নিজেদের কিছুটা দুর্ভাগা ভাবতেই পারে ভারত। ২০২২ সালে পুরো বছরটাই যে একদিনের ক্রিকেটে আধিপত্য দেখিয়েছে তারা। জিতেছে ৬ সিরিজের ৫টি। জয় করেছে এশিয়া কাপও। বিশ্বকাপের লিগ পর্বের ম্যাচগুলোতে প্রতিপক্ষকে তো দাঁড়াতেই দেয়নি রাহুল দ্রাবিড়ের শিষ্যরা। তারপরেও তাদের বছর শেষ হয়েছে চরম হতাশায়। বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ বিশ্বকাপের ফাইনালটাই তারা হেরে গিয়েছিল ঘরের মাঠে। 

তবু এবার বর্ষসেরার দল মানেই ভারতের জয়জয়কার। সারাবিশ্বে বিদায়ী বছরে ওয়ানডে খেলেছে ২২টি দল। মোট খেলা হয়েছে ২১৮ টি। সংখ্যার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে খেলা হয়েছে ২০২৩ সালে এসে। সেই বছরেরই বর্ষসেরার একাদশে ভারতের ৭জন জায়গা করে নিয়েছেন। 

ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত উইজডেন প্রকাশ করেছে এই একাদশ। যেখানে ভারতের বাইরে সর্বোচ্চ দুজন জায়গা পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়া থেকে। আর একজন করে জায়গা পেয়েছেন নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। দলের অধিনায়ক হিসেবে আছেন রোহিত শর্মা। 

দেখে নেওয়া যাক উইজডেনের বর্ষসেরা একাদশ 

রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), ভারত

ম্যাচ: ২৭, রান: ১২৫৫, গড়: ৫২.২৯

পুরো বছরে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন ভারতের শুভমান গিল। কিন্তু গিলের চেয়ে রোহিতই এবার আলোচনায় ছিলেন বেশি। দীর্ঘদিনের চেনা ধারা ছেড়ে এবার আক্রমণাত্মক ক্রিকেটেই বেশি মন দিয়েছিলেন তিনি। মূলত বিশ্বকাপেই দেখা গিয়েছে তার এমন রূপ। দলকেও নেতৃত্ব দিয়েছেন সমানতালে। সবমিলিয়ে তাকে রাখতেই হয়েছে এই একাদশে। 

ট্রাভিস হেড, অস্ট্রেলিয়া
ম্যাচ: ১৩, রান: ৫৭০, গড়: ৫১.৮১

পুরো বছরে অস্ট্রেলিয়ার ২২ ওয়ানডের ১৩টিতে খেলেছেন। তবে নিজেকে চেনাতে যেন অতটুকুই যথেষ্ট ছিল হেডের জন্য। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ভুগিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন। ফর্মে থাকা অবস্থায় পড়েন চোটে। তবে তাকে নিয়েই বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া। টুর্নামেন্টের মাঝপথে এসে হেড দিলেন সেই আস্থার প্রতিদান। প্রথম ম্যাচেই খেলেন তিন অঙ্কের ইনিংস। এরপর সেমিফাইনাল এবং ফাইনালেও ম্যান অভ দ্য ম্যাচ হয়েছেন তার অদাধারণ ব্যাটিং এর জন্য।

বিরাট কোহলি, ভারত
ম্যাচ: ২৭, রান: ১৩৭৭, গড়: ৭২.৪৭

বর্ষসেরার দলে জায়গা পাওয়ার ক্ষেত্রে সবার ভোট পেয়েছেন বিরাট কোহলি। ২০২৩ সালে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেছেন। শচীন টেন্ডুলকারের ৪৯ শতকের রেকর্ড ভেঙে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৫০ শতকের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। কাটিয়েছেন স্বপ্নের মত এক বছর। বিশ্বকাপেও ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। সেটাও এক আসরে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড করে। 

ড্যারিল মিচেল, নিউজিল্যান্ড
ম্যাচ: ২৬, রান: ১২০৪, গড়: ৫২.৩৪, উইকেট: ৫। 

বিশ্বকাপে দুই ম্যাচে শতক করেছেন নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেল। সেটাও আবার দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ভারতের বিপক্ষে। রান পেয়েছেন সারাবছরই। বছরজুড়ে ৫টি শতক করা এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান বল হাতেও কাজ চালিয়ে নিতে পারেন। উইকেট নিয়েছেন ৫টি।

আইনরিখ ক্লাসেন (উইকেটরক্ষক), দক্ষিণ আফ্রিকা
ম্যাচ: ২৪, রান: ৯২৭, গড়: ৪৬.৩৫

ব্যাট হাতে বিস্ফোরক ইনিংস দিয়ে বছরজুড়ে আলো কেড়েছেন আইনরিখ ক্লাসেন। দক্ষিণ আফ্রিকার এই ক্রিকেটার উইকেটের পেছনেও বিশ্বস্ত। উইজডেনের বর্ষসেরা ওয়ানডে দলে উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হিসেবে ক্লাসেনই জায়গা করে নিয়েছেন।

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, অস্ট্রেলিয়া
ম্যাচ: ১১, রান: ৪১৩, গড়: ৫১.৬২

বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম সেরা একটি ইনিংস খেলেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ক্র্যাম্প করার পর এক পায়ে ভর করে অপরাজিত দ্বিশতক করে একাই ম্যাচ জিতিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়াকে। এ ছাড়া বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন তিনি। বল হাতেও বেশ কার্যকর তিনি। 

রবীন্দ্র জাদেজা, ভারত
ম্যাচ: ২৬, উইকেট: ৩১, রান: ৩০৯

মূলত বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবেই এই দলে আছেন জাদেজা। তবে দরকারে ব্যাট হাতেও ভারতের জন্য বছরের অন্যতম ভরসা ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ছোট কিন্তু কার্যকর ইনিংসে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। যদিও জাদেজার বড় শক্তির জায়গা তার স্পিন। ২৬ ম্যাচে পেয়েছেন ৩১ উইকেট।  

মোহাম্মদ শামি, ভারত
ম্যাচ: ১৯, উইকেট: ৪৩, ইকোনমি: ৫.৩২
বিরাট কোহলির পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে সবার ভোট নিয়ে বর্ষসেরা ওয়ানডে দলে ঢুকেছেন শামি। বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম পছন্দের একাদশে ছিলেন না তিনি। হার্দিক পান্ডিয়া চোটে ছিটকে যাওয়ার পর দলে এসেই নিয়েছেন ৫ উইকেট। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ উইকেটসহ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২৪ উইকেট নেন শামি।

জাসপ্রিত বুমরা, ভারত
ম্যাচ: ১৭, উইকেট: ২৮, ইকোনমি: ৪.৪০
নতুন বলে সুইং, মাঝের বোলিংয়ে উইকেট এনে দেওয়া আর ডেথ বোলিংয়ে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এর সবই ছিল বুমরাহ এর কাছে।  ২০২৩ সালে ইনজুরি থাকলেও ফিরে এসে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন ভালোভাবেই। 

কুলদীপ যাদব, ভারত
ম্যাচ: ৩০, উইকেট: ৪৯, ইকোনমি: ৪.৬১
ওয়ানডেতে মাঝের ওভারে ভারতের জন্য বোলিংয়ে স্বস্তির নাম ছিলেন  কুলদীপ যাদব। এই চায়নাম্যান বোলার রান আটকেছেন, উইকেটও নিয়েছেন।

মোহাম্মদ সিরাজ, ভারত
ম্যাচ: ২৫, উইকেট: ৪৪, ইকোনমি: ৫.২৮
এশিয়া কাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২১ রানে ৬ উইকেট নিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন সিরাজ।  একই দলের বিপক্ষে বিশ্বকাপেও নেন ১৬ রানে ৩ উইকেট। বুমরাহ আর শামির সঙ্গে সিরাজের গড়া পেস বোলিং অ্যাটাক যেকোন দলকেই ভড়কে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। 

উইজডেনের ২০২৩ বর্ষসেরা ওয়ানডে দল
রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), ট্রাভিস হেড, বিরাট কোহলি, ড্যারিল মিচেল, আইনরিখ ক্লাসেন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, রবীন্দ্র জাদেজা, মোহাম্মদ শামি, জাসপ্রীত বুমরা, কুলদীপ যাদব, মোহাম্মদ সিরাজ।

জেএ