রুবেলের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ভাঙলো জেমস অ্যান্ডারসনের প্রতিরোধ। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ থেকে বাদ। প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ। ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার এবং ধারাভাষ্যকার নাসের হোসেইন বিষয়টিকে জানান দিলেন এই শব্দে, ‘The Bangladesh Tigers have knocked the England Lions out of the World Cup!’ বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে টাইগার শব্দটার এমনই সখ্যতা। 

যদিও বাঘশুমারি অনুযায়ী, বাঘ বেশি ভারতে। এমনকি ভারতের ফুটবল দল নিজেদের পরিচয় দেয় ‘দ্য ব্লু টাইগার’ হিসেবে। তবে, প্রসঙ্গ যখন ক্রিকেট, তখন টাইগার শব্দটা শুধুই বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ। তবে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফর্ম দেখে ঠিক বলার উপায় নেই লাল-সবুজের জার্সিতে সত্যিকার অর্থেই বাঘের মন-মানসিকতা নিয়ে কেউ খেলে থাকেন। 

বিষণ্ণ সেনাপতি সাকিব আল হাসান 

সেই বিষয় আঁচ করেই হয়ত কলকাতার একাধিক গণমাধ্যম ইংলিশদের বিপক্ষে হারের পর বাংলাদেশকে বিড়াল হিসেবে খোঁচা দিয়ে সংবাদ উপস্থাপন করেছিল। তিক্ত হলেও এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অবস্থান যে সত্যিকার অর্থেই নাজুক, তাইই যেন প্রমাণ পেয়েছিল সেই খবরে। 

২০০০ সাল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের তৎকালীন সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী উন্মুক্ত করলেন দেশের ক্রিকেটের নতুন লোগো। যেখানে জাতীয় স্মৃতিসৌধের সঙ্গে আঁকা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখ। সেই থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য এক অংশ এই বাঘ। আর তারই আদলে কিনা বাংলাদেশের ক্রিকেটই পরিচিতি পেয়ে গেল টাইগার ক্রিকেট হিসেবে। 

বিসিবির নতুন লোগো উন্মোচন 

ঠিক কে এই লোগো করেছেন তা নিয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া মুশকিল। তবে জানা যায়, রিয়াজুল হায়দার নামের একজন ডিজাইনারের কীর্তি আজকের বিসিবি লোগো। যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে বাঘ। শ্রীলঙ্কায় ক্রিকেটারদের যেমন নামকরণ করা হয়েছে সিংহের নামে। তেমনি বাংলাদেশে করা হয়েছিল বাঘের নামে। নিজেদের সাহস আর শক্তির দিকটাই যেখানে প্রকাশ করা হয়।  

যদিও এবারের বিশ্বকাপে তেমন বাঘসুলভ কোন খেলাই উপহার দেওয়া হয়নি টাইগারদের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ বাদ দিলে বাকি সব ম্যাচেই ছিল হতাশা। রান উৎসবের বিশ্বকাপে দুবার দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড হয়েছে। হয়েছে সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড। তবে, বাংলাদেশ ৩০০ রান করতেই হিমশিম খেয়েছে বারবার। 

ভক্তদের এই চেহারাই বলে দেয় হতাশার গল্পটা

এমনকি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ স্কোরের তালিকাতে নেদারল্যান্ডসও আছে বাংলাদেশের উপরে। ডাচদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ২৬২। যেখানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ২৫৬। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় বাংলাদেশের সেরা তারকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তিনিও আছেন ১৪তম স্থানে। ব্যাটিং গড়ের দিক থেকেও সেরা দশে নেই কোন ব্যাটার। শান্ত, লিটন কিংবা সাকিবরা তো ব্যর্থ পুরো আসরেই। 

বোলিং নিয়েও নেই কোন আশার আলো। শেষ ৩ বছরে বল হাতে অজস্রবার নায়ক হয়েছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। তবে বিশ্বকাপে সেসবের কোন খোঁজ মিলল না। একেকটি উইকেট পেতে বাংলাদেশের বোলাররা রীতিমত সংগ্রাম করে গিয়েছেন। 

কোথায় হারিয়ে গেলেন দ্য ফিজ? 

নিয়মিত খেলেছেন এমন বোলারদের মধ্যে মিরাজের গড় সবচেয়ে ভাল। তবে তিনিও একেকটি উইকেট পেতে খরচ করেছেন ৩৪ রান। সাকিবকে খরচ করতে হয়েছে ৩৮.৮৫ রান। যে পেসারদের নিয়ে এত গর্ব, সেই পেসাররাই আছেন ৫০ এর বাইরে। সবচেয়ে বড় ভরসা মুস্তাফিজ আছেন ৬৬তম স্থানে। প্রতিটা উইকেটের জন্য খরচ করেছেন ৮০ এর বেশি রান।   

এমন হতশ্রী পারফর্ম্যান্সের পরেও অবশ্য বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে থাকবে টাইগার নামটা। আনমনে বারবার বলা হবে টাইগার ক্রিকেট। কিন্তু যে আবেগ আর ভালোবাসা নিয়ে ক্রিকেটারদের টাইগার ডাকা হয়, সেই আবেগের মর্যাদা থাকলো কই। বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখে ক্ষোভে নিজের গালে জুতা মেরেছেন এমন সমর্থকও দেখা গিয়েছে। সেই সমর্থকদের কাছে আবার বাঘ হতে পারবেন তো সাকিবরা? 

জেএ