‘এখানেই থেমে থাকলে চলবে না’
অনেকগুলো বছর আগে বাংলা সাহিত্যের কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, ‘আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়/পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা।’ পরের লাইনে লিখেছিলেন, ‘এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়, আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।’ সুকান্ত নিজে ছিলেন কিশোর কবি নামে পরিচিত। দেশের ক্রান্তিকালে নিজের টগবগে সেই অনুভূতির কথাই লিখে রেখেছিলেন আঠার বছর বয়স কবিতায়।
আঠার বছর বয়সের সেই সাহসের নমুনা নতুন করে দেখাল বাংলাদেশের বর্তমান অনূর্ধ্ব-১৯ দল। এর আগে ২০২০ সালে এই বয়সভিত্তিক দলটিই বাংলাদেশকে দিয়েছিল বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ। সেটি যেকোনো পর্যায়েই বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা। তিন বছর পর আরেকটি যুবাদলের হাত ধরে বাংলাদেশ পেয়ে গেল এশিয়া কাপের শ্রেষ্ঠত্ব।
বিজ্ঞাপন
মূল জাতীয় দল যেখানে তিনবার ফাইনালে উঠে ব্যর্থ, চাপের মুখে সিনিয়ররা যেখানে বারবার ব্যর্থ, তখন এই তরুণ ক্রিকেটাররাই যেন দেশের সম্মান বাড়ালেন নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে। মাহফুজুর রহমান রাব্বি, মারুফ মৃধা, রোহানাত দৌলা বর্ষণ, চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ান, আরিফুল ইসলাম এরা প্রত্যেকেই ছিলেন নায়ক।
তবে এদের মাঝেও একজনের নাম আলাদা করে বলতেই হয়। তিনি আশিকুর রহমান শিবলী। পুরো আসরে ৫ ম্যাচে করেছেন ৩৭৮ রান। ফাইনালে ছিল ১২৯ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস। টুর্নামেন্ট সেরা ব্যাটার এবং ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের দুই পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপ জেতার একদিন পরেই ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপচারিতায় যুক্ত হয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই সেনসেশন।
আরও পড়ুন
প্রশ্ন: শিবলী টুর্নামেন্টের শুরুতে কি ভেবেছিলেন চ্যাম্পিয়ন হবেন?
শিবলী: দেখেন এশিয়া কাপ শুরুর আগে থেকেই আমরা এখানে যখন এসেছিলাম তখন থেকেই সবার মধ্যে একটা চিন্তা ছিল যে একটা একটা করে ম্যাচ বাই মাচ খেলতে হবে। প্রতিটা মাচই দলের সবার জন্যই সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ম্যাচ বাই ম্যাচ চিন্তা করেই এমন সাফল্য, পরে এখন তো এশিয়া কাপ চ্যাস্পিয়ন তো আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো লাগছে।
প্রশ্ন: ফাইনালে ম্যাচের এমন প্রেশারে দুর্দান্ত ইনিংস খেললেন কি বলবেন?
শিবলী: ফাইনাল ম্যাচ মানেই কিন্তু বাড়তি চাপ। সে হিসেবে এটাও ফাইনাল ম্যাচ ছিল যেহেতু সে কারণে অবশ্যই প্রেশার তো থাকবেই কিছু। আবার দেখেন নতুন উইকেট সঙ্গে নতুন মাঠ। সবমিলিয়ে বলব কিছুটা তো প্রেশার ছিল সঙ্গে প্রথমে একটা উইকেট চলে গিয়েছিল। পরে কয়েকটি ভালো ভালো পার্টনারশিপও হয়েছে যে কারণে ম্যাচটি জিততে সহজ হয়ে গিয়েছে। সবারই চিন্তা থাকে যত প্রেশারই থাক সেটার মধ্যে দিয়েই ভালো কিছু করা, আমরাও সেটাই করেছি।
প্রশ্ন: পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ খেললেন কেমন লাগছে, টক অব দ্য কান্ট্রি এখন আপনি
শিবলী: আলহামদুলিল্লাহ, চেষ্টা করেছি নিজের সবটুকু দিয়ে খেলতে। পরেও চেষ্টা থাকবে এমন ফর্মটা চালিয়ে যাওয়ার।
প্রশ্ন: এমন দারুণ খেলার পেছনে কাকে কৃতিত্ব দিবেন পেছনের মানুষ হিসেবে?
শিবলী: পেছনের মানুষের সাহায্য ছাড়া কিন্তু বড় খেলোয়াড় হওয়া কিন্তু কঠিন। আমার পেছন থেকে কোচিং স্টাফ বলেন, তারপর আমার এলাকা ফরিদপুরের কোচদের কৃতিত্ব রয়েছে। এছাড়া আমার ভাইয়ের কথা বলতে হবে, সে সবসময় আমাকে সাপোর্ট করে এসেছে। এদের কৃতিত্ব অবশ্যই রয়েছে।
প্রশ্ন: টুর্নামেন্ট সেরা এটা কি বাড়তি প্রেরণা দিবে সামনে....
শিবলী: হ্যাঁ অবশ্যই, চেষ্টা থাকবে ফর্মটা আরো সামনে টেনে নিয়ে যাওয়ার।
প্রশ্ন: ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে গিয়েছিলেন সেই ম্যাচ নিয়ে বলতেন যদি…
শিবলী: দেখেন ভারতকে হারানো কিন্তু সবসময়ই স্পেশাল কিছু। ভারতকে মাঠের খেলায় হারাতে আমরা সেরকমই আগ্রাসন নিয়ে খেলেছি। ম্যাচের আগেরদিন আমরা টিম মিটিংয়ে অনেক আলোচনা করেছি। সেখানে বলা হয়েছিল যে সবার মধ্যে আগ্রাসন থাকবে। এটাই মাঠের খেলায় আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলাম বলে তাদের হারাতে পেরেছিলাম। এছাড়া সে ম্যাচে আমাদের ব্যাটার আরিফুল-পিয়ান দারুণ করেছিল। কেননা শুরুতে আমাদের কয়েকটি উইকেট পড়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন: সামনে বিশ্বকাপ কেমন করবে দল?
শিবলী: সামনে বিশ্বকাপ, এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা চেষ্টা করব আল্লাহর রহমতে। বাকিটা আল্লাহ ভরসা, দোয়া করবেন আমাদের জন্য।
প্রশ্ন: পরিবার কোচিং স্টাফ থেকে কেমন শুভেচ্ছা পাচ্ছেন....
শিবলী: হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ, অনেক।
এসএইচ/জেএ