ক্রিকেটার থেকে রাজনীতির মঞ্চে এসেছেন অনেকেই। শ্রীলঙ্কায় সনাৎ জয়সুরিয়া ক্রিকেটার থেকে মন্ত্রী হয়েছেন। পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জেতা অধিনায়ক ইমরান খান তো নিজেই প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশের শাসন করেছেন। রাজনীতির মারপ্যাঁচে এখন জেলবন্দী জীবন পার করছেন তিনি। ক্রিকেট আর রাজনীতি নিয়ে বাংলাদেশের সখ্যতাও কম না। নাইমুর রহমান দুর্জয়, মাশরাফি বিন মর্তুজারা বাংলাদেশের ক্রিকেটের পাশাপাশি হয়েছেন জনগণের প্রতিনিধিও। 

সেই তালিকায় নতুন সংযোজন সাকিব আল হাসান। বিগত ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে পোস্টারবয় হয়ে থাকা সাকিবকে এবার দেখা যাবে রাজনীতির মাঠে। বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন টাইগার অধিনায়ক। নিজের জন্মস্থান মাগুরা-১ আসনে নির্বাচনে লড়বেন সাকিব আল হাসান।

রোববার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নৌকার এ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

গত ১৮ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে তিনটি আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। আসনগুলো হলো ঢাকা- ১০, মাগুরা- ১ ও ২। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের দপ্তর সম্পাদকের কক্ষে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন সাকিব। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে এ বৈঠক। 

বৈঠক শেষে সাকিবের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান রাজনীতি করবেন। তিনি জনগণের সেবা করবেন।’ এরপরেই মূলত পরিস্কার হয়ে যায় সাকিবের মনোনয়ন। রোববারের ঘোষণায় শেষ পর্যন্ত সেই গুঞ্জনেরই সত্যতা মিললো। 

এই মুহূর্তে ক্রিকেট দলের তিন ফরম্যাটেই অধিনায়ক হিসেবে আছেন সাকিব আল হাসান। ওয়ানডে ফরম্যাটে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। বিশ্বকাপের আগে এক সাক্ষাৎকারে এমন কথাই জানিয়েছিলেন সাকিব। তবে এখন পর্যন্ত এই ফরম্যাটেও তাকে অধিনায়ক রেখে দিয়েছে বিসিবি। ২২ গজের অধিনায়কের এবার রাজনীতির মাঠে নিজের কারিশমা দেখানোর পালা। 

সাকিব আল হাসানের রাজনীতির ক্যারিয়ার নিয়ে বেশ আগে থেকেই গুঞ্জন ছিল। ২০১৮ নির্বাচনের আগেও তার মনোনয়ন এবং প্রার্থীতা নিয়ে গুঞ্জন উঠেছিল। সেবার বাংলাদেশের সেই সময়ের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে নড়াইল-২ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। মাশরাফির পথ ধরে এবার সাকিব আল হাসানও নিজের অধিনায়কত্ব থাকাকালে সংসদ নির্বাচনে নামতে চলেছেন। 

সাকিব আল হাসান এমন এক সময়ে রাজনীতিতে নামতে চলেছেন যখন বাংলাদেশ দলে চলছে পালাবদলের হাওয়া। ২০২৩ বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ, পারফর্ম্যান্স অ্যানালিসিস্টসহ অনেক পদেই পরিবর্তন আসতে চলেছে। কথাও ছিল অধিনায়ক পদেও পরিবর্তনের কথা। যদিও আসন্ন নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে সেই পদে পরিবর্তন আসেনি। 

এদিকে সাকিবের রাজনীতিতে নাম লেখানো এক অর্থে তার ক্যারিয়ারেরই শেষের ইঙ্গিত দিয়ে রাখলো। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে খুব বেশিদিন বাংলাদেশের জার্সিতে দেখা যায়নি। ২০১৯ বিশ্বকাপেও তার পারফর্ম্যান্স নিয়ে ভক্তদের মাঝে ছিল অসন্তোষ। সাকিবও অনেকটা সেই পথেই হাঁটছেন। আগেই বলে রেখেছিলেন ২০২৫ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়ে নিজের ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন তিনি। সেই হিসেবটাও হয়ত মিলিয়ে নেওয়ার সময় এসেছে এবারে। 

মাঠের ক্রিকেটে বা ড্রেসিংরুমে সাকিব আল হাসানের প্রভাব বেশ আগে থেকেই সবার কাছে পরিচিত। দেশের তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিবের প্রভাব নিয়ে আলোচনা বহুবারই ঘুরেফিরে এসেছে। খেলার মাঠে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে স্ট্যাম্পে লাথি মারা কিংবা নিদহাস ট্রফিতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে মাঠ থেকে উঠে আসার নির্দেশ দিয়ে বারবার নায়ক হয়েছেন সাকিব। 

আবার বেটিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে, সাংবাদিকদের অশালীন অঙ্গিভঙ্গি দেখিয়ে বা কখনো ভক্তদের প্রতি আগ্রাসী হয়ে নেতিবাচক খবরেও শিরোনাম হয়েছেন তিনি। এবার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সাকিব আল হাসান ঠিক কী কারণে শিরোনাম হয়ে ওঠেন, সেটারই অপেক্ষা করতে হচ্ছে। 

জেএ