জিম্বাবুয়ে সিরিজে পূর্ণ শক্তির দল চাই : লিপু
মাস খানেক আগেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। তার মেয়াদকালে ইতোমধ্যেই একটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ শেষ করেছে টাইগাররা। ঘরের মাঠের এই পূর্ণাঙ্গ সিরিজে ওয়ানডে ছাড়া বাকি দুই ফরম্যাটে আশানুরূপ পারফর্ম করতে পারেনি নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
সদ্য সমাপ্ত শ্রীলঙ্কা সিরিজে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের চোটের অবস্থা, জিম্বাবুয়ে সিরিজ নিয়ে পরিকল্পনা ও তামিম ইকবালের ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে ঢাকাপোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন লিপু। বিসিবির প্রধান নির্বাচকের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতার চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
বিজ্ঞাপন
প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য কতজন ক্রিকেটারকে ভাবনায় রেখেছেন?
লিপু: এসব মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়। কারণ অনেক কিছু থাকে সেখানে। গতকাল ভিসা প্রসেসিং গেল, নিশ্চয়ই আমরা একটা ডেড লাইন পাবো। ফিটনেস টেস্ট হবে, তারপর আসবে দল গঠনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া। বোর্ডের চাহিদামত তখন আমরা দল গঠনের কাজ শুরু করবো। যদি সুযোগ থাকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ পর্যবেক্ষণ করে দল গঠন করার তাহলে সেটাই করবো।
আরও পড়ুন
প্রশ্ন: সাইফউদ্দিনকে কবে থেকে পাওয়া যাবে?
লিপু: সাইফউদ্দিন একজন ভালো পারফর্মার। সে ইনজুরিতে ছিল, যা তাকে দল থেকে ছিটকে দিয়েছিল। এখনও সে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছে মেডিকেল টিমের। তাকে ছক বেঁধে দেওয়া হয়েছে কতটুকু কী করতে পারবে। আরো কিছু ম্যাচ তাকে দেখার সুযোগ পাবো। আমার মনে হয়, বিশ্বকাপের আগে একটা যাচাই-বাছাই করবে মেডিকেল টিম।সাইফউদ্দিনের দিকে অবশ্যই আমাদের নজর থাকবে, সে কতুটুক সুস্থ থাকে সেদিকে লক্ষ্য থাকবে। বিপিএলেও ভালো করেছে সে।
প্রশ্ন: তামিম ইকবালের সঙ্গে দলে ফেরা নিয়ে আপনার কোনো কথা হয়েছে?
লিপু: আমরা গণ্ডির মধ্যে রয়েছি। যেকোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গেই আমাদের হাই-হ্যালো হয়। তামিমকে কে না দলে চায়? সবাই তাকে দলে চায়। তার সঙ্গে বোর্ড সভাপতি কথা বলবেন। গতকাল জালাল ভাইও সেটি বলেছেন। তাদের সঙ্গে সিরাজ ভাইও কথা বলবেন। বোর্ড সভাপতি সরাসরি ব্যাপারটা দেখছেন। আমরা কথা বলতেই পারি একজন ক্রিকেট খেলোয়াড়ের সঙ্গে কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে কোনো কিছু করার ওই জায়গায় আমরা নেই।
প্রশ্ন: জিম্বাবুয়ে সিরিজে মুস্তাফিজকে নিয়ে পরিকল্পনা কী?
লিপু: তার এনওসি দিয়েছে বিসিবি। সেটা ৩০ তারিখ পর্যন্ত দেওয়া আছে। এ ব্যাপারে কোনো পরিবর্তন দরকার হলে বিসিবি করবে, এটা আমাদের ইস্যু না। বোর্ড যদি বাড়াতে চায় তাহলে বাড়াবে, আমরা তো শরিফুলকে ছাড়া টেস্ট খেললাম। তাকে বিশ্রাম দিয়েছি যাতে বিশ্বকাপে তাকে পাওয়া যায়। তো কোনো কারণে যদি মুস্তাফিজের এনওসির মেয়াদ বাড়াতে হয় তাহলে সেটা বোর্ড দেখবে, আমাদের কিছু করার নেই। তবে আমরা চাই (জিম্বাবুয়ে সিরিজে) মূল দল খেলুক। এটা আমাদের (নির্বাচক প্যানেল) তরফ থেকে চাই। নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে বলেই মুস্তাফিজকে ৩০ তারিখ অবধি এনওসি দিয়েছে বোর্ড।
প্রশ্ন: টেস্টে উন্নতি করতে এখনই কোন কাজগুলো করা জরুরী?
লিপু: ক্রিকেটারদের পাশে থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন কোচ। কোন কোন জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো বের করছেন তারা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটি হচ্ছে না, সে সময় লাল বলের ক্রিকেটের ভুলগুলো সংশোধনের জন্য যথেষ্ট অনুশীলনের সুযোগ পাবে ক্রিকেটাররা। পরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ রয়েছে। প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটের কোচ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবদান রাখতে হবে। টিম ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে যারা আছে সবাইকেই কাজ করতে হবে।
প্রশ্ন: এক বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরলেন সাকিব। তার পারফরম্যান্সে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
লিপু: সাকিবকে নতুন করে দেখার কিছু নেই। অনেকদিন সে টেস্টের বাইরে ছিল। তার উপস্থিতি দলকে অনুপ্রাণিত করেছে। হয়তো তার সেরাটা আসেনি, তাকেও সময় দিতে হবে। অনেক দিন বাইরে ছিল সে। লিটন ছন্দে ছিল না, মুশফিক দলে নেই, সাকিব জাতীয় দলের জন্য ছাতার মতো। ছাতার নিচে থেকে তরুণদের অনেক কিছু শেখার আছে। সাকিব জানে তার সুনাম কিভাবে রাখতে হবে। এসব কারণেই প্রথম টেস্টে সে খেলেনি, আমার মনে হয়। যথেষ্ট অনুশীলন করে তারপর দ্বিতীয় টেস্টে সে ফিরেছে।
প্রশ্ন: টেস্টে পেসারদের পারফরম্যান্স কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
লিপু: বোলিং বিভাগ খুব ভালো করেছে। নাহিদ রানা বা হাসান মাহমুদ তারা যথেষ্ট ভালো বল করেছে। তারা বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করেছিল সেগুলো যদি কাজে লাগানো যেত তাহলে হয়তো শ্রীলঙ্কা বিশাল রান করতে পারতো না। অভিজ্ঞদের মধ্যে খালেদ ভালো করেছে। হয়তো স্পিনারদের কাছ থেকে আরেকটু আশা ছিল সেটা হয়নি। মিরাজ সিলেট টেস্টে ভালো বল করেছে। চট্টগ্রামে সাকিব অবদান রেখেছে। মিরাজ-তাইজুল থেকে আশা ছিল সেটা হয়নি।
প্রশ্ন: জয়-দিপুরা ব্যর্থ, তাদের নিয়ে কী ভাবছেন?
লিপু: আমার মনে হয়, অভিজ্ঞতার ঘাটতি তাদের কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছে। সিলেট টেস্টে তারা যে ভুলগুলো করেছিল চট্টগ্রাম টেস্টে আমার আশা ছিল আরো ভালো করবে। জয়, দিপু বলেন বা জাকির তাদের কাছে আশা ছিল বেশি। বিশেষ করে ওপেনাররা খেলতে পারেনি, আক্রমণাত্বক খেলেছে তারা। আপনি যখন টেস্ট ম্যাচ খেলবেন তখন আপনার টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডের আগ্রাসন ব্যাটিং করলে হবে না। আপনাকে ক্যালকুলেটিভ রিস্ক নিয়েও খেলা যাবে না। তাদের টেস্টের জানালা খুলে খেলতে হবে। তাদেরকে আরেকটু সুযোগ দিতে হবে, যত দ্রুত শিখতে পারবে তত ভালো। চট্টগ্রামে অন্তত একজনের বড় ইনিংস খেলা উচতি ছিল। ব্যাটারদের যেখানে দুর্বলতা সেই জায়গায় রিপু করতে হবে। তাদের ফোন বা ল্যাপটপে তাদের ভুলগুলো সব পাঠিয়ে দেয়া হয়, ম্যানেজমেন্টের সাথে খেলোয়াড়দেরও সচেতন থাকতে হবে। যদি কোনো কিছুর ঘাটতি থাকে সেটা দেওয়া হবে।
প্রশ্ন: অধিনায়ক শান্তর প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিল, কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
লিপু: শান্তকে অবশ্যই তিন ফরমাটের জন্য চৌকস হতে সময় দিতে হবে। বোর্ড তার প্রতি আস্থা রেখেছে, তাকে খেলাটা বুঝতে হবে, প্রতিপক্ষকে পড়তে হবে। দিনশেষে খেলার ফলাফল বলে দেবে আপনি কতটা সফল হতে পারলেন। সে জন্য পুরো দলের পারফর্ম করা দরকার। ফিল্ডার, বোলার, ব্যাটাররা যদি সাপোর্ট না করে তাহলে অধিনায়ক একা দলকে জেতাতে পারবে না। তবে আজকালকের দিনে অধিনায়ককে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হয়, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার ফর্মে ফেরাটা এবং ধারাবাহিক হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।
এসএইচ/এইচজেএস