বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সফলতম দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স আরও একটি শিরোপা জয়ের দ্বারপ্রান্তে ছিল। তবে অল্পের জন্য ফরচুন বরিশালের কাছে হেরে তাদের পঞ্চম শিরোপা পাওয়া হয়নি। পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে দলটির হয়ে কার্যকরী ইনিংস খেলে নজর কেড়েছেন তরুণ ব্যাটসম্যান জাকের আলি অনিক। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি দেশের ক্রিকেটের আলোচিত এক নামও। গতকাল (শুক্রবার) রাতে বিপিএল ফাইনাল শেষে বিভিন্ন বিষয়ে জাকেরের সঙ্গে কথা হয়েছে ঢাকা পোস্টের

মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে গতকাল বিপিএলের দশম আসরের ফাইনালে ‍কুমিল্লাকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বরিশাল। আগে ব্যাট করা কুমিল্লার পুঁজি আরও বাড়ানোয় ভূমিকা রাখতে পারতেন জাকের। ফাইনালে না পারলেও, টুর্নামেন্টজুড়ে তার ব্যাটিং ছিল প্রশংসনীয়। ১৪ ম্যাচ খেললেও ব্যাটিং পেয়েছেন ১০ ইনিংসে। টেল–এন্ডারে ব্যাট করেও তার ইনিংস দলের জন্য কার্যকরী ছিল। ১০ ইনিংসে ৯৯.৫ গড় ও ১৪১.১৩ স্ট্রাইকরেটে ১৯৯ রান করেছেন জাকের

স্ট্রাইকরেটের জন্য প্রশংসা কুড়ানো জাকের আলি বিপিএলের আগে থেকেই পাওয়ার হিটিং নিয়ে কাজ করেছেন। এছাড়াও জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি এই সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য সেটি তুলে ধরা হলো…

প্রশ্ন : একেবারে তীরে এসে তরী ডুবল, কি বলবেন?
জাকের : আলহামদুলিল্লাহ সবকিছু ভালোভাবেই হয়েছে। আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে এটি ঠিক যে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে ভাল লাগতো।

প্রশ্ন : ফাইনালে হারায় খারাপ লাগা কাজ করছে কি না?
জাকের : খারাপ তো লাগবেই। সবাই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই আসে। কেউ রানারআপ হতে আসেনি। আমরাও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই এসেছিলাম, দূর্ভাগ্যবশত সেটি হয়নি।

প্রশ্ন : ফাইনালে ২৩ বলে ২০ করলেন, নিজের ব্যাটিং নিয়ে কী বলবেন–
জাকের : আজকে শুরু থেকেই একটু স্ট্রাগল হয়েছে। কিন্তু আমি প্যানিক হইনি। যেটা আগেও বলেছি, আমি ডট বল নিয়ে চিন্তা করি না। কনফিডেন্স ছিল, দুটা ছয় মারলে হয়ে যাবে, হয়নি। প্রতিদিন (ব্যাটে) লাগবে না। তো এটাই চেষ্টা থাকবে পরবর্তীতে ভালো করার।

প্রশ্ন : বিপিএলের আগে পাওয়ার হিটিং নিয়ে কাজ করেছিলেন?
জাকের : বিপিএল শুরুর আগেই স্যারের (কোচ সালাউদ্দিন) সঙ্গে পাওয়ার হিটিং নিয়ে কাজ করেছি। কয়েক জায়গায় কথা বলেছি। স্যারের সঙ্গে কাজ করেছি গত সিজন থেকেই। চেষ্টা ছিল সবটুকু দেওয়ার, আলহামদুলিল্লাহ।

প্রশ্ন : শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা না পাওয়া নিয়ে খারাপ লাগা কাজ করছে কি?
জাকের : না না, কোনো খারাপ লাগা নেই। এসব নিয়ে খারাপ লাগলে, সামনে আগানো যাবে না। আমি আমার প্রসেস ফলো করছি। সামনে অনেক ঘরোয়া খেলা আছে। আল্লাহ চাইলে ওখানে ভাল করে, আল্লাহ যখন আমার সময় লিখে রাখবে, তখন আমি আমার জায়গায় পৌঁছে যাব। এ নিয়ে আক্ষেপ নাই।

প্রশ্ন : কোচ যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই খেলার কথা বলেছিলেন, এটা যদি ব্যাখ্যা করতেন—
জাকির : আসলে যে রোল দেওয়া হয়, সেভাবেই খেলার চেষ্টা করি। ফাইনালে একটা ভিন্ন রোল দেওয়া হয়েছিল। ক্রুশাল মোমেন্টে ব্যাট করেছি। চেষ্টা ছিল খেলাটা বানানোর (সাজানোর)। হয়তো শেষে প্রোপারলি পুষিয়ে দিতে পারিনি। তবে চেষ্টা করেছি। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, লাস্টে হয়তো দুটা ছয় মারতে পারব। কাভার-আপ হয়ে যাবে। শেষ ওভারে স্ট্রাইক পাইনি। রাসেল (আন্দ্রে রাসেল) আমাকে বলেছিল, ‘নো প্রবলেম, আমি আছি সমস্যা নাই।’

ক্যারিবীয় তারকা আন্দ্রে রাসেলের সঙ্গে অনুশীলনে ‘বাড়তি পাওয়া’ প্রসঙ্গে জাকের বলেন, রাসেল আমার খেলা দেখেছে। আমার খেলা নিয়ে প্রশংসা করেছে অনেক। বিশেষ করে রিকভারির ক্ষেত্রে। আমার সঙ্গে প্রায়ই ওর রিকভারি সেশন হতো। বলতো এই জিনিসটা অবশ্যই করবা। তোমার সামনে ভাল ভবিষ্যৎ আছে। এটাই ধরে রেখো।

প্রশ্ন : নিজের স্ট্রাইকরেট নিয়ে কতটুকু সন্তুষ্ট
জাকের : এগুলা নিয়ে চিন্তা করি না। স্ট্রাইকরেট বলেন বা অ্যাভারেজ– আমি এসব নিয়ে চিন্তা করি না। দল আমার কাছে কী চায়, সেটাই আমি চিন্তা করেছি।

প্রশ্ন : রাসেলের সঙ্গে অনুশীলনে বিশেষ কিছু কি শিখেছেন?
জাকের : রাসেল আমার খেলা দেখেছে। আমার খেলা নিয়ে প্রশংসা করেছে অনেক। বিশেষ করে রিকভারির ক্ষেত্রে। আমার সঙ্গে প্রায়ই ওর রিকভারি সেশন হতো। বলতো এই জিনিসটা অবশ্যই করবা। তোমার সামনে ভাল ভবিষ্যৎ আছে। এটাই ধরে রেখো।

প্রশ্ন : কোচ সালাউদ্দিন আপনাকে সবসময় আগলে রাখেন, বিষয়টি কিভাবে দেখেন?
জাকের : বিপিএলে এই প্রথম আমি সবগুলো ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছি। লাস্ট দুই বছর বেঞ্চে কাটিয়েছি আমি। এই জিনিসটা হয়তো আপনারা খেয়াল করেন নাই। ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় নাই। নিজেকে মেলে ধরারও সুযোগ পাইনি। থ্যাংক্স টু সালাউদ্দিন স্যার এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, আমাকে ট্রাস্ট করার জন্য। যখন আপনি কাউকে ট্রাস্ট করবেন, ওই খেলোয়াড়ও আপনাকে কিছু দেওয়ার ট্রাই করবে। এটা অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

প্রশ্ন : আপনাকে জাতীয় দলে কেন ডাকা হয়না– এই প্রশ্ন তুলেছেন কোচ সালাউদ্দিন....
জাকের : একজন কোচ যখন প্রশংসা করে (অবশ্যই ভাল লাগে)। সালাউদ্দিন স্যার সচরাচর প্রশংসা করেন না। আবার খারাপ খেললেও ডিমোটিভেট করেন না উনি। ভাল করলেও মাথায় তুলে রাখেন না। এই প্রথম উনি আমাকে নিয়ে জনসম্মুখে এত প্রশংসা করেছেন। উনি আমার সামনে, এমনকি কোনো খেলোয়াড়ের সামনেও এত প্রশংসা করে না। খুবই ভাল লাগা কাজ করছে। তখন মনে হয়, আরও ভাল কিছু করা যায় কি না।

এসএইচ/এএইচএস