কাশ্মীরের সেই ‘বিস্ময় ক্রিকেটারের’ সঙ্গে শচীনের সাক্ষাৎ
কারখানায় কাজ করতে গিয়ে দুই হাত চিরতরে হারিয়ে ফেলেন আমির হোসেন। তবুও তার ইচ্ছাশক্তি তাকে টেনে নিয়ে যায় ২২ গজের ক্রিকেটে। এমনকি এই যুবক বর্তমানে কাশ্মীর প্যারা দলের অধিনায়কত্ব করছেন। কাঁধ ও ঘাড় দিয়ে দারুণ ব্যাটিং করেন তিনি, যার ভিডিও দেখে চমকে গেছেন নেটিজেনরা। সেই বিস্ময় ক্রিকেটারের সঙ্গে এবার সাক্ষাৎ করেছেন শচীন টেন্ডুলকার।
মাত্র সাত বছর বয়সে দুই হাত হারানো আমিরের বর্তমান বয়স ৩৪ বছর। ক্রিকেটের প্রতি তার নিবেদন, ত্যাগ ও ভালোবাসা দেখে এর আগে প্রশংসা করেছিলেন ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন। পা দিয়ে বোলিং ও কাঁধ দিয়ে আমিরের ব্যাটিং দেখে তিনি গত মাসে লিখেছিলেন, ‘আশা করি একদিন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে এবং তার নামের একটি জার্সি পাব। লাখো মানুষের মাঝে অনুপ্রেরণা দেওয়া ও খেলার প্রতি আত্মনিবেদনের জন্য অভিনন্দন।’
বিজ্ঞাপন
এরপর সম্প্রতি কাশ্মীরে সপরিবারে সফরে যান শচীন। সেই সুযোগে তিনি ঢুঁ মারেন আমিরের এলাকায়ও। বিস্ময় জাগানো ওই ক্রিকেটারের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার একটি ভিডিও নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন শচীন। এর আগে কাশ্মীরের পাহালগ্রামে রাস্তায় কয়েকজন যুবকের সঙ্গেও খেলতে দেখা যায়। কয়েকটি বল মোকাবিলা করে স্ট্রেট ড্রাইভ, কভার ড্রাইভ, আবার সুইপও খেলেন শচীন। পুরো ঘটনার সাক্ষী ছিলেন তার স্ত্রী অঞ্জলি ও কন্যা সারা। এছাড়া শচীন-পরিবারকে দেখা যায় পাহালগ্রামের তুষারপাত উপভোগ করতে।
— Sachin Tendulkar (@sachin_rt) February 24, 2024
এদিকে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৭ সালে নিজেদের গ্রাম ওয়াঘামা গ্রামে পারিবারিক কারখানায় কাজ করার সময় ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় দুই হাতই হারান আমির। তবে আশা ছাড়েননি তিনি। সেই আশায় নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া আমির ২০১৩ সালের একদিন এক শিক্ষকের নজরে পড়ে যান। যিনি কাশ্মীরের এই ছেলেটির মধ্যে ক্রিকেটীয় প্রতিভা খুঁজে পান। এরপর তাকে পরিচয় করিয়ে দেন পেশাদার প্যারা ক্রিকেট খেলার সঙ্গে।
আরও পড়ুন
এরপর প্যারা ক্রিকেট দলের হয়ে আমির সফর করেছেন নেপাল, দুবাইসহ বেশ কয়েকটি দেশে। কিছুদিন আগে শারজাহ’তে অনুষ্ঠিত প্যারা লিগেও খেলেছেন তিনি। কেবল শচীনই নয়, এর আগেও আমির ভারতের তারকা ক্রিকেটারদের নজরে পড়েছিলেন। সাবেক পেসার আশিষ নেহরা মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তাকে।
— Sachin Tendulkar (@sachin_rt) February 23, 2024
দুর্ঘটনায় হাত হারানোর পরও ক্রিকেটের প্রতি এমন আবেগ প্রসঙ্গে আমির বলেন, ওই দুর্ঘটনার পরও আমি আশা হারাইনি। কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমি নিজেই সবকিছু করতে পারি। আমি কারও ওপর নির্ভরশীল নই। আমার দুর্ঘটনার পর কেউ আমাকে কোনও সাহায্য করেনি। এমনকি সরকারও আমাকে কোনও সাহায্য দেয়নি। কিন্তু আমার পরিবার সবসময় আমার পাশে ছিল। আমার খেলার জন্য আমি প্রশংসা পেয়েছি অনেক। আমি মনে করি যে, সৃষ্টিকর্তার জন্যই আমার কঠোর পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। কারণ পায়ে বোলিং করা সত্যিই কঠিন। কিন্তু, আমি সমস্ত দক্ষতা এবং কৌশল শিখে নিয়েছি।
এএইচএস