নিজেদের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে আগামী ১৪ ডিসেম্বর থেকে টেস্ট সিরিজ শুরু করবে অস্ট্রেলিয়া। ইতোমধ্যে প্রথম টেস্টের জন্য অজিদের দল ঘোষণা করা হয়েছে। এই টেস্টকে বলা হচ্ছে তারকা ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের বিদায়ী মঞ্চ। টেস্টে বাজে পারফরম্যান্সের দরুন অনেকদিন থেকেই তার অবসরের বিষয়ে আলোচনা চলছিল। অবশেষে আসন্ন সিরিজের প্রথম ম্যাচ দিয়েই তিনি টেস্টকে বিদায় বলবেন। কিন্তু তার জন্য ঘটা করে এমন আয়োজন পছন্দ হচ্ছে না সাবেক অজি পেসার মিচেল জনসনের। যা নিয়ে বিস্ফোরক এক মন্তব্য করেছেন সাবেক এই তারকা।

২০২০ সালের পর থেকে ওয়ার্নারের টেস্ট ব্যাটিং গড় ত্রিশেরও নিচে। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের পারফরম্যান্স গ্রাফের এমন নিম্নমুখী গতি তিনি নিজেও টের পেয়েছেন। তাইতো এই ফরম্যাট থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছেন তিনি। আসন্ন পাকিস্তান সিরিজকেই ওয়ার্নার নিজের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট সিরিজ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। গত জুনে ওয়ার্নার জানিয়েছিলেন, ‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ও অ্যাশেজে ভালো করে যদি পাকিস্তান সিরিজে সুযোগ পাই, তাহলে সেখানেই টেস্ট থেকে সরে দাঁড়াব। আমি একদম পাকাপাকি বলতে পারি (এরপর) ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ খেলব না।’

এবার তাকে সেই সুযোগটা করে দিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। টেস্টে ওয়ার্নার ফর্মে না থাকলেও তাকে স্কোয়াডে রেখেছেন নির্বাচকরা। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অজিদের হয়ে অনেক ম্যাচেই জয়ের নায়ক ছিলেন ওয়ার্নার, এবার সাদা পোশাকে শেষটা রাঙানোর অপেক্ষা তার। কিন্তু অজি ওপেনারের জন্য এমন সাজ সাজ রব নিনয়ে ক্ষুব্ধ জনসন। এ নিয়ে দ্য ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়ানে দীর্ঘ এক কলামে বাঁ-হাতি পেসার লিখেছেন, ‘যেভাবে ওয়ার্নারের বিদায়ী সিরিজ নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছি, কেউ কি আমাকে বলতে পারবেন, কেন এমনটা করছি? কেন একজন ধুঁকতে থাকা টেস্ট ওপেনার নিজের ইচ্ছেমতো বিদায় জানানোর সুযোগ পাচ্ছে? আর কোন যুক্তিতে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির অন্যতম প্রধান চরিত্রের নায়কোচিত বিদায় পাচ্ছে?’ 

এর আগে ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফিকার বিপক্ষে বল টেম্পারিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্তদের একজন ওয়ার্নার। সেই স্যান্ডপেপার কেলেঙ্কারিতে তার জড়িত থাকার পরও তাকে ঘটা করে বিদায় জানানো অস্ট্রেলিয়ার জন্য অসম্মানের বলে মনে করছেন জনসন, ‘স্যান্ডপেপার কেলেঙ্কারিতে সে একা ছিল না, ঠিক আছে। তবে ওই সময় সে দলের অভিজ্ঞ একজন খেলোয়াড় ছিল। ‘নেতা’ মনে করে যে ক্ষমতার অপব্যবহার করাকে বেছে নেয়। এখন তার এমন বিদায় আমাদের দেশের জন্য একই রকম ঔদ্ধত্য এবং অসম্মানের। ভক্তরা ওয়ার্নারের জন্য কী নিয়ে আসবেন? বানিংসের (অস্ট্রেলিয়ার একটি কোম্পানি) তো স্যান্ডপেপার শেষ হয়ে যাবে।’

তবে ওয়ার্নারের অতীত ব্যাটিং নৈপুণ্যের কথাও উল্লেখ করতে ভোলেননি সাবেক অজি পেসার, ‘সব মিলিয়ে তার ক্যারিয়ার রেকর্ডটা দুর্দান্ত। অনেকে আমাদের অন্যতম সেরা ওপেনারও বলবেন। কিন্তু সর্বশেষ তিন বছরের টেস্ট ক্যারিয়ার একদম অতি সাধারণ। তার ব্যাটিং গড় নিচের দিকের ব্যাটারদের কাছাকাছি।’

অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের হয়ে একসঙ্গেও খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে ওয়ার্নার ও জনসনের। তবে সে সময় তাদের সম্পর্ক এমন তিক্ত ছিল না। কিন্তু স্যান্ডপেপার কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ওয়ার্নাররা শাস্তি পেলেও হয়তো বিষয়টি এখনও মানতে রাজি নন জনসন। এর আগে ওয়ার্নারের সঙ্গে সর্বশেষে ২০১৩-১৪ অ্যাশেজ এবং ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের সময়ে দুজন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২০১৫ সালের নভেম্বরে অবসর নিয়েছেন জনসন। ৪২ বছর বয়সী এই পেসার ৭৩টি টেস্টে ৩১৩ উইকেট পেয়েছিলেন। সব মিলিয়ে তিনি শিকার করেছেন ৫৯০ উইকেট।

এএইচএস