অনায়াসেই বিশ্বকাপের চতুর্থ জয় পেল আফগানিস্তান
নেদারল্যান্ডসের সাম্প্রতিক ফর্ম দেখে মনে হয়েছিল– আফগানিস্তানের সঙ্গে তাদের ম্যাচটা রোমাঞ্চ ছড়াবে! কিন্তু বিশ্বকাপের আর আট-দশটি ম্যাচের মতো একেবারে একপেশে এক ম্যাচ হয়ে গেল লখনৌতে। নেদারল্যান্ডসের দেওয়া ১৮০ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়ায় তেমন বেগ পেতে হয়নি আফগানিস্তানকে। যদিও শুরুর দিকে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে ভিন্ন আভাসই দিয়েছিল ডাচরা। এর পরের গল্পটা রহমত শাহ ও হাশমতউল্লাহ শহিদীর লেখা। দুজনের ব্যক্তিগত অর্ধশতকে আফগানিস্তান ৭ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে।
সেমিফাইনালে ওঠার লক্ষ্যে আফগানদের জন্য ম্যাচটি ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে ৬ ম্যাচের তিনটিতে জিতে হাশমতউল্লাহ শহিদীর দল। ডাচদের সঙ্গে ম্যাচ শেষে তারা সেই সংখ্যা ৪-এ নিয়ে গেল। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে দুটি দল সেমিতে ওঠার সুযোগ রয়েছে। এই ম্যাচ জয় সেমির পথে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে রশিদ-মুজিবদের। এরপর তাদের সামনে আরও দুটি ম্যাচ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিপরীতে চলতি আসরে দুটি ম্যাচ জেতা নেদারল্যান্ডস তেমন প্রতিদ্বন্দ্বীতা দেখাতে পারেনি আজ। লখনৌর ইকানা স্টেডিয়ামে আজ (শুক্রবার) ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে তাদের গলার কাঁটা হয়ে এসেছিল বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ৪টি রানআউট। শেষ পর্যন্ত এক ফিফটিতে ডাচরা ১৭৯ রানের পুঁজি দাঁড় করায়। কিন্তু ম্যাচ জেতার জন্য তা যে যথেষ্ট নয়, সেটি তারা বল করতে নেমেই বুঝে যাওয়ার কথা! রহমত ও অধিনায়ক শহিদীর ফিফটি মাত্র ৩১.৩ ওভারে আফগানদের জয় নিয়ে আসে। তিন ডাচ বোলার একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
রানতাড়ায় ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে হোঁচট খায় আফগানিস্তান। ব্যক্তিগত ১০ রানেই লোগান ভ্যান বিকের বলে উইকেটরকক্ষক স্কট এডওয়ার্ডসকে ক্যাচ দেন আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। প্রথমে আম্পায়ার আউট দেননি, রিভিউ নিয়ে সফলতা পান ডাচ অধিনায়ক এডওয়ার্ডস। এ নিয়ে চলতি তিনি চলতি বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষের মোট ১৪টি উইকেট পতনে অবদান রেখেছেন। শুরুতে উইকেট হারালেও চাপে পড়েনি আফগানরা। বিশ্বকাপজুড়ে তাদের টপ ও মিডল অর্ডার ব্যাটারদের দারুণ ফর্মে ব্যাট করতে দেখা গেছে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
স্বাভাবিক ছন্দে খেলতে থাকা আফগানরা পাওয়ার প্লে-তে ৫৫ রান তুলে নেয়। এরপর ডাচদের ব্রেকথ্রু এনে দেন রুয়েলফ ভ্যান ডার মারউই। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে ফেলা বলটি ইনসাইড এডজ হয়ে ইব্রাহিম জাদরান স্টাম্পে টেনে আনেন। বোল্ড হয়ে ২০ রানেই ফেরেন আফগান ওপেনার। এরপর শুরু ডাচদের হতাশার গল্প! রহমত শাহের সঙ্গে আফগান অধিনায়ক শহিদী ৭৪ রানের জুটি গড়েন। সাকিব জুলফিকারের বলে ক্যাচ দেওয়ার আগে রহমত বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ ফিফটি তুলে নেন। ৫৪ বলে ৮টি চারের বাউন্ডারিতে তার ব্যাটে আসে ৫২ রান।
এরপর ম্যাচ জয় ছিল কিছু সময়েরই ব্যাপার। যা সহজে সামলেছেন শহিদী ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই মিলে। এই জুটিতে অবশিষ্ট ৫১ রান পেয়ে যায় আফগানরা। শহিদী শেষ পর্যন্ত ৬৪ বলে ৬টি চার নিয়ে ৫৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। এছাড়া ৩১ রান (২৮ বল) করেন ওমরজাই। ১১১ বল এবং ৭ উইকেট হাতে রেখেই জয় পেয়েছে আফগানিস্তান। যা তাদের নেট রানরেটকে অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট নেওয়া ডাচরা মাত্র ৩ রানেই প্রথম উইকেট হারিয়ে বসে। এরপর ৭০ রানের জুটি পেলেও তারা মাঝপথে খেই হারায়। তাদের টপ অর্ডারের টানা চার ব্যাটারই ফিরেছেন রানআউটে। ফলে ডাচরা আর বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি। এঙ্গেলব্রেখ্ট সর্বোচ্চ ৫৮ এবং ম্যাক্স ও’ডাউড ৪২ রান করেন। আফগানিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ নবি।
প্রথম ইনিংসে ডাচদের প্রথমেই আমন্ত্রণ জানান স্পিনার মুজিব-উর-রহমান। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই তিনি ওপেনার ওয়েসলি বারেসির উইকেট তুলে নেন। এর মাধ্যমে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শততম উইকেট তুলে নেন মুজিব। এটি তার ৭২তম ওয়ানডে ম্যাচ। সাম্প্রতিক সময়ে মুজিব নতুন বলে নিজেকে বেশ কার্যকরী প্রমাণ করেছেন। আউটসুইং হওয়া বলে ২২ বছর বয়সী এই অফব্রেক স্পিনার বারেসিকে ফেলেছেন লেগ বিফোরের ফাঁদে। বিক্রমজিৎ সিংয়ের বদলে ওপেন করতে নেমেই ব্যর্থ হলেন বারেসি। তিনি ফেরেন মাত্র ১ রানে।
দলীয় ৩ রানেই প্রথম উইকেট হারানোর পরও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ইউরোপের দেশটি। ম্যাক্স ও’ডাউড ও কলিন অ্যাকারম্যান মিলে গড়েন ৭০ রানের জুটি। ফিফটির পথে ছিলেন ম্যাক্স। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ ২ রান নিতে গিয়ে ডিরেক্ট হিটে তার স্টাম্প ভাঙেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। এর আগে ম্যাক্স ৪০ বলে ৯টি চারের বাউন্ডারিতে ৪২ রান করেন। ফলে ডাচদের সংগ্রহ নেওয়ার পথে ছেদ পড়ে। এরপর তারা আর বড় কোনো জুটি বাধতে পারেনি।
অভিজ্ঞ ব্যাটার কলিন অ্যাকারম্যানও ক্রিজে প্রায় থিতু হচ্ছিলেন। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেনি (২৯ রান)। মিড অফে ফিল্ডারের হাতে বল দিয়ে তিনি দৌড় দেন। এরপর রশিদ ও উইকেটকিপার ইকরাম আলিখিল মিলে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান অ্যাকারম্যানকে। ৭৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানো দলটি এরপর একশ পূর্ণ করার আগে পাঁচ ব্যাটারকে হারিয়ে বসে। মাঝে ব্যাটিংয়ের মূলস্তম্ভ ডাচ অধিনায়ক এডওয়ার্ডসও রানের খাতা খোলার আগে রানআউট। অপরপ্রান্তে তখনও লড়ছিলেন এঙ্গেলব্রেখ্ট।
শেষ পর্যন্ত ৮৬ বলে ৬টি চারের বাউন্ডারিতে ৫৮ করে তিনি রানআউট। এছাড়া তাদের আর কোনো ব্যাটারই উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেনি। ফলে ৪৬.৩ ওভারেই ১৭৯ রানে থামে ডাচদের ইনিংস। আফগানদের হয়ে ২৮ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন নবি। এছাড়া নুর আহমদ ৩১ রানে দুটি এবং মুজিব এক উইকেট নেন। ৩১ রানে উইকেটশূন্য ছিলেন রশিদ খান।
এএইচএস