দীর্ঘ সময় ধরে শিরোপখরায় ভুগছিল ভারত। সেই দুঃস্বপ্ন ভেঙে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে রোহিত শর্মারা। এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ১০টি ম্যাচেই তারা দাপুটে জয় পেয়েছে। ব্যাট-বল ও ফিল্ডিং কোনোদিক থেকেই যেন দুর্বলতা রাখতে রাজি নয় ১৯৮৩ ও ২০১১ আসরের বিশ্বকাপজয়ীরা। রোহিতের নেতৃত্বে তাদের সামনে তৃতীয় শিরোপা জয়ের হাতছানি। যেখানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আজকের (রোববার) ফাইনালেও আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন এই ভারতীয় অধিনায়ক।

চলতি আসরের প্রায় প্রতি ম্যাচে ভারতের হয়ে ব্যাটিংয়ে শুরুতে উড়ন্ত সূচনা এনে দেওয়ার কাজ করছেন রোহিত। ওপেনিংয়ে ঝোড়ো শুরুর পর পরবর্তী ব্যাটারদের জন্য বড় সংগ্রহের দিকে ছুটে যাওয়ার কাজটা সহজ হয়ে যায়। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকদের তালিকায় তিনি নিজেকে যেমন রেখেছেন, তেমনি ৪০০ বা তার বেশি রান করাদের মধ্যে স্ট্রাইকরেটে সবার শীর্ষে রোহিত। ১০ ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি ও তিনটি ফিফটিতে ৫৫০ রান তিনি করেছেন ১২৪.১৫ স্ট্রাইক রেটে।

ম্যাচের আগেরদিনও (শনিবার) সংবাদ সম্মেলনে নিজের আগ্রাসী ব্যাটিং নিয়ে জবাব দিয়েছেন রোহিত, ‘আমি বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই একটা নির্দিষ্ট ধরনে খেলতে চেয়েছি। আমি জানতাম না, এতে সফল হব কি হব না। দুটির জন্যই আমার পরিকল্পনা ছিল– যে সফল হলে পরের ম্যাচে কীভাবে খেলব অথবা সফল না হলে পরের ম্যাচে কীভাবে খেলব। আমরা যারা ইনিংস সূচনা করি, উইকেটে গিয়ে নিজেকে মেলে ধরার আমাদের একটা স্বাধীনতা থাকে। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি হয়তো দেখেছেন। শুরুতে উইকেট হারানোয় আমাকে খেলার ধরন কিছুটা বদলাতে হয়েছে। আমি এটির জন্যও প্রস্তুত।’

এরপর অবশ্য বাস্তবতাও স্বীকার করে নিয়েছেন ভারত অধিনায়ক, বলেছেন পরিস্থিতি বুঝে খেলার কথা– ‘অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের এটাই করা উচিত। শুধু একভাবেই খেলার চিন্তা নিয়ে বসে থাকলে হবে না। আপনার সামনে থাকা পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে। তো আমি এখন দলের জন্য যে দায়িত্ব সঠিক মনে হয়, সেটি করার জন্য প্রস্তুত। একে ঘিরেই আমি আমার প্রস্তুতি ও কৌশল সাজিয়েছি। ভালো পিচে খেলা হলে আপনি কখনও কখনও বুঝতে পারেন, পিচটি ভালো এবং বোলারদের বিপক্ষে সুযোগ নেওয়া যাবে। আবার কখনও কখনও বুঝতে পারেন, পিচে বলের কিছুটা মুভমেন্ট আছে, তখন সেই অনুযায়ী নিজের ভাবনা বুঝতে হবে।’

চলমান বিশ্বকাপে যে ব্র্যান্ড মেনে ভারত খেলছে, সেটি পরেও ধরে রাখার প্রত্যয় রোহিতের কণ্ঠে, ‘আমরা যে আবহ তৈরি করেছি, খুব স্পেশাল। যত দিন সম্ভব, আমরা এটি ধরে রাখতে চাই এবং বাইরে কী হচ্ছে না হচ্ছে, সেসব নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। কারও ব্যাট থেকে যদি রান নাও আসে, আমরা চাই না সে বিশ্বকাপ শুরুর আগে যেমন ছিল, সেই চিন্তার ধরন বদলে ফেলুক। তো এই বিষয়গুলো সবার সঙ্গে পরিষ্কার। আমার মনে হয়, যে দশ ম্যাচ আমরা খেলেছি, এই ভাবনায় সোজাসাপটা ছিলাম।’

এ তো গেল ব্যাটিংয়ের কথা, বলেও দারুণ ধারাবাহিক ভারতের পেসার ও স্পিনাররা। মাত্র ৬ ম্যাচেই ২৩টি উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ শিকারি বোলার মোহাম্মদ শামি। এছাড়া পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ ১৮ এবং মোহাম্মদ সিরাজ নিয়েছেন ১৩ উইকেট। দুই স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা ও কুলদীপ যাদব মিলে আরও ৩১ উইকেট নিয়েছেন। সে হিসেবে বোলারদের কথাও নতুন করে বলতে থামেননি শামিদের কাপ্তান, ‘এই টুর্নামেন্টে বোলাররা আমাদের জন্য খুব ভালো কাজ করছে। টুর্নামেন্টের শুরুতে আমরা প্রথম চার বা পাঁচ ম্যাচে রান তাড়া করেছিলাম। সে সময় ভারতের কন্ডিশনে প্রতিপক্ষকে তিনশ রানের নিচে থামিয়ে রাখা দারুণ একটি ব্যাপার। এটা সহজ কিছু নয়। তবে আমাদের পেসার ও স্পিনাররা সেটা নিখুঁতভাবে করেছে।’

এএইচএস