ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকেই। ক্রীড়াঙ্গনেও যার নজির দেখা যাচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিশেষ বার্তা সম্বলিত জুতা পরে খেলতে চেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার উসমান খাজা।

কিন্তু তাতে বাধ সাধে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। তাদের নিয়ম অনুযায়ী– ক্রিকেটার বা ম্যাচের দায়িত্বরত কর্মকর্তা কোনো ধরনের বার্তাসংবলিত পোশাক, খেলার সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন খাজা। আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে পার্থ টেস্ট শুরুর আগে গা গরমের সময় স্লোগানসংবলিত সেই জুতা পরে মাঠে নামেন। তবে জুতার ওপর লেখা বার্তাটা টেপ দিয়ে ঢেকে রাখেন। এর আগে দলের অনুশীলনেও ওই জুতা পরে খেলেছিলেন ৩৬ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান এই ওপেনার। যেখানে লেখা–  ‘স্বাধীনতা একটি মানবাধিকার, প্রতিটি জীবনের মূল্য সমান।’ 

এ ছাড়া আজ ব্যাট করতে নেমেছিলেন কালো বাহুবন্ধনী জড়িয়ে। এর আগে ২০১৪ সালে ইংলিশ ক্রিকেটার মঈন আলীকে, ‘সেভ গাজা, ফ্রি প্যালেস্টাইন’ রিস্টব্যান্ডের পরায় নিষিদ্ধ করেছিল আইসিসি। ক্রীড়াঙ্গনের প্রায় সব ইভেন্টেই ম্যাচ চলাকালে চলমান কোনো যুদ্ধের পক্ষে বার্তা দেওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

অবশ্য আইসিসির নিয়মের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন খাজা। গতকাল এক ভিডিওবার্তায় পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা আমার কথায় কোনোভাবে কষ্ট পেয়েছেন, তাদের উদ্দেশে প্রশ্ন করতে চাই। স্বাধীনতা কি সবার জন্য নয়? প্রতিটি জীবন কি সমান নয়? ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে আপনি কোন জাতি, কোন ধর্মের, কোন সংস্কৃতির তাতে কিছু আসে যায় না। সত্যি কথা বলুন তো, আমি প্রতিটি জীবন সমান বলায় যদি অনেক মানুষ কষ্ট পান, আমাকে ফোন করেন এবং বলেন, সেটাই কি বড় সমস্যা নয়? এই মানুষগুলো অবশ্যই আমি যা লিখেছি, তাতে বিশ্বাস করেন না। সংখ্যাটা অল্প নয়। কত মানুষ এভাবে ভাবেন, শুনলে আশ্চর্য হবেন।’ 

এরপরই নিজের দেওয়া বার্তাটি রাজনৈতিক নয় বলে দাবি করেন খাজা, ‘আমি আমার জুতায় যেটা লিখেছি, সেটা রাজনৈতিক নয়। আমি কোনো পক্ষ নিইনি। আমার কাছে প্রত্যেকটি মানুষের জীবন সমান। একজন ইহুদি, মুসলিম, হিন্দু কিংবা অন্য ধর্মের, প্রত্যেকের জীবন আমার কাছে সমান। যাদের কথা বলা অধিকার নেই, আমি তাদের হয়ে কথা বলছি। এটা আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। যখন আমি দেখি হাজার হাজার নিরপরাধ শিশু মারা যাচ্ছে, ওই জায়গাতে আমি আমার দুটি মেয়েকে কল্পনা করি। কী হতো যদি ওখানে ওরা থাকত?’  

অজি এই ক্রিকেটারের অভিযোগ ফিলিস্তিনের দিক থেকে বিশ্ব মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, ‘কে কোথায় জন্ম নেবেন, সেটা তো কেউ বেছে নিতে পারেন না। এরপর আমি দেখছি, পুরো বিশ্ব তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আমার মন এটা মানতে পারেনি। আমি এরই মধ্যে এটা অনুভব করছি, যখন আমি বেড়ে উঠেছি আমার জীবন অন্য সবার মতো ছিল না। তবে ভাগ্যক্রমে আমি এমন কোনো দুনিয়ায় বাস করিনি, যেখানে বৈষম্য মানে জীবন-মৃত্যু।’ 

আইসিসির এমন সিদ্ধান্তের বিপক্ষে লড়াই করার ঘোষণা দিয়ে খাজা বলেন, ‘আইসিসি আমাকে বলেছে, তাদের নিয়ম অনুযায়ী আমি আমার জুতা পরতে পারব না। কারণ এখানে রাজনৈতিক বিবৃতি আছে। আমি এমনটা বিশ্বাস করি না, এটা মানবিক আবেদন। তাদের মতামত ও সিদ্ধান্তকে আমি সম্মান করি, কিন্তু আমি এর বিরুদ্ধে লড়াই করব। অনুমোদন নেওয়ার চেষ্টা করব। স্বাধীনতা মানবিক অধিকার।’

এফআই