ক্রিকেটে এমন অনেক আউট আছে যা অনেকেই সেভাবে জানেন না। যেমন সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানের হাত ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার টাইমড আউটের সাক্ষী হয়েছিল ক্রিকেটবিশ্ব। হেলমেট পরিবর্তনে ৩ মিনিটেরও বেশি সময় দেরি করায় অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস টাইম আউট হন। ১৯৫১ সালে ইংলিশ ওপেনার লেন হাটনের ৭২ বছর পর টেস্টে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’ আউট হলেন বাংলাদেশি ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে বিরল এই আউট হলেন মুশফিক। 

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের ইনিংসের ৪১ তম ওভারে ঘটনাটি ঘটে। কাইল জেমিসনের করা চতুর্থ বলটি রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলেন মুশফিক। বল তার ব্যাটে লাগার পর পপিং ক্রিজে ড্রপ করে আরও ডান দিকে সরে যাচ্ছিল। তখন ডান হাত দিয়ে বলটি আরও ঠেলে দেন মুশফিক। নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়রা আউটের আবেদন করেন। ভিডিও রিপ্লে দেখে মুশফিককে আউট ঘোষণা করেন তৃতীয় আম্পায়ার। 

ক্রিকেটের আইনে ৩৭.১.১ ধারায় এই আউট সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘ব্যাটার যদি যে হাতে ব্যাট ধরা নেই সেই হাত দিয়ে বল ধরেন, তবে এই আউট হবেন। কিন্তু যদি চোটের হাত থেকে বাঁচতে বল ধরেন তবে তিনি আউট হবেন না।’ এই আইনটি এক সময় ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউট নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে ‘হ্যান্ডলড দ্য বল আউট’ বাদ দিয়ে এই আউটকে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউটের অর্ন্তভুক্ত করা হয়।

ক্রিকেটে যত আউট

বোল্ড : একজন বোলার বল ডেলিভারি করার পর সরাসরি, ব্যাট-পা কিংবা অন্য কোনোভাবে যদি স্টাম্পে গিয়ে সেটি আঘাত করে এবং বেল পড়ে যায় তাহলে ওই ব্যাটসম্যান বোল্ড আউট হন। 

ক্যাচ আউট : ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে কিংবা গ্লাভস ছুঁয়ে বল মাটিতে স্পর্শ করার আগেই ফিল্ডিং দলের কেউ বলটি তালুবন্দী করতে পারলে সেটি ক্যাচ আউট। এটিও তিন ধরনের হয়ে থাকে — ১) কট বাই দ্যা ফিল্ডার, ২) কট অ্যান্ড বোল্ড ও ৩) কট বিহাইন্ড।

এলবিডব্লিউ : বোলারের বল ডেলিভারি করার পর ব্যাটে স্পর্শ না করে ব্যাটসম্যানের পায়ে লাগলে আম্পায়ারের বিবেচনায় যদি মনে হয় স্টাম্প লাইনে রয়েছে তাহলে তিনি এই আউট দিতে পারেন। 

স্টাম্পিং : ব্যাটসম্যান বলে হিট করার আগেই যদি ক্রিজ থেকে বাইরে বেরিয়ে যান অথবা শরীরের কোন অংশ যদি লাইন স্পর্শ না করে থাকে তাহলে উইকেটরক্ষক বলটিকে ধরে বেল উড়িয়ে দিতে পারেন।

রান আউট : ব্যাটসম্যান যখন রান নেওয়ার সময় এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দৌড়ান এবং তার ক্রিজে পৌঁছানোর আগেই যদি কোনো ফিল্ডার দ্বারা সরাসরি অথবা তালুবন্দি করে উইকেটের বেল ফেলে দেন, তাহলে তিনি রান আউট হবেন।

হিট উইকেট : রান নেওয়ার সময় কিংবা ক্রিজে থাকাকালে ব্যাটম্যানের ব্যাট অথবা শরীরের কোন অংশ যদি স্টাম্পে লেগে বেল পড়ে যায় তাহলে তিনি হিট আউট।

হিট দ্যা বল টোয়াইস : ডেলিভারি হওয়া কোন বল যদি ব্যাটসম্যান দুই বার আঘাত করেন তাহলে তিনি ‘হিট দ্য বল টোয়াইস’ আউট হবেন। প্রথমবার হিট করার পর দ্বিতীয়বার যদি ব্যাট, পা অথবা অন্যকোনো ভাবে বলটিকে আঘাত করা হয় তবুও এই আউট হবে।

অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড : ব্যাটার যদি যে হাতে ব্যাট ধরা নেই সেই হাত দিয়ে বল ধরেন, তবে এই আউট হবেন। কিন্তু যদি চোটের হাত থেকে বাঁচতে বল ধরেন তবে তিনি আউট হবেন না। এই আইনটি এক সময় ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউট নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে ‘হ্যান্ডলড দ্য বল আউট’ বাদ দিয়ে এই আউটকে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউটের অর্ন্তভুক্ত করা হয়।

টাইমড আউট : একজন ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর যদি নতুন ব্যাটসম্যান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাউন্ডারি লাইনের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারেন তাহলে তিনি টাইমড আউট হবেন।এক্ষেত্রে টেস্টে ১৮০ সেকেন্ড, ওয়ানডেতে ১২০ সেকেন্ড এবং টি-টোয়েন্টিতে ৯০ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে ব্যাটসম্যানকে বাউন্ডারি লাইনের ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। এটি কেবল ব্যাটারদের ক্রিজে পৌঁছানোর ক্ষেত্রেই নয়, হেলমেট-ব্যাট কিংবা অন্য কোনো কারণে প্রতিপক্ষ ও আম্পায়ারের অনুমতি ছাড়া তিনি সময় ক্ষেপণ করতে পারবেন না। 

রিটায়ার্ড হার্ট : কোন ব্যাটসম্যান যদি আঘাত পেয়ে আম্পায়ারের সম্মতি ছাড়াই মাঠ ছাড়েন এবং তিনি ওই ইনিংস পুনরায় শুরু করতে চাইলে প্রতিপক্ষ অধিনায়কের সম্মতি না থাকলে ওই ব্যাটসম্যানকে রিটায়ার্ড আউট বলে গণ্য করা হয়।

এফআই