প্রধান নির্বাচকের পদটি শুধু বাংলাদেশে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অত্যন্ত সম্মানের। বাংলাদেশে গত দুই দশকে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়করা এই পদে এসেছেন। পদটি সম্মানের হলেও দিন শেষে চাকরি। বোর্ডের কাছে করতে হয় জবাবদিহিতা।

১৯৯৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জয়ী দলের অধিনায়ক আকরাম খান বিসিবির প্রধান নির্বাচক ছিলেন। বোর্ডের চাকুরি থেকে সরে এসে নির্বাচন করে পরিচালক হয়েছেন ২০১৩ সাল থেকে। আকরামের অর্ধযুগ আগে লিপু ক্রিকেট বোর্ডে পরিচালক ছিলেন। ক্রিকেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কমিটি ক্রিকেট অপারেশন্স-এর চেয়ারম্যানই ছিলেন। ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির অধীনে ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগে কাজ করেন নির্বাচকরা। এক সময়ের অপারেশন্স চেয়ারম্যান, এখন প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব। সময় বড়ই বিচিত্র! নানা ঘটনা-অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়।

পড়াশোনা, ব্যক্তিত্ব, ক্রিকেট ও প্রশাসনিক জ্ঞানের সম্মিলনে লিপুর অবস্থান ভিন্ন উচ্চতায়। যোগ্যতা-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ক্রিকেট রাজনীতির মেরুকরণে ছিলেন খানিকটা উপেক্ষিত। ২০১৩ সালে বিসিবি নির্বাচনে খালেদ মাহমুদ সুজনের বিপক্ষে হারের পর আর বিসিবিমুখো হননি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের বোর্ডের গঠনতন্ত্রে সভাপতি নির্বাচিত হলেও তিনি আবার সাবেক ক্রিকেটারদের মধ্যে থেকে কাউন্সিলরশীপ প্রদান করতে পারেন। সর্বশেষ নির্বাচনে সাধারণ মানের ক্রিকেটার কাউন্সিলর হলেও বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের প্রথম অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নামটি আসেনি।

আবাহনী-মোহামেডানের মাঠের লড়াইটা এখন অনেকাংশেই নেই। মাঠের লড়াইয়ে মোহামেডান হারিয়ে যাওয়ায় ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোতে আবাহনীর প্রাধান্য। ক্রিকেট বোর্ডে  অনেকে পরিচালক বনে গেছেন অনেকটা আবাহনীর সঙ্গে সম্পৃক্ততার জোরেই। আবাহনীর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বা আবাহনী মনা ব্যক্তি ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক সংখ্যা সাত-আটের কাছাকাছি। এমন চিত্র গত এক দশক ধরেই। আবাহনীর ক্রিকেট ও লিপু অনেকটা সমার্থক শব্দ। আবাহনী দীর্ঘদিনের অধিনায়ক ও যোগ্য ব্যক্তিত্ব হয়েও লিপু ক্রিকেট বোর্ডে গত এক দশকে উপেক্ষিতই ছিলেন। 

সময়ের পালাবদলে এবার বিসিবি লিপুর শরণাপন্ন হয়েছে। বোর্ড সভা শেষে বিসিবি সভাপতি পাপন তাই স্পষ্টই বলেছেন, 'কয়েকটি নামের মধ্যে তার (লিপু) নামও ছিল। তার নাম থাকলে তো আর তেমন ভাবার কিছু নেই তিনি অত্যন্ত যোগ্য। বিষয় ছিল, তিনি রাজি হবেন কিনা। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তিনি রাজি।’

নির্বাচকদের কাজে রয়েছে যথেষ্ট দৌড়-ঝাপও। গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর বয়স এখন প্রায় ৬৪। গত কয়েক বছর তিনি সরাসরি ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িতও নন সেভাবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অনুসরণ করলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে পদচারণা বেশ কমই। যদিও তার অভিজ্ঞতা-প্রাজ্ঞ্যতা সেটা পূরণে অনেকাংশেই সক্ষম হওয়ার কথা। পাশাপাশি তার সহকারী হিসেবে রয়েছেন দুই তরুণ তুর্কি রাজ্জাক ও হান্নান সরকার। দিন শেষে সাফল্য-ব্যর্থতা বর্তাবে লিপুর ঘাড়েই।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের তিন সক্রিয় পরিচালক নাইমুর রহমান দুর্জয়, খালেদ মাহমুদ সুজন ও আকরাম খানদের খেলোয়াড়ী সময়ে লিপু ছিলেন ম্যানেজার-কর্মকর্তার ভূমিকায়। এদের আগেই লিপু বিসিবি’র পরিচালক ছিলেন। এক যুগ পর লিপু আবার বিসিবি ফিরছেন ভিন্ন দায়িত্বে। অনুজ পরিচালকদের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার বিষয় থাকলেও লিপুর তত্ত্ববধায়নে মূল দায়িত্ব ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের। তার এক সময়কার আবাহনীর সতীর্থ।

এজেড/এইচজেএস