কোথায় রং হারালেন পাকিস্তানের পেসাররা?
পাকিস্তান ক্রিকেট দল মানেই তারকা পেসারে ভরপুর। তাও যেনতেন পেসার নয়, প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ঘুম হারাম করা সব বোলার। সেরকম গতিতারকা এখনও পাকিস্তান দলে আছে, কিন্তু তারা বিবর্ণ ও ধারহীন। নিজেদের হারিয়ে খুঁজছেন এসব রংহীন পেসাররা। সর্বশেষ বিশ্বকাপ ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজেও শাহিন আফ্রিদিরা ব্যাটসম্যানদের সেভাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেননি। ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ীদের বিশ্বসেরা বোলিং আক্রমণ হঠাৎ কোথায় রং হারালো, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন!
একই প্রশ্ন তুলেছেন দেশটির সাবেক কিংবদন্তি পেসার ওয়াকার ইউনিসও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে পার্থে শাহিন আফ্রিদির সঙ্গে পেস আক্রমণে নতুন দুজনের অভিষেক করা হয়। খুররম শেহজাদ ও আমের জামালের সঙ্গে পেস বিভাগে ছিলেন অনভিজ্ঞ ফাহিম আশরাফও। যারা খুব কমই ১৪০ এর বেশি গতি দিতে পেরেছেন। ফলে অজিদের বড় সংগ্রহের পথে তারা সেভাবে বাধা হতে পারেননি।
বিজ্ঞাপন
পাকিস্তানের সাবেক গতিতারকা ওয়াকার বলেন, ‘প্রতিবারই যখন আমরা অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে আসি, পেস বোলিং নিয়ে আলাদা রোমাঞ্চ অনুভব করি। কিন্তু এবার তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। এখানে আমি দেখছি মিডিয়াম পেসার, স্লো মিডিয়াম পেসার কিংবা অলরাউন্ডার। সত্যিকারের কোনো পেস নেই। মানুষ সাধারণত পাকিস্তানের পেসারদের গতি দেখে অভ্যস্ত, যারা ১৫০ গতিতে কঠিন বল করে। যা এই সিরিজে অনুপস্থিত।’
— ESPNcricinfo (@ESPNcricinfo) December 23, 2023
যা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ওয়াকার, ‘আমি এমনটা পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটেও দেখিনি। আমি বুঝতে পারছি কয়েকজন ইনজুরিতে আছে, কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও পাকিস্তানে পেস বোলিংয়ের ব্যাটারি (ব্যাকআপ) দেখবেন। যাদের নিয়েও ম্যাচ লড়াইয়ের সামর্থ্য থাকে দলের, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে আমাকে আরও কঠিন পরিস্থিতি দেখতে হচ্ছে, এটি চরম উদ্বেগের।’
একইসঙ্গে ব্যাটিংয়েও খাপছাড়া ছিল পাকিস্তান, দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৮৯ রানেই গুটিয়ে যাওয়ায় তারা টেস্ট হারে ৩৬০ রানের বড় ব্যবধানে। ম্যাচটিতে পাকিস্তানের পক্ষে বলার মতো বোলিং করেছেন কেবল অভিষিক্ত আমের জামাল। আরেক পেসার শেহজাদও নজর কেড়েছেন, তবে এরপরই ইনজুরিতে পড়ে তিনি সিরিজ থেকে ছিটকে যান। ফলে মেলবোর্নে ২৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টে নিশ্চিতভাবে পরিবর্তন আসছে শান মাসুদের দলে। পেস বিভাগে হাসান আলী, ওয়াসিম জুনিয়র ও মির হামজারা থাকলেও তাদের নিয়ে আশান্বিত নন ওয়াকার।
আরও পড়ুন
বিশ্বকাপের আগে থেকেই কাঁধের ইনজুরির কারণে দলের বাইরে নাসিম শাহ। অন্যদিকে হারিস রউফ বিশ্বকাপে সবচেয়ে খরুচে বোলারদের একজন। এখন তিনি টেস্টের চেয়ে বিগ ব্যাশে খেলাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। শাহিন আফ্রিদি প্রথম টেস্টে ১৭২ রান খরচায় শিকার করেন মাত্র ২ উইকেট। তারও এমন হতশ্রী অবস্থা দেখে ওয়াকারের মন্তব্য, ‘আমি জানি না তার আসলে কী হয়েছে, যদি সে ফিট না হয় এবং কোনো সমস্যা থাকে তাহলে তাকে কিছুদিনের জন্য বিশ্রামে রাখা হোক। তারপর আবার যাতে সে নতুন উদ্যমে শুরু করতে পারে। সে সাধারণত ১৪৫-১৫০ গতিতে বলের পাশাপাশি সুইংও করাতে পারত। কিন্তু এখানে কিছুটা সুইং পেলেও, গতি কমে গেছে অনেক, যা তাকে উইকেট পেতে দিচ্ছে না।’
একইসঙ্গে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টেস্ট দেখা যন্ত্রণাদায়ক ছিল বলেও ভাষ্য সাবেক এই পেসারের, ‘আমাদের সামনে যথেষ্ট সুযোগ ছিল, ম্যাচে ফেরার মতো মোমেন্টাম ছিল, কিন্তু আমরা সেগুলো লুফে নিতে পারিনি। তারসঙ্গে রয়েছে বাজে ফিল্ডিং। যখন ফিল্ডিং নিখুঁত হয়, তখন ব্যাটসম্যানরা চাপে থাকে এবং বোলারদের জন্যও কিছুটা সুযোগ তৈরি করতে পারে। কিন্তু পার্থে যা দেখেছি, তা আসলেই যন্ত্রণাদায়ক।’
এএইচএস