বিশ্বক্রিকেটে ‘বিগ থ্রি’র (ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড) দাপট অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির লভ্যাংশ থেকে শুরু করে খেলার সূচি নির্ধারণ— সবকিছুতেই এসব দেশের চাহিদার বাড়তি মূল্যায়ন দেখা যায়। যা নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি ক্লাইভ লয়েড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং টি-টোয়েন্টি তরুণ ক্রিকেটারদের বেড়ে ওঠার পথে বাধা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন ক্যারিবীয়দের তিনটি বিশ্বকাপের ফাইনালে নেতৃত্ব দেওয়া লয়েড। যেখানে তিনি ক্রিকেটের বর্তমান হালচাল ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে নিজের অভিমত জানান। আইসিসির লভ্যাংশ ভাগ করা নিয়ে লয়েড বলছেন, ‘আমি মনে করি, সবার সবকিছুর সমান ভাগ পাওয়া উচিৎ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে তাকান—ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কি লিভারপুলের চেয়ে বেশি অর্থ পায়? আর্সেনাল কি চেলসির চেয়ে বেশি পায়? না, তারা সমান ভাগ পায়।’

এরপরই নিজের দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদাহরণ টানেন ৭৯ বছর বয়সী সাবেক এই ব্যাটসম্যান, ‘ভুলে যাবেন না, ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমরা কিন্তু ১৪টি দ্বীপ, যেখানে অন্য দেশগুলো একটা দেশই। আমাদের ওখানে কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে প্রচুর খরচ হয়। কারণ নানা জায়গায় ভ্রমণ করতে হয়। তাই আমার মনে হয়, সবার সমান ভাগ পাওয়া উচিৎ। হ্যাঁ, নেতৃত্বে থাকলে হয়তো কিছু বেশি পেতে পারে...তাই বলে তিনটি দেশ মিলে বাকিদের অগ্রাহ্য করবে, সেটা অনুচিৎ।’

অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন সম্মাননা পদক পেয়েছেন ক্লাইভ লয়েড

তরুণ ক্রিকেটাররা আগে ক্রিকেটীয় জ্ঞান বৃদ্ধির যেমন সুযোগ পেতেন, তেমনটা এখন দেখা যায় না বলে আক্ষেপ লয়েডের, ‘আমি সেই সময়ে ফিরে যেতে চাই, কোথাও সফরে গিয়ে যখন তরুণদের বেড়ে ওঠার পথটাও করে দেওয়া হতো। এখন সেটি সম্ভব নয়। ইংল্যান্ড সফরে গেলে দুই ধরনের খেলা হয়—টেস্ট ও ওয়ানডে এবং তারপর সফর শেষ...তারা (তরুণ) দেশটা সম্বন্ধে কিছু শেখে না। আর এ কারণে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড কিংবা ভারতে ক্রিকেট কীভাবে খেলতে হয়, সে বিষয়ে তারা কিছুই শেখার সুযোগ পায় না।’

বর্তমানে আধিপত্য চলছে টি-টোয়েন্টি সংস্করণের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের, তবে লয়েডের মতে টেস্টকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই, ‘এটা (টি-টোয়েন্টি লিগ) রোমাঞ্চকর ব্যাপার। আমি চাই না এটার জন্য টেস্ট ক্রিকেট জায়গা হারাক। এটা সত্য যে এসব কারণে (ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ) ক্রিকেটারদের জীবন আ

রেকটু সচ্ছল হয়েছে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট এখনো গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, আমরা আরও বেশি এই সংস্করণ দেখতে পাব। টি-টোয়েন্টি হলো প্রদর্শনী আর টেস্ট ক্রিকেট হলো পরীক্ষা। আমাদের তরুণদের অভ্যাস হলো বল মেরে মাঠের বাইরে পাঠানো, যেন কোথাও চুক্তিবদ্ধ হতে পারে। এটা আমার অপছন্দ।’

ক্যারিবীয়দের হয়ে ১৯৭৫, ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা লয়েডকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দিয়েছে অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে ভারতীয় তারকা বিরাট কোহলিকে নিয়েও কথা বলেন এই কিংবদন্তি অধিনায়ক, ‘কোহলি শচীন টেন্ডুলকারকে শতকসংখ্যায় টপকে যেতে পারলে, সেই অর্জন হবে আনন্দিত হওয়ার মতোই ব্যাপার। সে এখনও তরুণ। আমি নিশ্চিত যেভাবে খেলছে, সে চাইলে যেকোনো কিছুই অর্জন করতে পারে।’

এএইচএস