ক্রিকেটারদের ঠিকঠাক শাসন করতে তার জুড়ি মেলা ভার। সোজা বাংলায় যাকে বলা হয় কড়া হেড মাস্টার! দুই দফায় বাংলাদেশে শিক্ষকতা করতে এসে এই বিশেষণের সঙ্গে ভালোই সখ্যতা হয়েছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের। ক্রিকেট পাড়ায় কড়া হেডমাস্টার নামেই এখন পরিচিত এই লঙ্কান কোচ। কিন্তু বিশ্বকাপে তার সেই কড়া শাসনই বাংলাদেশের জন্য কাল হয়েছে!

ছোট বেলায় পরিবারের সন্তানদের যখন বাবা-মায়েরা অতিরিক্ত শাসনে রাখেন, তখন অনেক সময়ই হিতে-বিপরীত হয়। কথায় আছে, অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ভালো হয়নি। ভরাডুবি হয়েছে ভারত বিশ্বকাপে।

পুরো বিশ্বকাপেই লঙ্কান এই কোচ দলকে রীতিমতো পরীক্ষাগার বানিয়ে রেখেছিলেন। ব্যাটিং পজিশনে রীতিমতো ম্যাজিক্যাল চেয়ারের মতো পরিবর্তন এনেছেন তিনি। বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে এসে সব দলই ঠিক করে রেখেছিল টপ অর্ডারে কারা খেলবে। কেবল ঠিক ছিল না বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং অর্ডার। যার মাশুল গুণেছেন শান্ত-তামিমরা।

বিশ্বকাপকে পরীক্ষাগার বানানোর মতো হাথুরুর মনোভব ছিল দৃষ্টিকটু। তাছাড়াও দলে তার অধিক কতৃত্ব নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে দলের ভারসাম্যে। টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন তাকে কোনো দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি কোচিং স্টাফের বাকি সদস্যেদেরও সীমাবদ্ধতার মধ্যে রেখেছিলেন হাথুরু।

পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড অনেকটা অভিমান নিয়েই দায়িত্ব ছেড়েছেন। এছাড়া দায়িত্ব ছাড়ার অপেক্ষায় আছেন আরো তিন কোচ। ব্যাটিং অর্ডারে ঘন ঘন পরিবর্তন, সিদ্ধান্তে গড়মিল সবমিলিয়ে ব্যর্থ এক বিশ্বকাপ মিশন। যার বড় দায় হাথুরুসিংহের কাঁধেই পড়বে।

তামিম ইকবাল ইস্যুতেও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের বড় দায় দেখছেন অনেকেই। কোচের গুডবুক থেকে আগের মেয়াদেই কাটা পড়েছিলেন দেশসেরা এই ওপেনার। এবার তো বিশ্বকাপেই যাওয়া হয়নি তার। সেটার ফলাফলও ভালো কিছু ছিল না। তামিমের জায়গায় খেলা তানজিদ তামিম সুপার ফ্লপ ছিলেন।

বড় প্রত্যাশা নিয়েই দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়ে আসা হয়েছিল হাথুরুকে। তবে সেই বিরাট প্রত্যাশার সিকি ভাগও পূরণ করতে পারেননি হাথুরু। উল্টো রাসেল ডমিঙ্গোর রেখে যাওয়া বাংলাদেশ এখন হারের বৃত্তে পড়ে দিশেহারা। ওয়ানডে সুপার লিগে তৃতীয় হওয়া দলটাই, বিশ্বকাপ শেষ করেছে কোনো রকমে আটে থেকে।

টাইগারদের পারফরম্যান্স গ্রাফের এমন নিম্নমুখী গতি চোখ এড়ায়নি বোর্ডকর্তাদের। যদিও বিসিবি থেকে এখনো হাথুরুর সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি। ক্রিকেট অপরারেশন্স সূত্রে জানা গেছে, আপাতত নিউজিল্যান্ড সিরিজে ফোকাস দলের। ঘরের মাঠের এই সিরিজ শেষে হাথুরুর সঙ্গে আলোচনায় বসবে বিসিবি। এরপরই কড়া হেড মাস্টারের ভবিষ্যত ঠিক হবে!

এসএইচ/এইচজেএস