বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএলের) বহু বিচিত্র জিনিসের একটি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর প্রতিনিয়ত হাত বদল ও নাম পরিবর্তনের হিড়িক। এক সিলেটেরই নাম বদল হয়েছে চারবার। ২০২৩ সালের আগের তিন আসরে খেলেছে সিলেটের তিনটি ভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি—সানরাইজার্স, থান্ডার, সিক্সারস। তাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল টেবিলে নিচের থেকে দ্বিতীয় হওয়া, বাকি দুবার দলটি লিগ শেষ করেছিল টেবিলের তলানিতে থেকেই। শেষমেশ গেল মৌসুমে নাম বদলে কাগজে কলমে হয় সিলেট স্ট্রাইকার্স। নতুন নামে খেলতে নেমেই বাজিমাত। গেল আসরে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছিল সিলেট। 

শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিততে না পারলেও মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির এমন সাফল্য মুগ্ধ করেছিল সিলেট সমর্থকদের। এবারও ম্যাশ ম্যাজিকের অপেক্ষায় ছিল দলটির সমর্থকরা। যদিও মাঠের চিত্রে দেখা যাচ্ছে বিপরীত চিত্র।

চলতি আসরে এখনও পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলে ফেললেও জয়খরা কাটাতে পারেনি দলটি। দলনেতা মাশরাফি যেমন ফিটনেস নিয়ে ভুগছেন, তেমনি পুরো দলই যেন আনফিট। কোনো বিভাগেই নিজেদের ঠিকভাবে মেলে ধরতে পারেনি সিলেট। নিজেদের প্রথম চার ম্যাচে ১৬ জন খেলোয়াড়কে মাঠে নামিয়েছে তারা। কেউই আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। সবশেষ ম্যাচে নিজেদের মাঠে গতকাল অবশ্য জয়ের আশা জাগিয়েছিল সিলেট। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সেই ম্যাচটাও হাতছাড়া হয়ে গেছে। দলের কোচ রাজিন সালেহ অবশ্য এমন ম্যাচের পরেও দলের ভুল খুঁজতে নারাজ। বরং খেলোয়াড়দের পাশে থাকাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। 

ঢাকাপোস্টের সঙ্গে আলাপকালে রাজিন সালেহ বলেন, ‘আমি বলতে চাইছি না ওভারকাম করব। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। আমি আশা করি না যে আমার দল সেমিফাইনাল খেলবে। কারণ অন্যান্য দল অনেক এগিয়ে গেছে। কামব্যাক না, তবে আমাদের একটা মোমেন্টাম ধরা খুব জরুরি। দলকে মোটিভেট করা খুব জরুরি। খেলোয়াড়দের পাশে থাকা দরকার।’ 

দলের এমন মুহূর্তে ভুল খোঁজা কঠিন উল্লেখ করে রাজিন বলেছিলেন, ‘ভুল খোঁজাটাই ঠিক হবে না। কারণ টানা পাঁচটা হার, আমি মনে করি আমাদের জন্য কঠিন সময়। সব ম্যাচেই আপনি দেখেছেন, আমাদের ১ থেকে ৪ নম্বর ব্যাটার পর্যন্ত কলাপ্স করেছে। বিশেষ করে আমাদের শান্ত রান করতে পারছে না। গেল বছর শান্ত অনেক রান করেছে। সে রান না করায় আমরা পিছিয়ে গিয়েছি।’ নিজেদের বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়েও খানিক আক্ষেপ ঝরলো সিলেট কোচের মুখ থেকে, ‘বিদেশী ক্রিকেটারদের কাছ থেকে আমরা ভালো কোনো পারফর্ম পাইনি, যেমনটা আমরা আশা করেছিলাম। এই দুই জায়গায় আমাদের ঘাটতি আছে। আর আমাদের ডেথ ওভারে বোলার কম যেটা সত্যি কথা।’  

ভুলে যাওয়ার মতোই একটা বিপিএল কাটালেন মাশরাফি।

সিলেট দলে এবার সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে অধিনায়ক মাশরাফিকে নিয়ে। যদিও আজ দলটি জানিয়েছে, বিরতিতে যাচ্ছেন মাশরাফি। গেল কিছুদিন ধরেই সমালোচনা হচ্ছিল সাবেক এই টাইগার অধিনায়ককে ঘিরে। অনেকেরই মত, মাশরাফি বিপিএলের মানই ছোট করছেন। তবে এসব মন্তব্য উড়িয়েই দিয়েছেন রাজিন সালেহ।

তিনি বলছিলেন, ‘মাশরাফিকে নিয়ে অনেক কথাই হয়েছে। অনেকে অনেক কথাই বলেছে যে টুর্নামেন্ট নষ্ট করেছে। টুর্নামেন্টকে ছোট করছে। আমি মনে করি, মাশরাফি একটা ব্র্যান্ড। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিপিএল না খেললে বিপিএলের সারমর্ম কোথায়? তারা যদি না খেলে বিপিএলের মজা বা ফিলটা কোথায়? মাশরাফি খেলাতে বিপিএলের মান নষ্ট হচ্ছে না। আমি মনে করি বিপিএলের জন্য ভালো একটা বিজ্ঞাপন বাংলাদেশ ক্রিকেটের তারকারা খেলছেন।’  

দলের জন্য মাশরাফির নেতৃত্ব গুণকেই বড় করে দেখছেন তিনি, ‘আমার দলের জন্য মাশরাফি ভালো একজন লিডার। যখন তার যতটুকু প্রয়োজন সে ততটুকু করার চেষ্টা করে। মাশরাফির পারফরম্যান্স ১০০ পারসেন্ট আমি কীভাবে পাবো। আমার দলে কারো কাছ থেকেই আমি শতভাগ পাইনি শুধু জাকির ছাড়া। সে (মাশরাফি) একজন গুড লিডার। দলের জন্য আমার তাকেই দরকার ছিল। আমি মনে করি মাশরাফির জন্য বিপিএলের মান খারাপ হবে এটা পুরোপুরি ভুল।’  

এদিকে, মাশরাফির সরে যাওয়ায় নতুন করে অধিনায়কত্ব পেয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। টানা হারে সেমি-ফাইনালের স্বপ্ন অনেকটাই ফিকে হয়েছে সিলেটের। অধিনায়কত্ব পেয়ে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলছিলেন, 'সত্যি কথা বলতে এত দূরের চিন্তা করে তো আর লাভ নেই। আমরা দুইটা ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার পর থেকেই চেষ্টা করছি একটা ম্যাচ জিতে ছন্দে ফিরতে। কোনো কিছুই ফেবার করেনি আমরাও ভালো ক্রিকেট খেলিনাই। এখন বর্তমান পরিস্থিতিতে হারানোর খুব বেশি কিছু নেই তবে পাওয়ার অনেক কিছুও নেই।'

কোনো বিভাগেই ভালো করতে পারছে না সিলেট।

অধিনায়কত্ব নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট অবশ্য তেমন কিছু বলেননি মিঠুনকে, 'যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনোকিছু না। আগেই ডিক্লেয়ার ছিল সহ-অধিনায়ক আমি। হঠাৎ করে না, চাপিয়ে দেওয়াও না জিনিসটা। আগে থেকেই মানসিকভাবে আমি প্রস্তুত ছিলাম মাশরাফি ভাই না থাকলে আমাকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমার নলেজে ছিল আগে থেকে। কোনো প্রেশার না দেখা যাক আল্লাহ ভরসা।'

ফরচুন বরিশালের কাছে হারের পরেও সিলেটের হয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় শোনা গেল সিলেটের ক্রিকেটার বেনি হাওয়েলের কন্ঠেও, 'হ্যাঁ অবশ্যই (এক জয় পরিস্থিতি বদলে দেবে)। আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস আছে। আমরা অবশ্যই হতাশ। অবশ্যই টানা পাঁচ ম্যাচ হারতে চাইনি। কেউই তা চায় না। আমরা এখন ঘুরে দাঁড়াতে চাই। আমাদের শুধু পরিকল্পনাটা ঠিকঠাক মতো বাস্তবায়ন করতে হবে।'

অবশ্য হাওয়েল বিশ্বাস করেন এমন টানা পাঁচ পরাজয় অবশ্যই আর্দশ নয়, 'আমরা অবশ্যই পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিতে হারতে চাইনি। এটি আদর্শ কিছু নয়। তবে এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি। বিভিন্ন ম্যাচে আমরা যেসব জিনিস ঠিক করছি, সেগুলো সব একই ম্যাচে করতে হবে আমাদের। আশা করি, পরের ম্যাচেই আমরা সেটি করতে পারব। সামনের কথাই এখন ভাবতে হবে।'

পাঁচ ম্যাচ হারের পরেও অবশ্য সিলেটের স্বপ্ন পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। এখনও দলটির হাতে আছে ৭টি ম্যাচ। পরের তিন ম্যাচে মাশরাফির দল অবশ্য কিছুটা সহজ প্রতিপক্ষ পাচ্ছে। তিন ম্যাচের মধ্যেই দুর্দান্ত ঢাকার মুখোমুখি হবে দুইবার। অন্য ম্যাচে প্রতিপক্ষ রংপুর রাইডার্স।

এসএইচ/এফআই