ভারতের স্বস্তি কেড়ে নিয়ে রুটের সেঞ্চুরি
ভারতের হয়ে রাঁচিতে স্বপ্নের মতো টেস্ট অভিষেক হয়ে গেল পেসার আকাশ দ্বীপের। দুর্দান্ত প্রথম স্পেলে প্রথম ঘন্টায় ইংল্যান্ডের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন তিনি। এরপর মাত্র ১১২ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে বেন স্টোকসের দল চরম বিপর্যয়ে পড়ে যায়। সেখান থেকে ইংলিশদের স্বস্তি এনে দেওয়া সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান জো রুট। প্রথমদিন শেষে ইংল্যান্ড ৭ উইকেটে ৩০২ রান সংগ্রহ করেছে।
জয় নিয়ে টেস্ট সিরিজ শুরুর পর টানা দুই ম্যাচ হেরে ব্যাকফুটে ছিল সফরকারী ইংলিশরা। ফলে চতুর্থ টেস্টে তারা সিরিজ বাঁচানোর লক্ষ্যে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে। কিন্তু স্বাগতিকদের বোলিং তোপে যেভাবে ব্যাটিং ধস দেখায় ইংলিশরা, তাদের সেই লক্ষ্য শুরুতেই ভেস্তে যেতে বসেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত ভারতকে আর স্বস্তিতে থাকতে দেননি রুট। তার সঙ্গে ইনিংস মেরামত করা ১১৩ রানের জুটি গড়েন উইকেটরক্ষক বেন ফোকস। ফোকস ৪৭ এবং জ্যাক ক্রাউলি ৪২ রান করেন।
বিজ্ঞাপন
ইংল্যান্ডকে এদিন সঠিক পথ দেখানো রুটের জন্যও ছিল রানের ফেরার চ্যালেঞ্জ। চলমান ভারত সফরে তিনি সেভাবে জ্বলে উঠতে পারছিলেন না। বিশেষ করে রাজকোটে তৃতীয় টেস্টে রিভার্স স্কুপ করে উইকেট বিলিয়ে আসায় দেশের সাবেক ক্রিকেটারদের সমালোচনার তিরে বিদ্ধ হচ্ছিলেন রুট। এদিন রানে ফিরেও তার উদযাপন ছিল সাদামাটা। সেঞ্চুরি পূর্ণ করে হেলমেটের ব্যাজে চুমু আঁকার পর ক্রিজে থাকা সঙ্গীকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন।
তবে তখন উল্লাসে মাতোয়ারা ইংলিশদের ড্রেসিংরুম। ৯৯ রানে থাকাবস্থায় রুট আকাশ দ্বীপের অফ স্টাম্পের বাইরের বল চমৎকার কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারিতে পাঠান। এরপর ড্রেসিংরুমের বারান্দায় বসে বেন স্টোকস মুষ্টিবদ্ধ দুই হাত সামনে নিয়ে হুঙ্কার ছাড়লেন। উঠে দাঁড়িয়ে সেই হাত ছুড়লেন বাতাসে। রুটের ইনিংস যে ভঙ্গুর ইংল্যান্ডের আশার পালে নতুন হাওয়া!
এর আগে ইংল্যান্ডের শুরুটা হয়েছিল চিরাচরিত বাজবল তত্ত্ব মেনে। সপ্তম ওভারে মোহাম্মদ সিরাজের টানা চার বলে তিনটি চারের পর একটি ছক্কা মারেন জ্যাক ক্রাউলি। প্রথম ৯ ওভারে বিনা উইকেটে আসে ৪৭ রান। এরপরই সফরকারী দলটি জোড়া ধাক্কা খায়। একে একে বেন ডাকেট ও ওলিভার পোপকে ফেরান জাসপ্রিত বুমরাহ’র বিশ্রামে সুযোগ পাওয়া পেসার আকাশ। নিজের পরের ওভারেই তিনি আবার ফেরান ক্রাউলিকে। ৪২ বলে ৬ চার ও এক ছক্কায় ৪২ রান করা এই ওপেনারকে আকাশ চমৎকার এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন।
১০ রানের ব্যবধানে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়ে ধুঁকছিল ইংল্যান্ড। জনি বেয়ারস্টোকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চাশোর্ধ জুটিতে সেই ধাক্কা সামাল দেন রুট। তবে বেশিক্ষণ সেটি স্থায়ী হয়নি। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে সুইপ করতে গিয়ে ৩৫ রানে এলবিডব্লিউ হন বেয়ারস্টো। আর এর মাধ্যমে অশ্বিন ভারতের প্রথম ও বিশ্বের সপ্তম ক্রিকেটার হিসেবে কোনো একটি দলের বিপক্ষে এক হাজার রান ও ১০০ উইকেটের ডাবল স্পর্শ করেন।
আগের ম্যাচগুলোতে বিপদে হাল ধরা অধিনায়ক স্টোকস এদিন ইনিংস মেরামতের শুরুতেই বিদায় নেন। রবীন্দ্র জাদেজার নিচু হয়ে আসা বলে তিনি মাত্র ৩ রানে লেগ বিফোরের ফাঁদে। এরপরই ইংল্যান্ড পায় নিজেদের ভিত গড়া জুটি। বাজবল রেখে পরিপূর্ণ টেস্ট মেজাজে রুট ও ফোকস নিজেদের পুঁজি বাড়াতে থাকেন। যদিও শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিফটি পূরণের ৩ রান আগে আউট ফোকস। এরপর ১৩ রান করে আউট হন টম হার্টলিও।
দিন শেষ হওয়ার আগে টেল-এন্ডারে নামা ওলি রবিনসনের সঙ্গে ৫৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন রুট। প্রায় এক বছর পর চোট কাটিয়ে ফেরা পেসার রবিনসন ৬০ বলে অপরাজিত আছেন ৩১ রানে। রুট ২২৬ বলে অপরাজিত ১০৬ রান করেছেন। যা ভারতের বিপক্ষে সাদা পোশাকে ৫২ ইনিংসে তার দশম সেঞ্চুরি এটি। দলটির বিপক্ষে যা যেকোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানও। এতে রুট পেছনে ফেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথকে (৯)।
ভারতের হয়ে এদিন অভিষিক্ত আকাশ ৩টি, মোহাম্মদ সিরাজ ২টি এবং জাদেজা ও অশ্বিন একটি করে উইকেট শিকার করেন।
এএইচএস