যুব এশিয়া কাপ জিতে আসা দলটাই যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি। মাহফুজুর রহমান রাব্বি, আশিকুর রহমান শিবলীর পাশাপাশি এই আসরে নজর কেড়েছেন বাংলাদেশের পেসার মারুফ মৃধা। আগ্রাসী বোলিং, উইকেটের পর উদযাপনের ভঙ্গিমা কিংবা বোলিং বৈচিত্র্য সবমিলিয়ে মারুফের প্রতি মুগ্ধতা ছিল সকলের। 

এবারের যুব আসরে মারুফ মৃধা ৪ ম্যাচে ৩.৫৬ ইকোনমি ও ম্যাচপ্রতি গড়ে ১১.৪০ রান খরচায় নেন ১০ উইকেট। যেখানে টাইগার এই পেসারের সর্বোচ্চ বোলিং ফিগার ৪১/৪। যা তাকে যুব এশিয়া কাপে উইকেট শিকারির তালিকায় তিন নম্বর স্থান দিয়েছে। 

যুবদের এশিয়া কাপ জিতে আসা এই ক্রিকেটারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় মুখোমুখি হয়েছিলেন ঢাকা পোস্ট-এর ক্রীড়া প্রতিবেদক সাকিব শাওন। যেখানে খোলামনে এই কিশোর জানিয়েছেন নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ার আর ভবিষ্যত স্বপ্নের কথা। 

প্রশ্ন:  নিজেকে আর দলকে এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন ভাবতে কেমন লাগছে? 

মারুফ: চ্যাম্পিয়ন বলতে, আমরা এবার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম আগে থেকে যে এশিয়া কাপে কিছু একটা করতে হবে। ভালো কিছু অবশ্যই। সবার মধ্যেই আলাদা আলাদা প্রস্তুতি ছিল। একেক জনের একেক জনের প্রতি যে বিশ্বাস সেটা অটুট ছিল। সবার মধ্যেই সেই বিশ্বাস ছিল একজন অন্যজনকে সাহায্য করেছে যে আমরা পারব। এজন্য আল্লাহর রহমতে ভালো একটা রেজাল্ট হয়েছে। সবমিলিয়ে বলব টিম ওয়ার্কের সফলতা। এখন চ্যাম্পিয়ন হয়েছি ভালো লাগছে। 

প্রশ্ন: দেশে ফিরে যেভাবে সবার ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন…

মারুফ: এটা আসলে অনেক ভালো লাগছে। আমরা টিম মেম্বাররা সবাই খুব উপভোগ করেছি। সবাইকে বিসিবি থেকে অনেক হেল্প করছে, সবাইকে বুস্ট আপ করেছে। ভালোবাসা পেলে তো অবশ্যই ভালো লাগে। এছাড়া দর্শকদের ভালোবাসা অনেক বড় পাওয়া। 

প্রশ্ন: বোলিংয়ের সময় বা উইকেটের পর বেশ আগ্রাসন দেখা যায় আপনার মধ্যে। কার থেকে নিয়েছেন এই দীক্ষা? 

মারুফ:  এটা অবশ্য বলা কঠিন। ম্যাচের আগে আমি চিন্তা করি, কি করব মাঠে গিয়ে। এরপর মাঠে প্রবেশের সাথে উইকেট পাওয়ার পর এগুলো নিজ থেকেই আমার মধ্যে চলে আসে, ‘আজকে দেশের জন্য ভালো কিছু করব।’ সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এজন্য আমার এমন আগ্রাসনটা চলে আসে আরকি। এছাড়া উইকেটের উদযাপন তেমন কিছু না। তবে দেশের মধ্যে মুস্তাফিজ ভাইকে ভালো লাগে, আর দেশের বাইরে আমিরকে। 

প্রশ্ন: কার অনুপ্রেরণায় এই পর্যন্ত এসেছেন? 

মারুফ: আমার দুই ভাই আছে, তারা বিদেশে থাকে। তারা সবসময় আমাকে সবরকম সাপোর্ট করেছেন। এছাড়া মেহরাব হোসেন যোশি ভাই আছে তিনি অনেক সাহায্য করেছেন ছোট বেলা থেকে। এছাড়া করোনার সময়ও তিনি সাহায্য করেছেন। নাজমুল স্যার আছেন, তার কথা বলতে হয়। বিসিবি আমাকে ফিফটিন, সেভেনটিন, নাইন্টিন, যে ক্যাম্প গুলোতে রেখেছিল সেখান থেকে শিখেছি। এতদূর আসতে সবার পরিশ্রমই রয়েছে আমার পেছনে। 

প্রশ্ন: দিনাজপুর থেকে ক্রিকেটে উঠে আসার গল্পটা কেমন ছিল? 

মারুফ: যখন অনূর্ধ্ব-১৪ খেলছি তখন প্রথম আমি আমার জেলা থেকে আসি। এরপর ডিভিশন কল পাই ঢাকা সাউথ থেকে। অনূর্ধ্ব-১৪ প্রথম বিভাগ খেলি। এরপর বিকেএসপিতে ট্রায়াল দিই, তাতে সুযোগ হয় ভর্তি হয়ে যাওয়ার। তারপর এখান থেকে শুরু। মুখে যতটা সহজে বলতে পারলাম জার্নিটা এত সহজ ছিল না। আলহামদুলিল্লাহ আসতে পেরেছি এখানে এখন। পুরো সময়ে পরিবার পাশে ছিল। 

প্রশ্ন: ভারত ম্যাচে গতি সুইং বাউন্স দিয়ে তাদের ছিন্ন করেছেন, কোচ নাজমুলের সাথে নিশ্চয় অনেক কাজ করেছেন এগুলো নিয়ে?

মারুফ: শেষ ২ মাসের কথা বলব, নাজমুল স্যার ছিলেন পেস বোলিং কোচ। উনি আমাদের অনেক কিছুতে সাহায্য করেছেন। আমরা তার কাছ থেকে অনেক কিছুই নিতে পেরেছি। শিখেছি কিভাবে কোন অবস্থায় কি করতে হবে। তিনিই বুঝিয়েছেন চাপের মুহুর্তে কিভাবে ভালো করতে হবে। এছাড়া স্কিলের কাজ তো করেছিই। দেশের জন্য ভালো করতে হবে এটাই সবসময় বলতেন স্যার। 

প্রশ্ন: টুর্নামেন্টে ১০ উইকেট পেয়েছেন, পরিবার কি সন্তুষ্ট আপনার পারফরম্যান্সে? 

মারুফ: তারা অনেক খুশি হয়েছে যে এশিয়া কাপ জিতেছি। বলেছে, সামনে বিশ্বকাপ আছে সেখানে আরো ভালো করতে হবে। দেশের জন্য করতে হবে। বিশ্বকাপে যেন আরো বেশি উইকেট পেতে পারি। নিজেকে নিয়ে বেশি বেশি কাজ করার তাগিদ পরিবারের সবার। 

প্রশ্ন: অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে এসে অনেকেই জাতীয় দলে প্রতিষ্ঠিত। আপনিও নিশ্চয় একদিন জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে চান। 

মারুফ: এটা তো অবশ্যই সবার আশা থাকে যে দেশের হয়ে খেলা, জাতীয় দলের হয়ে খেলা। দেশের জন্য ভালো কিছু করা। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। এই ইচ্ছা তো সবারই থাকে, আমারো ইচ্ছা যে জাতীয় দলের হয়ে একদিন খেলা। ভালো একজন পেসার হবো, পুরো দুনিয়া জানবে দেখবে এটাই তো চাওয়া। 

প্রশ্ন: সামনেই বিশ্বকাপ, সেটা নিয়ে কি পরিকল্পনা আছে? 

মারুফ: জ্বি অবশ্যই বড় কিছু করার পরিকল্পনায় রয়েছে। এশিয়া কাপ জয় আমাদের মনোবল বাড়াবে সামনের বিশ্বকাপে। সেখানে ভালো করতে হবে আরো। সামনেই ক্যাম্প রয়েছে, নিজেদের প্রস্তুত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টায় থাকবে। ভালো কিছু নিয়েই আমরা বিশ্বকাপে যাব। 

এসএইচ/জেএ