অতিমানবীয় ইনিংসে ম্যাক্সওয়েল-কামিন্সদের যত রেকর্ড
রেকর্ডবুক তোলপাড় করা একটি ম্যাচ দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম আগে থেকেই শচীন টেন্ডুলকারের ঘরের মাঠ বলে খ্যাত। সেই ভেন্যুতে দাঁড়িয়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানতাড়ার (২৯১) রেকর্ড গড়লেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও প্যাট কামিন্সরা। চলতি বিশ্বকাপেই রানতাড়ায় খুব বেশি সফল হওয়ার রেকর্ড নেই। যদিও এই আসরে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানতাড়ার রেকর্ড গড়েছিল পাকিস্তান। সে তুলনায় আগে ব্যাট করা দলগুলোকেই বেশি জিততে দেখা গেছে।
বিশ্বকাপের ৩৯তম ম্যাচে গতকাল (মঙ্গলবার) আফগানিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া দুদলই সেমিফাইনাল নিশ্চিতের লড়াইয়ে নেমেছিল। সে দৌড়ে ম্যাচের প্রায় অধিকাংশজুড়ে হাশমতউল্লাহ শহিদীর দল দাপট দেখালেও শেষ হাসিটা হেসেছেন কামিন্সরা। অথচ মাত্র ৯১ রানেই তারা ৭ উইকেট হারিয়ে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল।
বিজ্ঞাপন
সেখান থেকে ম্যাক্সওয়েল ও কামিন্স যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন সেটি ছিল অবিশ্বাস্য। এমন দিনে রেকর্ডের খাতা এলোমেলো হয়ে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। সেরকমই কিছু রেকর্ড দেখে নেওয়া যাক—
৭ উইকেট হারানোর পর ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানতাড়ার রেকর্ড
ক্রিকেট ইতিহাসে দলের চরম বিপর্যয় শুরুর পরও টেল এন্ডারদের সঙ্গে গড়া জুটিতে জয়ের রেকর্ড আগেও অনেক আছে। বিশেষত দলীয় সংগ্রহ ১০০ ছোঁয়ার আগেই ৭ উইকেট হারিয়েও জয়ের ঘটনা আছে ১২ বার। তবে সর্বোচ্চ রানতাড়ার রেকর্ড এদিন গড়েছে অস্ট্রেলিয়া। ৯১ রানেই তারা ৭ উইকেট হারানোর পর আর কোনো ব্যাটারকে না হারিয়েই তারা ২৯১ রান পেরিয়েছে।
আরও পড়ুন
এর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে এমন নজির দেখিয়েছে অজি ইতিহাসের সাক্ষী আফগানিস্তান। স্কটিশদের ২১১ রান তাড়ায় তারা মাত্র ৯৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়েছিল। আফগানরা শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি জিতে নেয় ১ উইকেটে।
সপ্তম উইকেট বা তার নিচে সর্বোচ্চ রানের জুটি
এতদিন পর্যন্ত ওয়ানডেতে সপ্তম উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি ছিল ইংল্যান্ডের জস বাটলার ও আদিল রশিদের যৌথভাবে করা ১৭৭ রানের। সেই রেকর্ড ভেঙে গতকাল অস্টম উইকেটে এসে ম্যাক্সওয়েল-কামিন্স ২০২ রানের জুটি গড়লেন। যা সপ্তম বা তার নিচের লোয়ার অর্ডার জুটিতে সর্বোচ্চ। এই রেকর্ডে তৃতীয় স্থানে আছেন দুই বাংলাদেশি ক্রিকেটার আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ২০২২ সালে এই দুজনের জুটিতে সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশ ১৭৪ রানের জুটি পেয়েছিল। এছাড়া চলতি বছরেই ভারতের মাটিতে ১৬২ রানের জুটি গড়েছিলেন দুই নিউজিল্যান্ড ব্যাটার মাইকেল ব্রেসওয়েল ও মিচেল স্যান্টনার।
এর আগে অষ্টম উইকেটে ২০০৬ সালে কেপটাউনে ভারতের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যান্ড্রু হল ও জাস্টিন কেম্প সর্বোচ্চ ১৩৮ রানের জুটি বেধেছিলেন।
ওডিআই রানতাড়ায় প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি, ছয় নম্বর ও অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ
ওয়ানডেতে রানতাড়ায় এতদিন পর্যন্ত কোনো ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড ছিল না। গতকাল ১২৮ বলে ম্যাক্সওয়েল সেই কীর্তি গড়েছেন। এতদিন পর্যন্ত রানতাড়ায় সবচেয়ে বেশি রান ছিল পাকিস্তানের ফখর জামানের। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৯৩ রান করেছিলেন। ২০১১ সালে শেন ওয়াটসন অপরাজিত ১৮৫ রান করেছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। ২০০৫ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবং ২০১২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিরাট কোহলি সমান ১৮৩ রান করেন।
এছাড়া ফরম্যাটটিতে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এদিন ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানও করেন ম্যাক্সওয়েল। শেন ওয়াটসনের করা ১৮৫ ছিল এতদিন পর্যন্ত কোনো অজি ব্যাটারের সর্বোচ্চ রান। বিশ্বকাপ ইতিহাসে ম্যাক্সওয়েলের ২০১ তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর ওপরে আছে ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিলের ২৩৭* ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইলের ২১৫।
আরও পড়ুন
এছাড়া ওয়ানডেতে ছয় বা এর নিচে ব্যাটে নেমে সর্বোচ্চ রানও করেছেন অজি ব্যাটার। আগের সর্বোচ্চ রান ছিল কপিল দেবের ১৭৫*, ১৯৮৩ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
বিশ্বকাপে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি, ওয়ানডেতে দ্বিতীয়
ম্যাক্সওয়েলের গতকালের দ্বিশতক ওয়ানডে বিশ্বকাপে সবচেয়ে দ্রুততম। এই কীর্তি গড়তে গতকাল আফগানদের বিপক্ষে ১২৮ বল খেলেছেন। তবে ওয়ানডেতে সবচেয়ে দ্রুততম দ্বিশতকের রেকর্ড ভারতীয় ব্যাটার ইশান কিষাণের। তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০২২ সালে ১২৬ বলে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। ফরম্যাট বিবেচনায় তার পরই অবস্থান ম্যাক্সওয়েলের। এর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে ক্রিস গেইল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৩৪ বলে ডাবল ম্যাজিক ফিগার পূর্ণ করেছিলেন।
ছক্কার রেকর্ড
দ্বিশতক পূর্ণ করতে গতকাল এই অজি ব্যাটার ১০টি ছক্কা মেরেছিলেন। বিশ্বকাপে যা অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ। আগের রেকর্ডটি ৯ ছক্কার, এবারের বিশ্বকাপেই পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচেই যা গড়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ।
বিশ্বকাপের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছয় মারার রেকর্ডে ম্যাক্সওয়েলের সামনে আছেন চারজন। ইয়ন মরগান ২০১৯ সালে আফগানদের বিপক্ষে এক ইনিংসে ১৭টি ছয় মেরেছিলেন। ২০১৫ আসরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্রিস গেইল মেরেছিলেন ১৬টি ছয়। একই আসরে নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিল ওয়েস্ট উইন্ডিজের বিপক্ষে ১১টি এবং চলতি আসরে কিউইদের বিপক্ষে সমান ১১টি ছয় মারেন পাকিস্তানের ফখর জামান।
এএইচএস