‘পদক জয়ের মতোই আনন্দ’, জাকেরের ইনিংস নিয়ে শুটার স্ত্রী
সিরিজ শুরুর আগমুহূর্তে নাটকীয়ভাবে দলে ডাক পেয়েছিলেন বিপিএলে ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়ানো জাকের আলি অনিক। লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বিপিএলের ফর্মটা টেনে আনলেন তরুণ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। বাংলাদেশ মাত্র ৩ রানে হারলেও ম্যাচটিতে বড় প্রাপ্তি জাকের আলির পাওয়ার হিটিং।
বীরোচিত ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষের রানের পাহাড় টপকে স্মরণীয় এক জয়ের সম্ভাবনা দেখিয়েছেন। গেল বছর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন যদিও, তবে সেগুলো ছিল এশিয়ান গেমসে। এবারই প্রথম মূল দলের একাদশে ডাক পেয়েছিলেন। সে অর্থে বলতে গেলে অভিষেক। নিজের প্রথম ম্যাচেই রেকর্ড ছয় ছক্কার মারে ৩৪ বলে ৬৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে সামর্থ্যের জানান দিলেন সিলেটের এই ঘরের ছেলে। টাইগার এই ব্যাটারের আরেকটি পরিচয় জাতীয় শুটার নাফিসা তাবাসসুমের স্বামী।
বিজ্ঞাপন
স্ত্রী শুটার, স্বামী ক্রিকেটার। দুই ক্রীড়াবিদ দুই ডিসিপ্লিনে দেশের জন্য খেলছেন। জাকেরের স্ত্রী নাফিসা তাবাসসুম বছর চারেক আগেই জাতীয় শুটার হয়েছেন। তাই নাফিসা স্বামীকেও জাতীয় দলের জার্সিতে দেখার অপেক্ষায় ছিলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এখন আমরা দুই জনই জাতীয় দলের খেলোয়াড়। আমি কয়েক বছর আগেই জাতীয় শুটার হয়েছি। ও (জাকের) জাতীয় দলে প্রবেশের অপেক্ষায় ছিল। অবশেষে ডাক পেয়েছে এবং খেলেছে। এটা আমাদের জন্য দারুণ গর্বের ও ভালো লাগার।’
জাকের আলী অনিক বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে খেলেছেন। সেই দলের কোচ সালাউদ্দিন নির্বাচকদের সমালোচনাও করেছিলেন জাকেরকে জাতীয় দলে না ডাকায়। স্বামীর বিলম্ব নিয়ে অবশ্য আফসোস নেই নাফিসার, ‘আসলে আল্লাহ সকল কিছুর মালিক। জাকের এই দলে প্রথমে ছিল না। পরবর্তীতে ডাক পেয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যেতে পারি। বাকিটা আল্লাহর ওপর।’
শুটার-ক্রিকেটারের মেলবন্ধনের ক্ষেত্র বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জাকের নাফিসার চেয়ে তিন বছরের সিনিয়র। একই সময় বিকেএসপি ক্যাম্পাসে থাকায় মন দেওয়া-নেওয়া। পাঁচ বছর সম্পর্কের পর ২০২০ সালে বিয়ের পিড়িতে বসেন দুই ক্রীড়াবিদ।
এয়ার রাইফেল ইভেন্টে নারী বিভাগে বাংলাদেশের অন্যতম ভরসা নাফিসা তাবাসসুম। ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় গ্র্যা প্রি আইএসএসএফে তিনি ব্যক্তিগত ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। মিশ্র ইভেন্টে জয় করেছিলেন রৌপ্য। ২০২৩ সালে চীনের হাংজুতে এশিয়ান গেমসেও খেলেছেন। নিজের পদক জয়ের মতোই আনন্দ পেয়েছেন গতকাল স্বামীর ইনিংস দেখে, ‘আমার পদক জয় এবং অনিকের ইনিংস দু’টাই সমান আনন্দের। গতকালের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে কারণ অনিক দারুণ খেলেছে। এই রকম ইনিংস সচরাচর কাউকে খেলতে দেখিনি।’
ক্রীড়াবিদ হিসেবে অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত শুটার নাফিসা তাবাসসুম। জাকের আলী অনিক জাতীয় দলে ডাক পাওয়ায় এবং খেলায় এখন নাফিসার নতুন পরিচয় ‘ক্রিকেটার জাকের আলীর স্ত্রী’। নাফিসা এই সম্পর্কে বলেন, ‘আসলে আমরা দুই জনই একে অন্যের পরিচয়ে পরিচিতি পাওয়ার মতো। কেউ বলবে শুটারের স্বামী জাকের আবার জাকেরের স্ত্রী শুটার। দু’টিই উপভোগ্য।’
পরিচয় ও মর্যাদা প্রায় সমান হলেও সুযোগ-সুবিধায় অনেক তারতম্য শুটিং ও ক্রিকেটে। ক্রিকেটাররা কেন্দ্রীয় চুক্তি ও ম্যাচ ফি’র সম্মানী অনেক বেশি পেয়ে থাকেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদদের মধ্যে শুটাররা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে। এরপরও তারা থাকেন নিভৃতে। এই প্রসঙ্গে নাফিসার মন্তব্য,‘আমরা জাতীয় দলে খেলি কয়জন চেনে। আমাদের গেমসগুলো সেভাবে চেনে না। এজন্য মানুষ জানে না।’
শুটার-ক্রিকেটারের মেলবন্ধনের ক্ষেত্র বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জাকের নাফিসার চেয়ে তিন বছরের সিনিয়র। একই সময় বিকেএসপি ক্যাম্পাসে থাকায় মন দেওয়া-নেওয়া। পাঁচ বছর সম্পর্কের পর ২০২০ সালে বিয়ের পিড়িতে বসেন দুই ক্রীড়াবিদ। বিয়ের পর খেলাধুলা চালিয়ে যাওয়া অনেক নারীর পক্ষেই কঠিন। নাফিসার ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো,‘আমার জাতীয় দলে ভালো পারফরম্যান্সে সবই তো বিয়ের পর। এর অবদান সম্পূর্ণ অনীক ও তার পরিবারের। অনীক না চাইলে তো আর খেলতে পারতাম না।’
অন্য খেলোয়াড়দের তুলনায় ক্রিকেটারদের ব্যস্ততা একটু বেশি। বিপিএল, ঢাকা লিগ ও জাতীয় লিগ সহ নানা টুর্নামেন্ট বছর জুড়ে। এর পরও যখন সময়-সুযোগ মিলে জাকের হাজির হন গুলশান শুটিং কমপ্লেক্সে। শুটিংয়ের খুটিনাটি বোঝার চেষ্টা করেন। কোচ-খেলোয়াড়দের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা করেন। নাফিসার সূত্রে শুটিং অঙ্গনেও পরিচিত মুখ জাকের।
জাকের যতটা গুলশান আসেন শুটিং দেখতে নাফিসা ততটা মিরপুর যান না ক্রিকেট দেখতে। এরপরও জাকেরের খেলা মাঠ থেকে দেখার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। একদম সম্ভব না হলে চোখ রাখেন টিভির পর্দায়। ক্যারিয়ারের বাকি সময় এভাবেই কাটাতে চান তারা,‘দোয়া রাখবেন আমরা দুই জন যেন দুই খেলায় আরো মনোযোগ দিয়ে ভালো খেলতে পারি।’
দুই জনই ক্রীড়াবিদ। স্বাভাবিকভাবেই আলোচনা আসে তাদের উত্তরাধিকার এই পথে হাঁটবে কিনা? নাফিসার উত্তর,‘পরবর্তী প্রজন্মের বিষয়টি তাদের হাতেই। আমরা এখন আমাদের খেলা নিয়েই পূর্ণ মনোযোগী।’
এজেড/এফআই