৫ জানুয়ারি ২০২২। টেস্ট ক্রিকেটে এরচেয়ে সুন্দর দিন আর দেখেনি বাংলাদেশ। মুমিনুল হকের নেতৃত্বে একদল তরুণে ভর করে টেস্টের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটিও আবার তাদের মাটিতে যে কোনো ফরম্যাটে প্রথমবার হারানোর স্বাদ। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভাল। 

মাউন্ট মঙ্গানুইয়েতে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের প্রায় এক বছরের মাথায় নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডেতে হারের বৃত্ত ভাঙে বাংলাদেশ। গত ২৩ ডিসেম্বর নেপিয়ারে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে রূপকথার মতো এক জয় পায় বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শরিফুল ইসলাম-তানজিম সাকিবদের পেস আগুনে পুড়ে ছাই হয় কিউই ব্যাটাররা! পুরো দল মিলে স্কোরবোর্ডে একশ রানও তুলতে পারেনি স্বাগতিকরা—অলআউট হয়েছে মোটে ৯৮ রানে।

যা বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে তাদের সর্বনিম্ন সংগ্রহের রেকর্ড হয়। এ ছাড়া ঘরের মাঠে কিউইদের ওয়ানডে ইতিহাসেরই চতুর্থ সর্বনিম্ন এবং ২০০৭ সালের পর সর্বনিম্ন সংগ্রহের রেকর্ডও এটি। বোলারদের এমন বীরত্বের পর নেপিয়ারে বাকি কাজটা সহজেই সারেন টাইগার ব্যাটাররা। সেটাও ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে প্রথম জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। 

ওয়ানডে ক্রিকেটে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডকে প্রথমবার হারানোর পর উচ্ছ্বসিত টিম বাংলাদেশ।

ভেন্যু ও উইকেট একই। নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে যে মাঠে নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে ছেলেখেলা করেছে, আজ (বুধবার) তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচও একই উইকেটে হয়েছে। সেদিনও বাংলাদেশ আগে বোলিং করে কিউইদের ব্যাটিংয়ে ধস নামায়। আজও সেটির পুনরাবৃত্তি দেখা গেল। পার্থক্য বলতে একটাই—শেষ ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশি পেসারদের আধিপত্য ছিল। এবার পেসারদের আধিপত্যে ভাগ বসিয়েছেন স্পিনার শেখ মেহেদী হাসান। 

এদিন টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৮ রান এসেছে জিমি নিশামের ব্যাট থেকে। বাংলাদেশের হয়ে ২৬ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন শরিফুল ইসলাম। এ ছাড়া দুটি করে উইকেট শিকার করেছেন শেখ মেহেদী, মুস্তাফিজ। নিউজিল্যান্ডে প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়ের খোঁজে ১৩৫ রানের নাগালে থাকা টার্গেট তাড়া করতে ১৮ ওভার ৪ বলে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

নাগালে থাকা লক্ষ্য তাড়ায় নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল বাংলাদেশও। উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি নাজমুল শান্ত ও সৌম্য সরকাররা। তবে একপ্রান্তে টিকে থেকে চাপ পাকা হাতে সামাল দিয়েছেন লিটন। শেষ পর্যন্ত লিটন অপরাজিত ছিলেন ৩৬ বলে ৪২ রান করে।

ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টিতেও জয়ের গেরো খুলল বাংলাদেশ।

চলতি বছর টি-টোয়েন্টিতে স্বপ্নের মতো কাটছে বাংলাদেশের। গেল মার্চে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। ঠিক এই দলটিই বিশ্বকাপ জয় করেছিল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। কিন্তু নিজের দেশে ইংলিশদের দাঁড়ানোর সুযোগও দেয়নি টাইগাররা।

এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় টাইগাররা। এবার অ্যাওয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু করল বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে একটিমাত্র ম্যাচ হারলেও চলতি বছর সিরিজ বিবেচনায় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত অপরাজিত এক দল বাংলাদেশ।

এফআই