২০২৩ আইপিএল আসর থেকেই চলে আসছে ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার নিয়ম। যার অধীনে এক ব্যাটসম্যান কিংবা বোলার বাড়তি খেলানোর সুযোগ নিয়ে আসছে টুর্নামেন্টটির ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। আইপিএলে চার–ছক্কার ফুলঝুরি আগে থেকেই ফুটে আসছে, কিন্তু সাম্প্রতিক মৌসুমগুলোয় সেই সীমা ছড়িয়েছে অনেকদূর। যার পেছনে ইম্প্যাক্ট ক্রিকেটারের নিয়মকে দুষছেন অনেকে। রোহিত শর্মা থেকে শুরু করে মিচেল স্টার্ক পর্যন্ত বেশ কয়েকজন তারকা এর সমালোচনা করেছেন। 

বিশেষ করে চলতি আইপিএলে যাচ্ছেতাই অবস্থা দেখা যাচ্ছে বোলারদের। আর তাতে নিশ্চিতভাবেই ভূমিকা রাখছে ইম্প্যাক্ট ক্রিকেটারের নিয়ম, এর মাধ্যমে বাড়তি ক্রিকেটার খেলানোয় ব্যাটিং অর্ডার লম্বা হয়ে পড়ছে। ফলে ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ে বোলারদের নাস্তানাবুদ করছেন ব্যাটাররা। সবমিলিয়ে ভারতীয় টুর্নামেন্টটির চলতি আসরে অন্যতম আলোচনার কেন্দ্রে ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার নিয়মের পক্ষে–বিপক্ষে যুক্তি। যা নিয়ে এবার প্রকাশ্যে কথা বলেছেন বিসিসিআই সচিব জয় শাহ। ভবিষ্যতে এই নিয়ম না–ও থাকতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন!

বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনে বিভিন্ন দল ও ক্রিকেটারদের সঙ্গেও কথা বলার আশ্বাস দিয়ে জয় শাহ বলছেন, ‘ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার নিয়মটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছিল। ধীরে ধীরে আমরা সেটি বাস্তবায়ন করেছি। এই নিয়মের বড় সুবিধা হচ্ছে– আইপিএলে প্রতি ম্যাচে দু’জন ভারতীয় বেশি খেলার সুযোগ পাচ্ছে। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিষয়টি নিয়ে আমরা বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি, ক্রিকেটার, ব্রডকাস্টারদের সঙ্গে কথা বলব। এটি চিরস্থায়ী কোনো নিয়ম নয়, তবে এটাও বলছি না যে এটি এভাবেই চলবে।’

আইপিএলের পাশাপাশি ভারতের আরেকটি ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট সৈয়দ মুস্তাক আলিতেও ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারের নিয়ম রয়েছে। আগামী দিনে আইপিএলে এই নিয়ম থাকবে কি না তা নিয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছু জানাননি জয় শাহ। নিয়মটি নিয়ে এখন পর্যন্ত কারও অভিযোগ পাননি বলেও মন্তব্য করেন ভারতীয় বোর্ডের অন্যতম এই শীর্ষ কর্মকর্তা, ‘দেখা যাক এটি (ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার নিয়ম) খেলাকে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে কি না! এমনকি কোনো ক্রিকেটার যদি মনে করেন এটি সঠিক নয়, তাহলে তার সঙ্গেও আমরা কথা বলব। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ আমাকে এ নিয়ে কিছু জানায়নি। তাই এ নিয়ে বিশ্বকাপের (টি-টোয়েন্টি) পর সিদ্ধান্ত হবে।’ 

ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার নিয়ম শুধু আইপিএলের খেলার বাঁক বদলেই ভূমিকা রাখছে না, বিষয়টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। ১১ জনের বাইরে কাউকে খেলানোর অনুমতি দেয় না আইসিসি কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ম প্রণয়নকারী সংস্থা। এমনকি কোনো ক্রিকেটার ইনজুরিতে পড়লে তার পরিবর্তে অন্য কাউকে খেলানোর (কনকাশন সাব) বিষয়েও ম্যাচ অফিসিয়ালদের অনুমতির প্রয়োজন হয়। আর এই বিষয়টিই মনে করিয়ে দিয়েছেন রোহিত, ভারতীয় এই অধিনায়ক কিছুতেই ‘১২’ জন ক্রিকেটার খেলানোর পক্ষে না।

বিসিসিআই সচিব জয় শাহ

আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে যৌথভাবে সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপা জিতিয়েছেন রোহিত। দলটির সাবেক এই অধিনায়ক চলতি আইপিএলের মাঝেই এক পডকাস্ট অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘ইমপ্যাক্ট–সাব নিয়মের আমি ভক্ত নই। এটা অলরাউন্ডারদের পেছনে টেনে ধরবে, আর দিন শেষে ক্রিকেট ১১ জনের খেলা, ১২ জনের নয়। আশপাশের মানুষের জন্য বিনোদনমূলক করার জন্য আপনি খেলা থেকে অনেক কিছু নিয়ে নিচ্ছেন।’

রোহিতের এমন মন্তব্যের পর একই অনুষ্ঠানে সাবেক অস্ট্রেলিয়ান তারকা অ্যাডাম গিলক্রিস্টও নিয়মটি প্রসঙ্গে নিজের মত দেন, ‘এটা বিনোদন যোগ করেছে। এটা মূলত দর্শকদের জন্যই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট সফল কারণ, এটা ক্রিকেটের মূল বিষয়ের সঙ্গে আপস করেনি। এটা ১১ বনাম ১১ জনের খেলা, একই মাঠ, ফিল্ড রেস্ট্রিকশনও সমান, অর্থাৎ কোনো চমকের প্রয়োজন হয়নি। সম্ভবত এটা (ইমপ্যাক্ট নিয়ম) ভবিষ্যতের জন্য নয়।’

এ নিয়ম নিয়ে এর আগে অসন্তুষ্টি দেখিয়েছেন আরেক অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ও দিল্লি ক্যাপিটালসের কোচ রিকি পন্টিং। ইমপ্যাক্ট–সাব নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় দলগুলো যেভাবে ব্যাটিং করছে, এর পেছনে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নিয়মের বড় প্রভাব আছে। গতকাল (১৫ এপ্রিল) দেখেছেন কীভাবে ট্রাভিস হেড ব্যাটিং করেছে। পরের ব্যাটসম্যানদের ওপর আত্মবিশ্বাস না থাকলে এভাবে ব্যাটিং করা যায় না।’

এ ছাড়া নিয়মটি নিয়ে এখন পর্যন্ত নাখোশ মন্তব্য করেছেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ও চেন্নাইয়ের ব্যাটিং কোচ মাইক হাসি, কলকাতার অজি পেসার মিচেল স্টার্ক, দিল্লির ভারতীয় তারকা অক্ষর প্যাটেল ও মুকেশ কুমাররা।

এএইচএস