কথায় আছে—ভাগ্য নাকি সাহসীর সঙ্গে থাকতেই পছন্দ করে। সেটাই আরো একবার সত্যি প্রমাণ করল পাকিস্তান। পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ভেঙে পড়েনি, বরং উড়ন্ত শুরু করেন বাবর আজম-ফখর জামান। তাদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের মধ্যেই হানা দেয় বৃষ্টি। আর সেটা বাবরদের জন্য যেন আর্শীবাদ হয়ে এসেছে! বৃষ্টিতে খেলা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় ডিএল মেথডে ২১ রানে জিতেছে পাকিস্তান।

শনিবার (৪ নভেম্বর) বেঙ্গালুরুতে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৪০১ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১০৮ রান করেছেন রাচিন রবীন্দ্র। জবাবে খেলতে নেমে ২৫ ওভার ৩ বলে এক উইকেট হারিয়ে ২০০ রান তোলে পাকিস্তান। অপরাজিত সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ফখর জামান।

বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় পাকিস্তান। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বিদায় নেন আব্দুল্লাহ শফিক। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪ রান। শফিক দ্রুত ফিরলেও আরেক প্রান্তে রীতিমতো ঝড় তোলেন আরেক ওপেনার ফখর জামান। তিন অঙ্কে পৌঁছাতে এই অভিজ্ঞ ব্যাটার খরচ করেছেন মাত্র ৬৩ বল। যা দেশের হয়ে বিশ্বমঞ্চে দ্রততম শতকের রেকর্ড।

ফখরের এমন ঝড়ের মধ্যে আরেক প্রান্তে দাঁড়িয়ে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন বাবর আজম। অধিনায়ক তুলে নিয়েছেন ব্যক্তিগত ফিফটি। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তারা যোগ করেছেন অবিচ্ছিন্ন ১৯৪ রান।

পাকিস্তানের ইনিংসের ২২তম ওভারের খেলা চলাকালে প্রথম দফায় বৃষ্টি নামে। ২১.৩ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে তখন পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল ১৬০ রান। ঘণ্টা খানেকের বৃষ্টিতে কমে আসে ম্যাচের দৈর্ঘ। পাকিস্তানের জন্য নতুন লক্ষ্যমাত্রা দাড়ায় ৪১ ওভারে ৩৪২ রান।

নতুন লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নামার কিছুক্ষণ পরই আবার হানা দেয় বৃষ্টি। তখন ২৫ ওভার ৩ বলে এক উইকেট হারিয়ে ২০০ রান তোলে পাকিস্তান। এরপর খেলা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে ডিএল মেথডে ২১ রানে জয় পেয়েছে বাবরের দল।

এর আগে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ছিলেন কিউই ওপেনাররা। তবে প্রথম ১৭ বলে দেখেশুনে খেলেছেন তারা, ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্র বাউন্ডারি মারার চেষ্টায় কোনো ঝুঁকিই নেননি। এর পরের সাত বলে তারা তিনবার বল বাউন্ডারিতে (৪) পাঠান। চিন্নাস্বামীর গ্যালারি থেকে তখন শোরগোল ওঠে ‘রাচিন রাচিন’ নামে। প্রথম পাওয়ার-প্লেতে উইকেটশূন্য নিউজিল্যান্ড ৬৬ রান তোলে।

১১তম ওভারে পাকিস্তানকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন হাসান আলী। তার শর্ট ডেলিভারিতে কনওয়ের গ্লাভস ছুঁয়ে বল গিয়ে আটকায় উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে। যা হাসানের ১০০তম ওয়ানডে উইকেট। কয়েক ম্যাচ ধরে ম্লান কনওয়ে আজ ফিরেছেন ৩৯ বলে ৩৫ রান করে। এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে পাকিস্তানি বোলারদের নাভিশ্বাস তুলেছেন ইনজুরি থেকে ফেরা উইলিয়ামসন। দীর্ঘদিন ধরে চোটে ভোগা উইলিয়ামসনকে নিউজিল্যান্ড কেন স্কোয়াডে রেখেছিল, তার যোগ্য প্রমাণ ও দৃষ্টান্ত তিনি নিজেই জানিয়ে রেখেছেন। চোট থেকে ফিরে বাংলাদেশের সঙ্গে ফিফটি পেয়েছিলেন, আজ দ্বিতীয় দফায় মাঠে নেমে করলেন ৯৫ রান।

রবীন্দ্র-উইলিয়ামসন জুটি থামে ১৮০ রানে। চাইলে ধীরেসুস্থে সেঞ্চুরি করে উঠতে পারতেন উইলিয়ামসন। কিন্তু পার্ট টাইম অফস্পিনার ইফতিখার আহমেদের বলে ডাউন দ্য ট্রেকে এগিয়ে খেলতে গিয়ে তিনি বাউন্ডারিতে ক্যাচ আউট। ৭৯ বলের ইনিংসে ১০টি চার ও ২টি ছক্কার বাউন্ডারি খেলেন। তার আগেই ৮৮ বলে বিশ্বকাপের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন রবীন্দ্র। যা কোনো ব্যাটারের অভিষেক আসর ও নিউজিল্যান্ড ব্যাটারদের মধ্যেও বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ শতক।

উইলিয়ামসন যখন প্যাভিলিয়নে, ততক্ষণে মাত্র ৩৪.২ ওভারে কিউইদের দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৪৮ রান। ফলে পরবর্তী ব্যাটারদের কাজটা সহজ হয়ে যায়। একইসঙ্গে দলীয় সংগ্রহ কত বাড়ানো সেই চিন্তা নিয়েই তারা ক্রিজে আসেন। যার ফলাফল দেখা যায় স্কোরবোর্ডে। রবীন্দ্র-উইলিয়ামসনের পরে ব্যাটে নামা প্রায় সব ক্রিকেটারই ১৪০+ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন। এর ভেতর ওয়াসিমের শর্ট বলে ১০৮ রানে থামে রবীন্দ্র’র ইনিংস। ৯৪ বলের ইনিংসে তিনি ১৫টি চার ও একটি ছয় হাঁকিয়েছেন।

এছাড়া শেষদিকে তাণ্ডব চালানো ড্যারিল মিচেল ১৮ বলে ২৯, মার্ক চ্যাপম্যান ২৭ বলে ৩৯, গ্লেন ফিলিপস ২৫ বলে ৪১ এবং মিচেল স্যান্টনার ১৭ বলে ২৬ রান করেন। পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ওয়াসিম ৬০ রানে তিনটি এবং হাসান, ইফতিখার ও রউফ একটি করে উইকেট শিকার করেন।

এইচজেএস