একই সময়ে ৬ লিগ, খেলোয়াড় পাবে তো বিপিএল?
আরও একবার ফ্র্যাঞ্চাইজ ক্রিকেটের ব্যস্ত সময়ে মাঠে গড়াচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। জানুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ থেকে মাঠে গড়াবে ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এই আসর। বরাবরের মতো এবারও উদ্বোধনের আগেই কিছুটা রঙ হারানোর শঙ্কায় আছে বিপিএল। বিশ্বের অন্যান্য সব ফ্র্যাঞ্চাইজ ক্রিকেটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সূচিতে মানসম্মত বিদেশি খেলোয়াড়দের পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিগত অনেকগুলো আসর ধরেই প্রশ্নবিদ্ধ বিপিএলের মান। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসান তো প্রকাশ্যেই সমালোচনা করেছিলেন এই ফ্র্যাঞ্চাইজ লিগের মান এবং কাঠামো নিয়ে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাদের মুখে প্রায়ই বিপিএল বন্দনা শোনা গেলেও বাস্তবে এর মান এবং আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার।
বিজ্ঞাপন
বছরের পর বছর ধরে টুর্নামেন্টের ধরনে রদবদল করা, খেলোয়াড়দের পাওনা টাকা নিয়ে অসন্তোষ, ভেন্যুর মান ঠিক না থাকা, ডিআরএস এর বেলায় উন্নত প্রযুক্তি না থাকা বিপিএলের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠিয়েছে। যার কারণে আগ্রহ হারিয়েছেন অনেক বিদেশি তারকাও। আবার খেলোয়াড় সাইনিং নিয়েও একেকবার একেক নিয়ম খেলোয়াড়দের মন উঠে যাওয়ার আরও বড় কারণ। এর সঙ্গে প্রাইজমানির তুলনা তো আছেই।
আরও পড়ুন
বিপিএল যখন ফ্র্যাঞ্চাইজ ক্রিকেট দুনিয়াতে নিয়মিত ধুঁকছে, তখন বাইরের বিশ্বে দাপট দেখাচ্ছে আরও অনেক লিগ। দুবাইভিত্তিক আইএল টি-টোয়েন্টি, অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ নিজেদের নিয়ে গিয়েছে অন্য উচ্চতায়। এর মাঝে বিপিএলের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে পাকিস্তানের পিএসএল। ভেন্যুর মান, প্রাইজমানি, স্পন্সরশিপ সবমিলিয়ে দারুণ প্রতিযোগিতামূলক এক টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।
২০২৪ সালের সূচিতে আরও একবার এসব লিগের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সূচিতে পড়তে হচ্ছে বিপিএলকে। স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠছে বিপিএলে আসবেন তো মানসম্মত বিদেশিরা? নাকি ব্যস্ত থাকবেন অন্য লিগে?
বিপিএলের জন্য সময় নির্ধারিত হয়েছে জানুয়ারি ১৯ থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত। দেশের তিন ভেন্যুতে সাত দলের এই আসর মাঠে গড়াবে। ম্যাচ হবে মোট ৪৬টি।
একই সময় মাঠে চলবে আরও ৫টি লিগ। যার অর্থ, পুরো বিশ্বে আরও ৫ লিগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হবে বাংলাদেশের লিগকে।
এদের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আইএল টি২০ হবে জানুয়ারি ১৯ তারিখ থেকে ফেব্রুয়ারির ১৭ তারিখ পর্যন্ত। দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ টি-২০ চলবে জানুয়ারির ১০ তারিখ থেকে ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ পর্যন্ত। ডিসেম্বরের ৭ তারিখ থেকে শুরু হওয়া বিগব্যাশ চলবে জানুয়ারির ২৪ তারিখ পর্যন্ত। নিউজিল্যান্ডে সুপার স্ম্যাশের সূচি নির্ধারিত হয়েছে ১৯ ডিসেম্বর থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।
তবে এসবের মধ্যে বিপিএলের সবচেয়ে বড় চিন্তার নাম পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)। দারুণ জনপ্রিয় এই লিগ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে। আর এসময় পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের বিপিএলে পাওয়া যাবে না এটা বলে দেওয়াই যায়। বিশ্বকাপের পর থেকে বেশ কড়াভাবেই পরিচালিত হচ্ছে পাকিস্তানের ক্রিকেট।
দেশের বাইরে কেবল একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে পারবেন পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা এমন কথাও চাউর হয়েছে। আবার যেকোনো মূল্যে দেশের ক্রিকেটকেই গুরুত্ব দিতে হবে, এই বার্তা খেলোয়াড়দের দিয়ে রেখেছে পিসিবি। অথচ বাংলাদেশের বিপিএল প্রায় অনেকাংশেই পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের উপর নির্ভরশীল। এর সঙ্গে বাইরের দেশের খেলোয়াড়দের নিজস্ব চাওয়া পাওয়া তো আছেই।
আবার অনেক দলে খেলোয়াড় আসলেও তাদের পেতে তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য লিগের দিকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্টের কথা। দুজনের ব্যাপারেই কথা বলে রেখেছে বিপিএলের বরিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজি। তবে তাদের ব্যাপারে অনিশ্চিত ফরচুন বরিশাল। ঢাকা পোস্টকে দলটির মালিকপক্ষ থেকে জানানো হয়, দক্ষিণ আফ্রিকা টি-টোয়েন্টি লিগের ফাইনালে তাদের দল না উঠলেই কেবল বিপিএলে আসবেন এই দুই তারকা। সেটাও কেবল ৪ ম্যাচের জন্য।
আবার দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত আইএল টি-টোয়েন্টিতেও দল পেয়েছেন বেবি মালিঙ্গা খ্যাত শ্রীলঙ্কান বোলার মাথিশা পাথিরানা। বিপিএলে তাকে দলে টেনেছে সাকিব আলা হাসানের রংপুর রাইডার্স। জানা যায়, আইএল টি-টোয়েন্টি শেষ করেই বাংলাদেশে আসবেন বেবি মালিঙ্গা। মানে, তাকেও পুরো আসরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
স্বাভাবিকভাবেই তাই সরাসরি সাইনিং করে দলে ভেড়ানো বিদেশি তারকাদের অনেকটা সময় নাও পেতে পারে বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজগুলো। সেক্ষেত্রে মার্চের ফাইনালের পর আরও একবার বিপিএলের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, সেটাই হয়ত খুব বেশি স্বাভাবিক।
জেএ