দেশের ক্রিকেট ভক্তদের যেন সমীকরণের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের পর আর কোন সমীকরণেই আটকে থাকতে হচ্ছে না বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। বিশ্বকাপের সপ্তম রাউন্ডের প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের মাধ্যমে সবার আগে বাড়ি ফেরা নিশ্চিত হলো টাইগারদের। ৭ ম্যাচ শেষে পয়েন্ট মাত্র ২। তাই কাগজ-কলমেও বিদায়ই বলতে হচ্ছে বিশ্বকাপকে। 

কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ব্যাটে বলে কখনোই আধিপত্য বিস্তার করা হয়নি বাংলাদেশের। ব্যাট হাতে যেমন ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তেমনি ছিল একেবারেই নিরীহদর্শন বোলিং। একপেশে ম্যাচে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে বাবর আজমের দল। এই জয়ের পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের দৌড়ে এখনও টিকে রইলো পাকিস্তান। 

২০৫ রানের স্বল্প লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরু থেকেই দাপট দেখিয়েছেন দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক এবং ফখর জামান। রানখরায় ভুগতে থাকা ফখর যেন নতুন জীবন পেলেন আজকের এই ম্যাচ থেকে। শুরু থেকেই ছিলেন সাবলীল। আর ছন্দে থাকা শফিক নিয়মিত যন্ত্রণাই বাড়িয়েছেন বোলারদের। সাদামাটা বোলিংয়ে পার্থক্য গড়ার মত স্পেল ছিল না কারোরই। প্রথম দশ ওভারেই এসেছে ৫২ রান। 


শরীফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান কেউই পারেননি নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে। বাধ্য হয়ে বল ঘোরাতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকেও। তবে কাজের কাজ হয়নি। 

পাকিস্তানের প্রথম উইকেটের পতন ঘটে ২২তম ওভারে। এলবিডব্লিউতে আব্দুল্লাহ শফিককে ফেরান মেহেদি মিরাজ। তবে শফিক ততক্ষণে এবারের বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। মিরাজের বলে আউট হওয়ার আগে খেলেছেন ৬৮ রানের ইনিংস। ১২৮ রানে প্রথম উইকেটের পতন। 

বাবর আজম এসে খুব বেশি কিছু করতে পারেননি। ১৬ বলে ৯ করেই ফিরে গিয়েছেন সাজঘরে। এবারও উইকেট মিরাজের। ক্যাচটা নিয়েছেন তাওহীদ হৃদয়। আর সেঞ্চুরির দিকে ছুটতে থাকা ফখর জামান থেমেছেন ৮১ রানে। তাকেও ফিরিয়েছেন মিরাজই। বাউন্ডারি লাইনে রিয়াদের হাতে ক্যাচ দিয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হয় এই ওপেনারকে। 

এরপর ক্রিজে থাকা ইফতেখার আহমেদ আর মোহাম্মদ রিজওয়ান দেখেশুনেই ইনিংস শেষ করেছেন। এই ম্যাচের পর ৭ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে বাড়ি ফেরা নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের। আর ৬ পয়েন্ট নিয়ে এখনও সেমির আশা বাঁচিয়ে রেখেছে পাকিস্তান।

মঙ্গলবার কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে খেলতে নেমে শুরুতেই ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাট হাতে চিরায়ত দৃশ্যই যেন দেখা গেল আবার। এদিন আরও একবার ব্যর্থ টাইগার ওপেনাররা। আরও একটা হতাশার শুরু হয় বাংলাদেশের। স্কোরবোর্ডে ২৩ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বাড়ে চাপ। সেই চাপ সামলে মাহমুদউল্লাহ, লিটন ও সাকিবের ব্যাটে কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও বাংলাদেশের ইনিংস থামে সবকটি উইকেট হারিয়ে মাত্র ২০৪ রানে। দলের হয়ে এদিন ৭০ বলে ৫৪ রানের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এ ছাড়া লিটন (৪৫) ও সাকিব (৪৩) দুজনই ফিরেছেন পঞ্চাশের দোড়গোড়ায় গিয়ে।

আসরজুড়েই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল পাকিস্তানের বোলিং ইউনিট। আজ সুদে আসলে সব ঝাল তুললেন যেন শাহিন-রউফরা। তিনটি করে উইকেট শিকার করেছেন দুই পেসার শাহিন আফ্রিদি ও মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র। এ ছাড়া আরেক পেসার হারিস রউফও দুটি উইকেট পেয়েছেন। 

ইনিংসের পঞ্চম বলে তানজিদ তামিমকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন শাহিন আফ্রিদি। রিভিউ নিলেও কাজে আসেনি সেটি। টুর্নামেন্টজুড়ে ব্যর্থ জুনিয়র তামিম ফিরেছেন শূন্য রানে, বাংলাদেশও প্রথম উইকেট হারায় কোনো রান না তুলতেই। 

তামিমের পর ব্যাটিংয়ে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে শর্ট থার্ড ম্যান দিয়ে ইফতিখার আহমেদকে লেট কাটে চার মেরে ইতিবাচক বার্তাই দিয়েছিলেন। তবে শান্তর দৌড় বলতে যেন ওইটুকুই। তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে শাহিনকে ফ্লিক করেছেন শান্ত। ফরোয়ার্ড স্কয়ার লেগে ডাইভ দিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন উসামা মীর।

ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে এসেছিলেন হারিস রউফ। টুর্নামেন্টে ছন্দে না থাকা এই পেসারকে ভালোই খেলছিলেন ক্রিজে থাকা লিটন ও মুশফিক। ফুললেংথের দুটি বলে স্ট্রেইট ড্রাইভে দুটি চার মেরে শুরু করেন লিটন। এরপর পঞ্চম বলে স্ট্রাইক পেয়ে চার মারেন এদিন প্রমোশন পেয়ে চারে খেলতে নামা মুশফিকও। শেষ বলে গুড লেংথ ডেলিভারি মুশফিকের ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক রিজওয়ানের গ্লাভসে। ৮ বলে এক চারে ৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক। 

২৩ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ভালোভাবেই এগোতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ ও লিটন। ৮৯ বলে ৭৯ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটার। তবে ফিফটি থেকে আর মাত্র ৫ রান দূরে থাকতেই অবিশ্বাস্য একটা ভুলটা করে বসলেন। ইফতিখারের বলে চিপ করতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। লুফে নিতে ভুল করলেন না আগা সালমান।


লিটন ফিরলেও একপ্রান্ত আগলে রাখছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ব্যাটিং পজিশনে প্রমোশন দিয়ে আজ তাকে নামানো হয় পাঁচে। ৫৮ বলে ব্যক্তিগত পঞ্চাশ করেন। শেষমেশ শাহিনের বলে স্টাম্প ভাঙে তার। ৭০ বলে ৫৬ রান করেছেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা এই ব্যাটার। তার বিদায়ের পর যেন বাংলাদেশের সব আশাও শেষ হয়ে যায়। 

উইকেটে থিতু হলেও ইনিংস বড় করতে পারলেন না সাকিব। ৬৪ বলে ৪ চারের মারে ৪৩ রান করে হারিস রউফের শর্ট বলে তুলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে ধরা পড়লেন তিনি। শেখ মেহেদীর জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া হৃদয় টিকলেন মোটে তিন বল। শেষ দিকে মেহেদী মিরাজের ৩০ বলে ২৫ রানের ইনিংসে টেনেটুনে দুইশ পেরোয় বাংলাদেশ।

জেএ