং গড় ৩০ এর বেশি।

ফ্রাঙ্কো সুবুগা

 

এই স্কোয়াড নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট দলটার প্রধান কোচ অভয় শর্মা। তিনি বিশ্বকাপ স্কোয়াড নিয়ে বলেন, ‘বিগত ১২ মাসে ক্রিকেটে উগান্ডা দল ভালো পারফরম্যান্স করেছে। যদিও কিছু জায়গা রয়েছে, বিশেষ করে ফিল্ডিং, সেখানে আমাদের উন্নতি করতে হবে। বিগত সময়ে আমরা মাঠে কিছু সুযোগ হাতছাড়া করেছি। সেই সুযোগগুলো হাতছাড়া করার পরও আমরা বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছি। ভাবুন, আমরা যদি এই ভুলগুলো শুধরে নিতে পারি তাহলে আমরা কতটা ভালো পারফর্ম করতে পারি। মানসিক দৃঢ়তার সঙ্গে আমরা যেকোনো দিনে বিশ্বের সেরা দলগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি।’

২ জুন বিশ্বকাপের পর্দা উঠলেও উগান্ডা প্রথমবার মাঠে নামবে ৪ জুন আফগানিস্তানের বিপক্ষে। পরের ম্যাচ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬ জুন। ৯ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলবে তারা। গ্রুপ পর্বে তাদের শেষ ম্যাচ ১৫ জুন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। 

উগান্ডার বিশ্বকাপ স্কোয়াড: ব্রায়ান মাসাবা (অধিনায়ক), রিয়াজত আলি শাহ, কেনেথ ওয়াইসওয়া, দিনেশ নাকরানি, ফ্রাঙ্কো সুবুগা, রোনাক প্যাটেল, রজার মুসাকা, কোমমাস কিয়েউতা, বিলাল হাসুন, ফ্রেড আচেলাম, রবিনসন ওবুয়া, সাইমন সেসাজি, হেনরি সেনিওন্ডো, আলপেশ রামজানি এবং জুমা মিয়াজি। রিজার্ভ প্লেয়ার্স- রোনাল্ড লুটায়া এবং ইনোসেন্ট এমওয়েবাজ।

এইচজেএস