চলমান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে রান উৎসব চলছে। এখন পর্যন্ত আড়াই শ’ রানের কোটা ছুঁয়েছে ৭ বার। একটা টি-টোয়েন্টি আসরের মাঝপথে এমন পরিসংখ্যান অবাক করার মতোই। আগে ব্যাট করা দল বড় স্কোর গড়েও নিশ্চিন্ত থাকতে পারছে না। ব্যাটারদের এমন তাণ্ডবের মধ্যে যেন দিশেহারা নাবিক বোলাররা! রীতিমতো অথৈ সাগরেই পড়েছেন তারা। মিচেল স্টার্ক, এনরিখ নর্কিয়া, কাগিসো রাবাদা কিংবা রশিদ খানদের মতো তারকারাও পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতি দেখে কারও কারও কাছে ক্রিকেটকে এখন বেসবল মনে হচ্ছে।

ক্রিকেটের চিরচেনা সেই ব্যাটে-বলের লড়াই দেখা যাচ্ছে না। লড়াইটা হচ্ছে যেন দুই দলের ব্যাটারদের। এমন পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’–এ সম্প্রতি তিনি লিখেছেন, ‘অনুগ্রহ করে কেউ “বোলারদের বাঁচান”।’ 

ছোট মাঠ, আধুনিক ব্যাট, আগ্রাসী মানসিকতা, গরম আবহাওয়া— সব কিছু মেনে নিয়েও বোলারদের দুর্দশা দেখে পিচ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞেরা। একাংশ ক্ষুব্ধ ক্রিকেটের মূল আকর্ষণ নষ্ট হওয়ায়। স্পিনাররা সামান্য কিছু সাহায্য পেলেও মাঠে অসহায় দেখাচ্ছে পেসারদের। ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশ মনে করছেন, এমন হলে অদূর ভবিষ্যতে আইপিএল খেলার আগ্রহ হারাবেন বোলাররা।

কেন এমন পিচ তৈরি করা হলো বিশ্বের সবচেয়ে দামি ক্রিকেট প্রতিযোগিতায়? তার ওপর যে প্রতিযোগিতা বিসিসিআইয়ের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস? ভারতীয় গণমাধ্যমে এক পিচ প্রস্তুতকারী বলছেন, ‘এবার ভারতে গরম পড়েছে বেশি। এর ফলে দেশটির পিচগুলোতে আর্দ্রতার পরিমাণ অনেক কম। কোথাও কোথাও নেই বললেই চলে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটা প্রভাব ফেলছে। আকাশে মেঘের পরিমাণের ওপর কিছুটা নির্ভর করে পিচের চরিত্র। মেঘও প্রায় নেই কোথাও। বৃষ্টি হচ্ছে না। দিন এবং রাতের তাপমাত্রার তেমন পার্থক্য দেখা যাচ্ছে না। অন্যবারের থেকে এবারের পিচগুলো আলাদা হওয়ার প্রধান কারণ আবহাওয়া।’

শুধুই কি তাই? প্রকৃতিকে কাঠগড়ায় তুলে দায় এড়াতে পারে বিসিসিআই? পিচ প্রস্তুতকারক বলছেন, ‘পেসাররা বেশি সমস্যায় পড়ছে। স্পিনাররা অল্প কিছু সাহায্য পেলেও ফাস্ট বোলারদের জন্য সত্যিই এবারের পিচগুলোয় কিছু নেই। ব্যাটাররা সহজে তাদের বিরুদ্ধে রান তুলতে পারছে। বল খুব ভালো ব্যাটে আসছে। তবে একটু ধীর গতির উইকেটে কিছুটা সাহায্য পাচ্ছে পেসাররা।’

সমালোচনা হলেও পিচ প্রস্তুতকারীরা মূলত দুষছেন এবারের গরমকে। তাদের দাবি, গরম এবং শুষ্ক আবহাওয়াতেই বদলে যাচ্ছে পিচের চরিত্র। সুবিধা হচ্ছে ব্যাটারদের। সমস্যায় পড়ছেন বোলারেরা। রানের পাহাড়ে উঠছে আইপিএলে।

এবারের আইপিএলে ৭০০-র বেশি ছক্কা হয়েছে এখনও পর্যন্ত। ওভার প্রতি গড়ে প্রায় ১০ রান করে উঠছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিচ প্রস্তুতকারী বলেছেন, ‘আমরা কখনও চাই না খেলা একপেশে হোক। আমরা যারা পিচ প্রস্তুত করি, তারা এই পরিস্থিতিতেও স্পিন সহায়ক ২২ গজ তৈরি করতে পারি। তাহলেই আর এত রান উঠবে না।’ তাহলে কেন বোলাররাও সাহায্য পেতে পারে এমন পিচ দেওয়া হচ্ছে না আইপিএলে? তিনি বলছেন, ‘প্রথম দিকে কয়েকটি মাঠের পিচে হালকা ঘাস রাখা হয়েছিল। তাতে পিচের আর্দ্রতা কিছুটা বজায় রাখা যায়। পেসারদের সুবিধা হয়। ব্যাটারদের পক্ষেও রান করা কঠিন হয় কিছুটা। আমরা সব সময় চাই ব্যাট-বলে ভালো লড়াই হোক। আসলে আবহাওয়ার জন্যই এবার এমন হচ্ছে।’

প্রশ্ন উঠেছে ইডেনের বাইশগজ নিয়েও। সিএবির পিচ প্রস্তুতকারী সুজন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘ইডেনে তো সুনীল নারাইন বল স্পিন করাচ্ছে। ওর তো সমস্যা হচ্ছে না। ইডেনে শুধু ব্যাটাররাই সুবিধা পাচ্ছে এমন নয়। এখন যেসব ব্যাট ব্যবহার করা হয়, সেগুলোতে বড় শট মারা সহজ। তাই ছয়ের সংখ্যা বেড়েছে। আমরা সব সময় ভালো পিচ তৈরির চেষ্টা করি। ব্যাট-বলের লড়াই হবে এমন পিচ তৈরির নির্দেশই দেয় বিসিসিআই। ইডেনের পিচ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। সবার জন্যই কিছু না কিছু আছে।’

সমালোচনা হলেও পিচ প্রস্তুতকারীরা মূলত দুষছেন এবারের গরমকে। তাদের দাবি, গরম এবং শুষ্ক আবহাওয়াতেই বদলে যাচ্ছে পিচের চরিত্র। সুবিধা হচ্ছে ব্যাটারদের। সমস্যায় পড়ছেন বোলারেরা। রানের পাহাড়ে উঠছে আইপিএলে। 

এফআই