আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল এবারের আইপিএলের দলবদলে বড় ভূমিকা রাখবে খেলোয়াড়দের বিশ্বকাপ পারফর্ম্যান্স। শেষ পর্যন্ত সে কথারই সত্যতা দেখা গেল আইপিএল ট্রেডিংয়ের শেষ দিনে। বেশ কিছু বড় নামের ছিটকে পড়া দেখতে হয়েছে ট্রেডিংয়ের শেষদিনে। যে তালিকায় আছেন জশ হ্যাজেলউড, আদিল রাশিদ কিংবা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বড় কিছু নামও। 

গত আইপিএলে বাংলাদেশের তিন প্রতিনিধি ছিলেন সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাস এবং মুস্তাফিজুর রহমান। এদের মধ্যে প্রথম দুজন ছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্স শিবিরে। আর মুস্তাফিজুর রহমান খেলেছিলেন দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে। বলে রাখা ভালো, এদের কেউই নিজেদের পারফর্ম্যান্স দিয়ে আলো ছড়াতে পারেননি। 

সাকিব তো খেলতেই পারেননি গত আসরে। লিটন এক ম্যাচ সুযোগ পেলেও হাস্যকর ভুলে নিজের জায়গা হারিয়ে ফেলেছিলেন। আর দিল্লির দরবারে মুস্তাফিজুরের অবস্থাও ছিল বেশ নাজুক। দুই ম্যাচে ১১ এর বেশি ইকোনমিকে বল করে দিয়েছিলেন ৭৯ রান। আর উইকেট নিয়েছেন মোটে ১টি। দেশের ক্রিকেটে কাটারমাস্টারের কাঁটায় যে কেউ বিঁধছে না সেটারই উদাহরণ হয়ে ছিল গত আইপিএল। 

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবারের বিশ্বকাপের বাজে পারফর্ম্যান্স। বিশ্বকাপে দলীয় পারফর্ম খারাপ হলেও ইংল্যান্ডের রিস টপলিকে রেখে দিতে ভুল করেনি রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। একই দলে টিকে গিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। আবার ট্রাভিস হেডকে নিয়ে আলোচনা চলছে জোরেশোরে।

অন্যদিকে দল ভাল করেও আইপিএলে দল হারিয়েছেন লকি ফার্গুসন এবং টিম সাউদি। দুই ম্যাচে ভাল খেলে দাসুন শানাকাও ছিটকে গিয়েছেন নিজের ফ্র্যাঞ্চাইজ থেকে। তিন বাংলাদেশির বেলায় যে তাই বিশ্বকাপের পারফর্ম্যান্সও বড় ভূমিকা রেখেছে সেটা বলাই বাহুল্য। 

কলকাতার জার্সিতে সাকিব এবং লিটন

আইপিএলে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে নিয়মিত মুখ ছিলেন সাকিব আল হাসান। এবারের বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে যিনি করেছেন মাত্র ১৮৬ রান। গড় ছিল মোটে ২৬.৫৭। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের ৮২ রান বাদ দিলে সেই গড় নেমে আসে ১৭.৩৩ এ। আবার বল হাতেও যে খুব বেশি ভাল সময় গিয়েছে, তাও না। ৭ ম্যাচে ৩৬ এর বেশি গড়ে নিয়েছেন ৯ উইকেট। এক ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলেও সাকিবের পারফর্ম্যান্স ছিল না সাকিব-সুলভ। ফলাফল কলকাতার তালিকা থেকে বাদ। 

বিশ্বকাপে লিটন দাসের উপরেও ছিল বড় রকমের আস্থা। তবে সেখানেও হতাশ করেছেন লিটন। বিশ্বকাপের আগে থেকেই অফফর্মে ছিলেন ড্যাশিং এই ওপেনার। ৯ ইনিংসে ২৮৪ রান করলেও বিশ্বক্রিকেটের অন্যান্য ওপেনারদের তুলনায় একেবারেই সাদামাটা ছিলেন লিটন। আগের আসরের বাজে পারফর্মের সঙ্গে এবারের বিশ্বকাপের ফর্মহীনতা। লিটনকে তাই আর বিবেচনায় রাখেনি শাহরুখ খানের দল। 

দিল্লিতে ভাল যায়নি মুস্তাফিজের দিন

মুস্তাফিজুর রহমানের অবস্থা যেন আরও শোচনীয়। অনেকদিন ধরেই তিনি প্রদীপের নিভু আলো। কাটারমাস্টার বা ফিজ এখন শুধুই উপাধি হয়ে সঙ্গী দেয় তাকে। আদতে মুস্তাফিজের অবস্থান বেশ ভালোই নাজুক। 

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের নিয়মিত বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বাজে পারফর্ম্যান্স তার। ৮ ম্যাচে ৩৯৮ রান দিয়ে নিয়েছেন মাত্র ৫ উইকেট। একেকটি উইকেট পেতে খরচ করেছেন ৭৯ এর বেশি রান। এমন পেসারকে নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই দল সাজাতে চায়নি দিল্লি ফ্র্যাঞ্চাইজি। বাদ পড়তে হয়েছে তাকেও। 

ভারতীয় গণমাধ্যম এই অবস্থাকে দেখছে আইপিএলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ব্রাত্য অবস্থান হিসেবে। বাংলাদেশ নিজেও হয়ত জানে তার অবস্থান। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট ফ্র্যাঞ্চাইজে এবার টাইগার কোন ক্রিকেটারকে দেখতে পাওয়ার আশা এখন হয়ত বেশ অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে। 

জেএ