বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিদায় নিশ্চিত করল আফ্রিকা
ইতি ঘটল আফগান রূপকথার! চলতি আসরে সবচেয়ে বড় চমকের নাম ছিল রশিদ-গুরবাজদের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার আশা পুরোপুরি শেষ হয়ে যায় আফগানিস্তানের, তাই এবারের যাত্রাটা ছিল কেবল ম্যাচের শেষ পর্যন্ত। স্বপ্নের বিশ্বকাপ আসর তারা হার দিয়ে শেষ করেছে। ম্যাচের মাঝে দ্রুত কয়েকটি উইকেট তুলে নিয়ে ভিন্ন কিছুর আভাস দিয়েছিলেন রশিদ খানরা। কিন্তু তখনও যে সেট-ব্যাটসম্যান রসি ভ্যান ডার ডুসেন ক্রিজে দাঁড়িয়ে। ১৫ বল এবং ৫ উইকেট হাতে রেখে তিনি প্রোটিয়াদের জয় নিশ্চিত করেছেন।
পয়েন্ট টেবিলের দুই নম্বরে থেকে আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছিল টেম্বা বাভুমার দল। তাদের সামনে তাই হারানোর কিছু ছিল না। তবে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা দলটির শক্তিমত্তার জায়গা ঠিক রাখতে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না। যদিও তারা তুলনামূলক দুর্বল দল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে চলতি বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটনের শিকার হয়েছিল। যা তাদের আফসোসের বড় কারণ হতে পারত। তবে ধারাবাহিক জয় আর পা ফসকাতে দেয়নি ‘চোকার’ তকমা জুটে যাওয়া দলটিকে।
বিজ্ঞাপন
প্রোটিয়াদের হয়ে ম্যাচজয়ী সর্বোচ্চ ৭৬ রানের ইনিংস খেলেছেন ডার ডুসেন। এছাড়া কুইন্টন ডি কক ৪১ এবং শেষদিকে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ৩৯ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেছেন অ্যানডিল পেহলুকাও। আফগানদের হয়ে দুটি করে উইকেট শিকার করেছেন রশিদ ও মোহাম্মদ নবি। আরেক স্পিনার মুজিব-উর রহমান নেন এক উইকেট।
এদিন আফগানদের দেওয়া ২৪৫ রানতাড়ায় শুরুটা ভালো করেছিলেন দুই প্রোটিয়া ওপেনার কুইন্টন ডি কক ও টেম্বা বাভুমা। উদ্বোধনী জুটিতে তারা ৬৪ রান যোগ করেছিলেন। তবে এরপর আফগান-স্পিন প্রোটিয়াদের স্বস্তি দেয়নি। পাওয়ার প্লেতে ৫৪ রান তোলার পরের ওভারেই প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভুমাকে (২৩) ক্যাচ বানান স্পিনার মুজিব-উর-রহমান। ১১তম ওভারের সে ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই ১৪তম ওভারে ডি কক আউট। আরেক স্পিনার মোহাম্মদ নবীর বলে ৪১ রান করে এলবিডব্লু হন ডি কক।
মাঝের ওভারে থিতু হয়ে আউট হয়েছেন এইডেন মার্করাম (২৫) ও হেইনরিখ ক্লাসেন (১০)। আফগান স্পিন ত্রয়ীর আরেক সদস্য রশিদ খানের বলে দুজনই আউট হন। এরপর দলটিকে মূলত প্রায় একাই টেনেছেন তিনে নামা রসি ফন ডার ডুসেন। এর মাঝেই দুটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন মার্করাম ডেভিড মিলারের সঙ্গে। মার্করামের সঙ্গে ৬০ বলে ৫০ রানের জুটি গড়ার পর মিলারের সঙ্গে আরও ৪৩ রান যোগ করেন ডুসেন।
বিশ্বকাপের আগের ম্যাচগুলোতে এরপরই অর্ডারে দেখা যেত মার্কো ইয়ানসেনকে। আজ তার জায়গায় সুযোগ পাওয়া আরেক অলরাউন্ডার পেহলুকাওকে নিয়ে বাকি পথটা পাড়ি দেন ডুসেন। দুজন মিলে ষষ্ঠ উইকেটে ৬২ বলে অবিচ্ছিন্ন ৬৫ রানের জুটি গড়েন। ডুসেন ৯৫ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় অপরাজিত ৭৬ রান করেন। পেহলুকাওর ব্যাট থেকে এসেছে ৩৭ বলে ৩৯ রান। ৪৭তম ওভারে ৬-৪-৬ এর বাউন্ডারিতে জয় নিশ্চিত করেন পেহলুকাও।
এর আগে ব্যাট করা আফগানদের বিপর্যয়টা শুরু হয় দলীয় ৪১ রানে। ফর্মে থাকা ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান ও রহমানউল্লাহ গুরবাজ দুজনের উইকেটই পরপর হারায় আফগানরা। প্রোটিয়াদের প্রথম ব্রেকথ্রু আসে কেশব মহারাজের ঘূর্ণিতে। তার ফুল লেংথের বল খেলতে গিয়ে স্লিপে থাকা হেইনরিখ ক্লাসেনের হাতে ধরা পড়েন গুরবাজ। ২২ বলে তিনি ২৫ রান করেন।
পরের ৭ বলে আফগানরা কোনো রান পায়নি। ফলে কিছুটা চাপ তৈরি হয় ব্যাটারদের ওপর। সেই সুযোগে কোয়েটজে শর্ট বলের ডেলিভারিতে ফাঁদ পাতেন ইব্রাহিমের জন্য। তিনিও পুল শট খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি পাওয়া ইব্রাহিমকে এদিন ব্যাট হাতে কিছুটা সংগ্রাম করতে হয়েছে। ৩০ বলে তিনি করেন ১৫ রান। মাত্র ৪ রানের ব্যবধানে ফিরেন আফগান অধিনায়ক শহিদীও। মহারাজের বলে ব্যক্তিগত মাত্র ২ রানেই তিনি ধরা পড়েন ডি ককের গ্লাভসে।
এরপর ওমরজাইকে সঙ্গে নিয়ে বিপর্যয় সামলানোর চেষ্টা চালান রহমত শাহ। সেই চেষ্টায় তারা অবশ্য বেশিদূর আগাতে পারেননি। দুজনের ৪৯ রানের জুটি ভেঙে রহমত বিদায় নেন ব্যক্তিগত ২৬ রানে। লুঙ্গি এনগিডির বেশ বাইরের বল তার ব্যাটের কানায় লেগে ওপরে ওঠে যায়। প্রথমে ক্যাচ ফসকে গেলেও পরে তালুবন্দী করেন ডেভিড মিলার। এরপর অল্প সময়ের ব্যবধানেই ফেরেন ইকরাম আলিখিল ও মোহাম্মদ নবি। দুজনই যথাক্রমে কোয়েটজে ও এনগিডির বলে ডি ককের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। ১১৬ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বড় সংগ্রহ গড়া নিয়ে শঙ্কায় পড়ে যায় আফগানরা।
তবে ওমরজাইয়ের সঙ্গে রশিদ খান ও নুর আহমেদের দুটি মাঝারি মানের জুটি তাদের ইনিংস মেরামতে বেশ কাজে দিয়েছে। রশিদ ১৪ ও নুর করেছেন ২৬ রান। এছাড়া ওমরজাইকে বলার মতো সেভাবে কেউই আর সঙ্গ দিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ১০৭ বলের ইনিংসে তিনি ৭টি চার ও তিন ছক্কায় ৯৭ রানে অপরাজিত ছিলেন।
প্রোটিয়াদের হয়ে সর্বোচ্চ চার উইকেট শিকার করেছেন কোয়েটজে। এছাড়া এনগিডি ও মহারাজ দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।
এএইচএস