ভাইয়ের ইন্টারভিউ নিলেন বোন, সাংবাদিক বনে গেলেন ভাইও
হবিগঞ্জের মাঠে একসময় জাকের আলি অনিকের পরিচয় ছিল ‘অপুর ভাই অনিক’। বড় ভাই শাকের আলী অপু বিভাগীয় পর্যায়ে ক্রিকেট খেলেছেন। পরিচিত ছিলেন হবিগঞ্জ নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ‘শাকিলা ববির ভাই’ হিসেবেও। ক্রিকেটের পথচলা শেষে এখন পুরোদস্তুর সাংবাদিকতা করছেন তিনি। তরুণ এই ব্যাটারের আরেকটি পরিচয় জাতীয় শুটার ‘নাফিসা তাবাসসুমের স্বামী’। আর তার বাবা ছিলেন আর্মিতে, খেলেছেন বাস্কেটবলসহ সব ধরনের খেলাই। তবে সব পরিচয় ছাপিয়ে জাকের আলির এখন বড় পরিচয় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের গর্বিত সদস্য তিনি।
সদ্য সমাপ্ত বিপিএলেই নজর কেড়েছিলেন জাকের আলি অনিক। ১৪ ম্যাচ খেললেও ব্যাটিং পেয়েছেন ১০ ইনিংসে। টেল–এন্ডারে ব্যাট করেও তার ইনিংস দলের জন্য কার্যকরী ছিল। ১০ ইনিংসে ৯৯.৫ গড় ও ১৪১.১৩ স্ট্রাইকরেটে ১৯৯ রান করেছেন জাকের। বিপিএলে ভালো খেলেই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে যান। অবশ্য চলমান শ্রীলঙ্কা সিরিজে তার অন্তর্ভুক্তিটাও কম নাটকীয় ছিল না। শুরুতে দলে ছিলেন না তরুণ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। পরে আলিসের বদলি হয়ে সিরিজ শুরুর আগমুহূর্তে জাতীয় দলের দরজা খুলে যায়। আর প্রথম ম্যাচে একাদশে সুযোগ পেয়েই করেন বাজিমাত। রেকর্ড ছয় ছক্কার মারে ৩৪ বলে ৬৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে সামর্থ্যের জানান দেন সিলেটের এই ঘরের ছেলে।
বিজ্ঞাপন
সিলেটে ঘরের মাঠে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নপূরণ হয়েছে জাকের আলির। অবশ্য গেল বছরই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন যদিও, তবে সেগুলো ছিল এশিয়ান গেমসে। এবার মূল দলের একাদশে সুযোগ পেলেন। ভাইয়ের মতো স্বপ্নপূরণ হয়েছে বোন শাকিলা ববিরও। আজকের জাকেরের পেছনে এই বোনের অগ্রণী ভূমিকার কথা গেল কদিনে মিডিয়ার কল্যাণে জেনে গেছে সবাই। সিলেটে প্রথম ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে প্রশ্নও করেছিলেন ববি। তবে এবার আরও বড় পরিসরে দুজন মুখোমুখি হলেন। সেটি বিসিবির সৌজন্যে। বোনের কাছে সাক্ষাৎকার দিলেন ভাই। শেষদিকে বোনের হাত থেকে বুম নিয়ে নিজেও বনে গেলেন কয়েক মুহূর্তের সাংবাদিক!
চলুন জেনে নেওয়া যাক ভাই-বোনের কথোপকথন
শাকিলা ববি : প্রথমেই জানতে চাই, ন্যাশনাল টিমে আসলেন, কেমন লাগছে?
জাকের আলি : আলহামদুলিল্লাহ। ফিলিংসটাতো অনেক ভালো। সবারই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলের হয়ে খেলার। ছোটোবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল জাতীয় দলে খেলবো, ম্যাচ জেতাবো। সবকিছু মিলিয়ে ভালোই লাগছে।
শাকিলা ববি: ন্যাশনাল টিমের কন্ডিশনটা আপনার কাছে প্রথম, যেহেতু মাত্র তিনটা ম্যাচ (মূল দলে দুই ম্যাচ খেলেছেন)খেলেছেন। দলে আপনার মানিয়ে নিতে কেমন লাগছে?
জাকের আলি : টিমের পরিবেশটা আমার খুব ভালো লেগেছে। বিশেষ করে প্রথম দিনে সবাই আমাকে যেভাবে স্বাগত জানিয়েছে, এটা আমার কাছে খুব স্পেশাল ছিল। আমার মনে হচ্ছিল, আমি স্পেশাল কেউ এসেছি, সবাই আমাকে যেভাবে ড্রেসিংরুমে বরণ করে নিয়েছে। আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।
শাকিলা ববি: এবার একটু পারিবারিক প্রসঙ্গে আসি। আপনার বেড়ে ওঠার পেছনে আপনার পরিবারের অনেক ভূমিকা আছে। আপনার বাবা নেই (মারা গেছে)। উনার স্বপ্ন ছিল আপনি জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন, আর উনি মাঠে বসে থাকবেন। এখন উনি নেই, আপনি জাতীয় দলে। এ বিষয়টা কিভাবে দেখছেন?
আবেগী প্রশ্নে নিজেকে সামলে নিয়ে জাকের বলেন, আসলে সবার ভূমিকা ছিল। বাবার ছিল, ভাইয়ের ছিল এবং আপনারও ছিল (হাসি)। আপনি অনেক কষ্ট করেছেন, আমাকে প্র্যাকটিচে নিয়ে গিয়েছেন। কারও ভূমিকা বাদ দেওয়ার মতো উপায় নেই। সবারই স্বপ্ন ছিল আমাকে এই জায়গায় দেখা। আমার দায়িত্ব এখন কিভাবে সামনের দিকে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। আমার মনে হয় কাজটা আরও বেড়েছে।
শাকিলা ববি : হবিগঞ্জের মানুষ আপনার নামে অনেক ক্রেজ। আপনার জন্য অনেক দোয়াও আছে তাদের।
জাকের আলি : হবিগঞ্জের সবাই আমার জন্য দোয়া করতো। সবাই চাইতো আমি যেন জাতীয় দলে খেলি। যখনই বাড়ি যেতাম, সবাই বলতো তুই কবে খেলবি। আমি সবসময়ই বলতাম, যখন সময় হবে খেলবো ইনশাআল্লাহ।
এবার আমি একটা প্রশ্ন করি? আমাকে ভাই হিসেবে খেলতে দেখে আপনার কেমন লাগছে?
শাকিলা ববি : এই অনুভূতি আসলেই ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। সেই ছোটোবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল। এটা অনেক ভালো লাগার। এটা আপনিও ভালো বুঝবেন। যখন মাঠে খেলছিলেন, প্রেসবক্সে বসে আমার চোখ দিয়ে পানি আসছিল, কান্না করছিলাম। বাসার সবাইও আপনাকে দেখে কান্না করছিল।
সবশেষে বোনকে আলিঙ্গন করে সাক্ষাৎকার পর্ব শেষ করেন জাকের আলি অনিক।
এফআই