টেস্ট ক্রিকেটে গেল বছরের শেষটা রাঙিয়েছিল বাংলাদেশ দল। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নাজমুল হোসেন শান্তরা বছরের শেষ টেস্ট ম্যাচটি জিতেছিল। তবে চলতি বছরের শুরুটা মোটেও সুখকর হয়নি টাইগারদের।

ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা দুই টেস্টে শোচনীয় হার দেখল বাংলাদেশ। চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের কারণে প্রথম টেস্টে ৩২৮ রান এবং দ্বিতীয় টেস্টে পরাজয় ১৯২ রানে।

এমন হার দেখে মন খারাপ বিসিবি পরিচালক ও সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানের। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানিয়েছেন, ‘অবশ্যই খারাপ লেগেছে, এভাবে হারব তো আশা ছিল না। ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব নিয়ে খেলা উচিৎ ছিল। কিছু আউট ছিল অনেকটা টেস্টের সঙ্গে মানানসই না। অথচ টেস্টে এরা ম্যাচিউরড, এখন তো তাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে।’

ব্যাটিংটা ভালো না হওয়ার পাশাপাশি ক্যাচ মিস ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে বলে দাবি আকরামের, ‘ব্যাটিংটা পছন্দ হয়নি, সঙ্গে ফিল্ডিংও। ওরা জীবন পেয়ে সেঞ্চুরি করেছে, তাই ফিল্ডিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন টেস্টেও খুব ভালো ফিল্ডিং করতে হয়, জিততে হলে। হোমে খেলেছি, ভাবছিলাম সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবে, ওরা সেটা পারেনি।’

২০০০ সাল থেকে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ দল। সেই টেস্ট দলের সদস্য ছিলেন আকরাম খান। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ কতটা এগিয়েছে। জবাবে আক্ষেপ জানিয়ে সাবেক এই টাইগার অধিনায়ক বলেন, ‘২৩ বছর আগে (২০০০ সালে) বাংলাদেশ যখন প্রথম খেলেছে তার চেয়ে এখন কিন্তু কিছু ভালো ক্রিকেটার এসেছে। কিন্তু একটা দল হিসেবে আমরা ভালো করতে পারছি না। দুয়েকটি সময়ে ভালো হয়েছে, তবে ধারাবাহিকতা নেই।’

বিসিবি পরিচালক ও সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান

আকরামের বক্তব্য, দায়িত্ব নিতে হবে ক্রিকেটারদেরই, ‘এটা আসলে মাঠে যারা খেলে দায়িত্বটা পুরোপুরি তাদের। ক্রিকেটাররা যখন সময় পায়, তখনই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলে। তবে প্রত্যেকটা ক্রিকেটারের উচিৎ সিরিয়াসলি খেলা। খেলোয়াড়দের খেলা মানে মাঠে তারা অনেক কিছু শিখতে পারে। মাঠে ভালো সময়ে দায়িত্ব নিতে পারছে না, তবুও পজিটিভ থাকা উচিৎ।’

নতুন করে টাইগারদের তিন ফরম্যাটের দায়িত্ব নিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সবশেষ দুই টেস্টে ব্যাট হাতে ৩২ রান করেছেন তিনি। তবে এখনই তাকে জাজ করার সময় হয়নি বলে মনে করেন আকরাম, ‘আপস এন্ড ডাউন তো থাকেই। একজন অধিনায়ক হিসেবে তাকে জাজ করা কঠিন খুব আর্লি। আরও কিছুদিন যাক। আশা করছি সে ভালো করবে ইনশাআল্লাহ।’

এদিকে বাংলাদেশ দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট জানালেন, টেস্ট ক্রিকেটের সংস্কৃতিতে ঢুকতে পারেনি টাইগাররা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘হার তো হতেই পারে, অস্ট্রেলিয়াও কিন্তু বড় ব্যবধানে হারে। খেলার মধ্যে জয়-পরাজয় থাকবেই। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রক্রিয়াটা কেমন, ধারাবাহিকভাবে কেমন পারফর্ম করছেন। এখন অস্ট্রেলিয়া যদি ইনিংস ব্যবধানে হারে তাহলে কিন্তু অজিদের খারাপ দল বলতে পারবেন না। জানেন যে তারা ক্যামব্যাক করবে। আমাদের এই জিনিসটাই তৈরি হয়নি। আমরা এখনও টেস্ট ক্রিকেটের কালচারে অনেক পিছিয়ে আছি।’

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ কতটা এগিয়েছে, এমন প্রশ্নে আকরাম খানের জবাব, ‘২৩ বছর আগে (২০০০ সালে) বাংলাদেশ যখন প্রথম খেলেছে তার চেয়ে এখন কিন্তু কিছু ভালো ক্রিকেটার এসেছে। কিন্তু একটা দল হিসেবে আমরা ভালো করতে পারছি না। দুয়েক সময় ভালো হয়েছে, তবে ধারাবাহিকতা নেই।’

পাইলটের মতে শ্রীলঙ্কার এই দলের সঙ্গে আরও ভালো করা উচিৎ ছিল শান্ত-সাকিবদের, ‘অনেক টিমের এমন হতে পারে, তারা আবার ব্যাক করে। বর্তমান ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কা যে দল তাদের সঙ্গে এমন পরাজয় ভালো না। তারা কিন্তু ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দল না। এই দলের সঙ্গে আরও ভালো খেলা উচিৎ ছিল।’

সাবেক টাইগার অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট

এমন ব্যর্থতার পর মুমিনুল-লিটনকে নিয়ে প্রশ্ন তুললেন পাইলট, ‘এখন দুইটা জিনিস বলব, প্রথমত খেলোয়াড়দের তো মাঠে পারফর্ম করতে হবে। মুমিনুল দুইটা ফিফটি করছে, তার মতো ক্রিকেটারের কাছে দুইটা ফিফটি কি যথেষ্ট? তার আরও রান করা উচিৎ ছিল, প্রয়োজন ছিল ১৫০-২০০ করা। লিটন ৪০ (মূলত ৩৮) করছে, তাহলে ১৪০ কেন করতে পারবে না কেন। আমাদের শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ১-১ ব্যবধান বা ড্র করা উচিৎ ছিল। শ্রীলঙ্কা দলও কিন্তু নতুন সেট-আপ। তার ওপর এটা আমাদের কন্ডিশন, খেলোয়াড়রাও খেলার মধ্যে ছিল।’

বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিসিবির কাছে টেস্টে ভালো করার জন্য প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজনের অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কোন সিরিজ খেলতে যাওয়ার আগে সেখানে যদি ‘এ’ দল পাঠাতে পারি তাহলে সবচেয়ে কার্যকরী হবে। যারা শুধু টেস্ট খেলছে বা যারা এক-দুটি সংস্করণ খেলে, ওরা যদি আগে গিয়ে এক-দুটি ম্যাচ খেলতে পারে, তাহলে কিন্তু প্রস্তুতিটা খুব ভালো হবে। ওই উইকেট ও কন্ডিশন সম্পর্কে ধারণাও হবে। যারা তিন সংস্করণে খেলে তাদের জন্য কঠিন।’

‘হ্যাঁ, তাদের ওই নেট অনুশীলনের মাধ্যমেই মানিয়ে নিতে হবে। এই সিরিজটা যেমন খেললাম দুই দিনের বিরতিতে। যারা সাদা বলের ক্রিকেট খেলছে, তাদের জন্য এটা কঠিন। তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হয়। যারা শুধু টেস্ট খেলছে, তারা যদি যাদের সঙ্গে খেলব সে দেশে আগে ‘এ’ দল পাঠাতে পারি, ঘরে খেলি বা ঘরের বাইরে, তাহলে প্রস্তুতি আরেকটু উন্নতি হবে’, আরও যোগ করেন শান্ত।

উল্লেখ্য, লঙ্কানদের বিপক্ষে দুই ম্যাচের এই টেস্ট সিরিজে চার ইনিংস ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে কেবল চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে তারা ২০০ পেরোতে পেরেছে। এর আগে সিলেট টেস্টে ১৮৮ এবং ১৮২ রানে অলআউট হয়েছিল শান্তর দল। ফলে ৩২৮ রানের হারে তাদের বাজে ব্যাটিংয়ের খেসারতও দিতে হয়েছে। একই দশা হয়েছে চট্টগ্রামেও। প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ৫৩১ রানপাহাড় মাথায় নিয়ে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে তুলতে পারে মাত্র ১৭৮, পরের ইনিংসে ৫১১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় স্বাগতিকরা ৩১৮ রান করতে পেরেছে।

এসএইচ/এএইচএস