ভারত বিশ্বকাপে সেরা ক্রিকেটারের দৌড়ে কে এগিয়ে?
৪৬ দিন কিংবা ৪৮ ম্যাচের ভারত বিশ্বকাপকে যে মানদণ্ডেই বিচার করা হউক, বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই আসর! ১০ দলের টুর্নামেন্টে চাওয়া-পাওয়ার পাঠ চুকিয়ে ইতোমধ্যেই বাড়ি ফিরেছে ৮ দল। চলমান বিশ্বকাপের বয়স এখন সময়ের হিসেবে ৪৫ দিন, আর ম্যাচের হিসেবে ৪৭। প্রায় দেড় মাস ধরে আলো ছড়িয়ে যারা আসরকে রাঙিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে একজন পাবেন আসরের সেরা ক্রিকেটারের স্বীকৃতি।
বিশ্বকাপ ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু হলেও ম্যান অব দা টুর্নামেন্টের পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯৯২ আসর থেকে। প্রথমবার এই পুরস্কার উঠেছে মার্টিন ক্রোর হাতে। এরপর অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ১৯৯৬ বিশ্বকাপের সেরা হন সানাৎ জয়াসুরিয়া। ১৯৯৯ সালের সেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন ল্যান্স ক্লুজনার।
বিজ্ঞাপন
২০০৩ আসরে রানের রেকর্ড গড়ে সেরা হয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। ২০০৭ বিশ্বকাপে সেরা হন গ্লেন ম্যাকগ্রা। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ভারতকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে ২০১১ সালে এই পুরস্কার জিতেছিলেন যুবরাজ সিং। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২০১৫ বিশ্বকাপে এই স্বীকৃতি পান মিচেল স্টার্ক। আর সর্বশেষ বিশ্বকাপে ফাইনাল হারলেও আসর সেরা হন কেন উইলিয়ামসন।
এবারের আসরে এই লড়াইয়ে আছে বেশ কিছু নাম। তবে ফাইনালের আগে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না। ফাইনালে দলে অবদান রাখতে পারলেও সেটাও বিশেষ ভাবে বিবেচনায় আসে। তবে সম্ভাব্য এই তালিকায় আছেন বিরাট কোহলি, মোহাম্মদ শামি, রাচিন রবীন্দ্র, অ্যাডাম জাম্পা ও রোহিত শর্মা।
বিরাট কোহলি
এখনো পর্যন্ত টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার সম্ভাবনায় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন কোহলি। এটি তার চতুর্থ বিশ্বকাপ। প্রতিবারই ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকে। ২০১১ বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে ৩৫.২৫ গড়ে করেছিলেন ২৮২ রান। পরের বিশ্বকাপে ৫০.৮৩ গড়ে ৩০৫ রান করেন ৮ ইনিংসে। গত বিশ্বকাপে ৯ ইনিংসে করেন ৪৮২ রান ৫৫.৩৭ গড়ে। এবার শুধু নিজেকেই নয়, ছাড়িয়ে গেছেন বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবাইকেই।
সব মিলিয়ে ১০ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটিতে রান ৭৭১, গড় ১০১.৫৭। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শূন্য রানে না ফিরলে রেকর্ড তার সমৃদ্ধ হতো আরও। ফিফটি পাননি আর কেবল পাকিস্তানের বিপক্ষে (১৬)। এক বিশ্বকাপে আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০০৩ আসরে সাচিন টেন্ডুলকারের ৬৭৩ রান। সেটি তো ছাড়িয়ে গেছেনই কোহলি, নিজের নায়কের ৪৯ ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড ছাড়িয়ে শতকের অর্ধশতক ছুঁয়েছেন এই বিশ্বকাপেই।
রোহিত শর্মা
বিশ্বকাপ শুরু করেছিলেন তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শূন্য রানে আউট হয়ে। পরের ম্যাচেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলেন ১৩১ রানের ইনিংস। এরপর আর সেঞ্চুরি পাননি, তবে রান করেছেন নিয়মিত। ফাইনালের আগে তার রান ৫৫ গড়ে ৫৫০। রান স্কোরারদের তালিকায় তিনি আছেন পাঁচ নম্বরে।
অ্যাডাম জাম্পা
এবারের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হওয়ার লড়াইয়ে শামির সঙ্গে আছেন মূলত তিনিই। ১০ ম্যাচে তার উইকেট ২৩টি। কোনো ম্যাচে ৫ উইকেট না পেলেও ৪ উইকেট নিয়েছেন ৩ ম্যাচে।
রাচিন রবীন্দ্র
সব মিলিয়ে ৬৪.২২ গড় ও ১০৬.৪৪ স্ট্রাইক রেটে ৫৭৮ রান তার। ফাইনালের আগ পর্যন্ত তা তৃতীয় সর্বোচ্চ। প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে আসা কোনো ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড তো গড়ে ফেলেছেন আগেই।
ব্যাটিংয়ে এমন পারফরম্যান্সের সঙ্গে বাঁহাতি স্পিনে নিয়েছেন ৫ উইকেট। ক্যাচ নিয়েছেন ৩টি। সব মিলিয়ে দারুণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্স।
মোহাম্মদ শামি
ভারতের প্রথম বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে ৫০ উইকেট পূর্ণ করেছেন এই আসরেই, বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততায় পৌঁছেছেন এই মাইলফলকে। এক বিশ্বকাপে তিনবার ৫ উইকেট শিকারের অনন্য কীর্তিও গড়েছেন।
সব মিলিয়ে এবারের আসরে স্রেফ ৬ ম্যাচে তার শিকার ২৩ উইকেট। টুর্নামেন্টে তার গড় ৯.১৩, প্রতি ১০.৯ বলে উইকেট নিয়েছেন একটি করে-সবই অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যান।
এইচজেএস