সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বে বিশ্বকাপ হতাশা কাটিয়ে নতুন উদ্যমে শুরু করেছে ভারত। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তারা আধিপত্য দেখিয়েই এক ম্যাচ হাতে রেখে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জিতে নিলো। যদিও আগের ম্যাচগুলোর তুলনায় এদিন ব্যাট হাতে কিছুটা সংগ্রামই করতে হয়েছে আগে ব্যাট করা ভারতীয়দের। শেষ পর্যন্ত রিংকু সিং, জিতেশ শর্মাদের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে তারা ১৭৪ রানের পুঁজি গড়ে। জবাবে অক্ষর প্যাটেল ও রবি বিষ্ণয়ের ঘূর্ণিতে ২০ রান দূরত্বে থেমে যায় ম্যাথু ওয়েডের অস্ট্রেলিয়া।

গতকাল (শুক্রবার) রায়পুরের স্টেডিয়ামটিতে ঠিকমতো ম্যাচ সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়ে সন্দীহান ছিলেন অনেকেই। কারণ দীর্ঘদিনের বিদ্যুৎ বিলের প্রায় চার কোটি টাকা বকেয়া থাকায় সাময়িক সময়ের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যার মধ্যে ফ্লাডলাইট জ্বালানো হয় জেনারেটর দিয়ে। তবে সব শঙ্কা ছাপিয়ে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ঠিকভাবেই হয়ে গেল। 

ম্যাচে টসে জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ওয়েড। ভারতীয় দল একাদশে চারটি পরিবর্তন নিয়ে নামে। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের বদলে মুকেশ কুমার এবং তিলক ভার্মার জায়গায় নেওয়া হয় শ্রেয়াস আইয়ারকে। এছাড়া আরশদীপ সিং ও ইশাণ কিষান বসিয়ে দীপক চাহার ও জিতেশ শর্মাকে নেওয়া হয়। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেক হয়েছে ক্রিস গ্রিনের। তারা পাঁচটি বদল করে। আগের ম্যাচ খেলা মার্কাস স্টয়নিস, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, জস ইংলিস, রিচার্ডসন এবং নাথান এলিস খেলেননি।

ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভাল হয়নি ভারতের। অ্যারন হার্ডির প্রথম ওভারে মেইডেন হয়। এমনকি শেষ বলে যশস্বী জসওয়াল আউট হওয়ারও সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু রিভিউ নিয়ে তিনি বেঁচে যান। পরে অবশ্য তারা সেই চাপ সামলে রানের চাকা বাড়াতে থাকেন। দুই ওপেনারের দারুণ জুটিতে ৬ ওভারে ভারতীয় বোর্ডে ৫০ ওঠে। এরপরই ছন্দপতন জয়সওয়ালের। অ্যারন হার্ডির বলে তিনি ক্যাচ আউট হয়ে ফেরেন ২৮ বলে ৩৭ রান করে। এই ম্যাচ দিয়ে সিরিজে প্রথম নেমেও প্রত্যাবর্তনটা ভালো হয়নি আইয়ারের। ৮ রান করতেই তিনি তানভীর সাঙ্ঘার বলে ক্যামেরন গ্রিনকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।

অষ্টম ওভারে অধিনায়ক সূর্যকেও প্যাভিলিয়নের পথ দেখান বেন দারসুইস। তিনি মাত্র ১ রানেই আউট। পরপর তিন উইকেট হারিয়ে ভারত কিছুটা চাপে পড়ে যায়। সেই চাপ সামলাতে ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াড়কে সঙ্গী বানান রিংকু সিং। দুজনের চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ৪৮ রান। তবে কিছুটা ধীরগতির ইনিংস খেলে সাঙ্ঘা বলে আউট রুতুরাজও (৩২)। রিঙ্কুকে ভালো সঙ্গ দিয়েছেন নবাগত জিতেশ। বড় পুঁজির শঙ্কাও ভালোভাবেই জিতেছেন এই দুজন। ৫০ রানের বেশি জুটি গড়ে রিংকু চারটি চার ও দুই ছক্কায় ৪৬ রানে আউট হয়ে যান। ১৯ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলে ফিরে যান জিতেশ। যা নির্ধারিত ওভার শেষে ভারতকে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রানের লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেয়। অজিদের হয়ে দারসুইস সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন, দুটি করে শিকার ধরেন জেসন ব্রেহনড্রফ ও সাঙ্ঘা। 

রান তাড়ায় ঝোড়ো শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম দুই ওভারে ১৮ রান এবং দীপক চাহারের করা তৃতীয় ওভারেই ২২ রান নেন ট্র্যাভিস হেড। সূর্য কৌশল খাটিয়ে তখন স্পিন আক্রমণ শুরু করেন। চতুর্থ ওভারে বিষ্ণয়ের প্রথম বলেই ওপেনার জশ ফিলিপ (৮) আউট। পঞ্চম ওভারে প্যাটেলের বলে তুলে মারতে গিয়ে ফেরেন হেডও (৩১)। পরপর দুই ওপেনার ফেরায় ম্যাচের লাগাম ভারত নিয়ে নেয়। এরপর ক্রিজে আসা বেন ম্যাকডারমট (১৯) এবং হার্ডিও (৮) বেশিদূর এগোতে পারেননি। ৮৭ রানেই অস্ট্রেলিয়া ৪ উইকেট হারিয়ে আরও চাপে পড়ে যায়।

শেষদিকে কিছুটা চেষ্টা চালান অজি অধিনায়ক ওয়েড। তবে তার আর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল হয়ে ওঠা হয়নি। শেষ দুই ওভারে তাদের জয় পেতে দরকার ছিল ৪০ রান। তারা সেখানে মাত্র ১৯ রান তুলতে সক্ষম হয়। ওয়েড শেষ পর্যন্ত ৩৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। এছাড়া টিম ডেভিড ১৯ এবং ম্যাথু শর্ট করেন ২২ রান। ৭ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া ইনিংস শেষ করে ১৫৪ রানে।

ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন প্যাটেল। যা তাকে ম্যাচসেরার পুরস্কার এনে দিয়েছে। এছাড়া দীপক চাহার দুটি এবং আবেশ খান ও বিষ্ণয় ধরেন একটি করে শিকার। এক ম্যাচ হাতে রেখেই ভারত সিরিজ জিতে নিলো ৩-১ ব্যবধানে। 

এএইচএস